
রেজাল্ট তো হয়েই গেল, এবার...। এবার কী, তা আর বলছে না কেউ। না বললেও অবশ্য কারও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। সবাই সবার চেহারা দেখেই পড়ে নিতে পারছে ভেতরের সংবাদ। আসলে উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পর কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মূল লড়াই যে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া, তা কি আর ব্যবহারিক পরীক্ষার মতো হাতে-কলমে বোঝাতে হয়? সুতরাং সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাস করা লাখ লাখ শিক্ষার্থীর লক্ষ্য এখন একটাই—নিজের স্বপ্নের বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান করে নেওয়া, তা মোটামুটি সবারই জানা।
এই জানা কথাই জোরেশোরে জানা গেল গতকাল আরও একবার। তখন বিকেলের সূর্য মাথায় নিয়ে সবে পা রেখেছি ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে। প্রধান ফটকের সামনেই দেখা হলো হিমু রায় ও নাহিয়ান আজিজের সঙ্গে। হিমু বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আর নাহিয়ান পরীক্ষা দিয়েছেন বাণিজ্য বিভাগ থেকে। একজনের লক্ষ্য প্রকৌশলী হওয়া আর আরেকজনের লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে পড়া। ‘রেজাল্টের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্নপূরণের পালা।’ দুজনের কণ্ঠে একই আত্মবিশ্বাস।
একই রকম আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নের মধ্যে বাস করছেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ থেকে পরীক্ষা দেওয়া আন্না খন্দকার, আদিবা ফেরদৌস, মিতুল মাকসানলিনা ও খাদিজা আক্তার। এই চার বন্ধু একই বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিলেও প্রত্যেকের লক্ষ্য এখন আলাদা আলাদা। আন্না প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের, আদিবা মেডিকেলের, মিতুল বুয়েটের আর খাদিজা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়ার জন্য।
আবার অনেকেই আছেন যাঁদের নিজ নিজ বিভাগ আর ভালো লাগছে না। তাঁরা বিভাগ পরিবর্তন করে ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই দলে আছেন সামা নূর। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করলেও এখন তাঁর উদ্দেশ্য ও বিধেয় শুধুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিট। ‘আমি সব সময়ই লক্ষ্য স্থির রেখে পথ চলি। সুতরাং এখন যারা ভাবছে আমি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের দেখাতে চাই, আমার সিদ্ধান্তই সঠিক।’ সামা প্রহর গুনছেন তাঁর সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করার।
ওদিকে মতিঝিল আইডিয়াল কলেজ থেকে পরীক্ষা দেওয়া বৃষ্টি, মিম, অন্বিতা ও নাদিরা চান ডাক্তার হতে। তাই পরীক্ষার পরপরই শুরু করেছেন মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়ালেখা। ‘রেজাল্ট হয়ে গেল। কদিন বাদেই শুরু হবে ভর্তি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় ভালো করতে না পারলে এত ভালো রেজাল্ট কোনো কাজে আসবে না। তাই যেকোনো মূল্যে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতেই হবে।’ বলছিলেন এই দলের বৃষ্টি।
স্বপ্নপূরণ প্রচেষ্টার এই মিছিলে আছেন তানিয়া সুলতানা ও নির্জনা ইসলাম। ভিকারুননিসা নুন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে দুজনেই করেছেন ভালো ফল। ‘একটি ভালো ফল সব সময়ই প্রত্যাশা বাড়ায়। আমার প্রত্যাশা এখন একটাই—প্রকৌশল বিষয়ে পড়া।’ তানিয়ার কণ্ঠে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রতিজ্ঞার মিশেল।
এই শিক্ষার্থীদের সামনে এখন সবচেয়ে কঠিন পথ। তাঁরা সেটা জানেনও। তাই প্রত্যাশার সঙ্গে প্রতিজ্ঞার মিশেল ঘটাতে পিছপা হচ্ছেন না কেউই। যেমনটা জানা গেল বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজ থেকে পাস করা রামীম আল রেজওয়ান, বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের ইশরাত জাহান কিংবা চট্টগ্রাম কলেজের তারানা রহমান ও সাফিয়া আলমের কাছ থেকে। মুঠোফোনে প্রত্যেকেই জানালেন, স্বপ্ন পূরণ করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। রামীম তো বলেই বসলেন, ‘আসল পরীক্ষা তো সামনে। সেটা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা। ওই পরীক্ষার রেজাল্টের পর আজকের রেজাল্ট উদ্যাপন করব। তার আগে অন্য কিছু নয়।’
বাপরে বাপ! মন্ত্রের সাধন আর কাকে বলে! আপাতত এই স্বাপ্নিকদের জন্য শুভকামনা।