রসায়ন ২য় পত্র

অধ্যায়-৫
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ রসায়ন ২য় পত্রের অধ্যায়-৫ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

# বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক গ্যাস সহজলভ্য। এ জন্য দেশের জ্বালানি খাত, বিদ্যুৎ ও শিল্পকারখানা গ্যাসভিত্তিক করা হয়। কিন্তু গ্যাসের পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কোনো ধারণা না থাকায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে দেশীয় কয়লাকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও বড় সমস্যা হলো কয়লার পরিমাণ সীমিত হওয়ায় শিল্পকারখানার মালিকেরা এতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বর্তমানে পারমাণবিক শক্তিকে ব্যবহার করে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকায় বিশেষজ্ঞরা পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহারে অতিমাত্রায় সতর্ক ও সংবেদনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রশ্ন:
ক. কোনটি Black diamond হিসেবে পরিচিত?
খ. বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
গ. উদ্দীপকের কোন জ্বালানিটি পরিবেশ দূষণের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর? কারণসহ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের জ্বালানি উৎসগুলো বাংলাদেশে ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধার মূল্যায়ন করো।
উত্তর: ক. Black diamond হিসেবে পরিচিত হলো কয়লা।
উত্তর: খ. সহজলভ্যতা, ক্যালরিক মান উচ্চ এবং দহনে তেমন ধোঁয়া উৎপন্ন না হওয়ার কারণে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের বহুমাত্রিক ব্যবহার দেখা যায়। নিচে প্রাকৃতিক গ্যাসের কয়েকটি ব্যবহার উল্লেখ করা হলো—
১) বিদ্যুৎ উৎপাদনে: প্রাকৃতিক গ্যাসের মোট ব্যয়ের ৩৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয়।
২) শিল্পক্ষেত্রে: উৎপাদনশীল খাতে ১৭ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
৩) সারকারখানায়: সার উৎপাদনে ১০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
৪) রান্নার কাজে: পাইপলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
৫) CNG হিসেবে: প্রায় ৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস CNG হিসেবে জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা হচ্ছে।
উত্তর: গ. উদ্দীপকে আলোচিত জ্বালানিগুলো হলো (ক) কয়লা (খ) প্রাকৃতিক গ্যাস (গ) পারমাণবিক শক্তি। উদ্দীপকে উল্লিখিত জ্বালানিগুলোর মধ্যে কয়লাই পরিবেশদূষণের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। কারণ, কয়লার সঙ্গে জৈব সালফার যৌগ, পাইরাইটস এবং সালফারের অক্সাইড (SO2 বা SO3) থাকে, যা বাতাসের সঙ্গে মিশে পরবর্তী সময়ে অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহূত হলে এগুলো বাতাসে ভাসমান ছাই থাকে। কয়লার ছাই হিসেবে পরিচিত যৌগ Al2O3 (20 ~ 35%), SiO2 (40 ~ 60%), Fe2O3 (5 ~ 25%), CaO (1 ~ 1.5%) এবং Mg (0.5 ~ 4%) থাকে। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাস যেহেতু কয়েকটি অ্যালকেনের মিশ্রণই থাকে, যা দহনে CO2 ও পানি সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, পারমাণবিক শক্তিকে সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে এর পরিবেশদূষণ হয় না।
উত্তর: ঘ: উদ্দীপকে উল্লিখিত জ্বালানিগুলো প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও পারমাণবিক শক্তি। নিচে এর তুলনামূলক আলোচনা করা হলো—
প্রাকৃতিক গ্যাস: উৎসের সহজলভ্যতা এবং পরিবহনের সুবিধা, ভেজালের পরিমাণ কম থাকার কারণে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসে প্রায় 96 ~ 99% মিথেন বিদ্যমান। এর মধ্যে সালফার যৌগ নেই। ফলে অ্যাসিড বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই, যার ফলে গৃহস্থালিতে রান্নার কাজে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে, CNG হিসেবে যানবাহনে এবং উৎপাদনশীল খাতে বিভিন্ন কারখানায় প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহূত হচ্ছে।
কয়লা: বাংলাদেশ কয়লায় মোটামুটি সমৃদ্ধ। কয়লা প্রধানত কার্বনের যৌগ এবং অন্যান্য কিছু উপাদান থাকে, যেমন সালফার থাকে কয়লায়। সালফার থাকায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করায় কিছু সমস্যা দেখা যায়। অ্যাসিডবৃষ্টির জন্য দায়ী এই সালফার। বিশেষভাবে পরিবেশদূষক হওয়ায় কয়লা জ্বালানি হিসেবে ভালো নয়। এ ছাড়া উত্তোলন-প্রক্রিয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট কৌশল না থাকায় কয়লানির্ভর জ্বালানি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তবে অন্যান্য উন্নত দেশের মতো এর পরিবেশবান্ধব ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে উন্মোচিত হতে পারে ব্যাপক সম্ভাবনাময় একটি জ্বালানি।
পারমাণবিক শক্তি: পৃথিবীর উন্নত-উন্নয়নশীল দেশগুলো এই পারমাণবিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল। আমাদের দেশে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের ওপর গবেষণা-পর্যালোচনা কম হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ না থাকায় পারমাণবিক শক্তিকে ব্যবহার করা বর্তমানে কষ্টসাধ্য। পারমাণবিক শক্তির কাঁচামাল ইউরেনিয়াম আমাদের দেশে নেই। এ জন্য অবশ্যই অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হবে। এর রক্ষণাবেক্ষণ, স্থাপনা ব্যয় অন্যান্য সেক্টর থেকে অনেক বেশি, বিশেষ করে অব্যবস্থাপনার কারণে তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তবে তুলনামূলকভাবে পরিবেশের খুব একটা ক্ষতি না করায় এটি পৃথিবীর বহু দেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হচ্ছে। অর্থাৎ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গবেষণা, পর্যালোচনা দেশি-বিদেশি দক্ষ পারমাণবিক চুল্লি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কার্যকর করলে এটি অত্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী একটি ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশে বিবেচিত হতে পারে।

শিক্ষক
খুলনা জিলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খুলনা