
তোলপাড়
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা ১ম পত্রের ‘তোলপাড়’ গল্প থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
চায়ের দোকানে বসে চা পান করছেন জামাল সাহেব। তাঁকে ঘিরে ছোট্ট একটা জটলা। তিনি চা পান করার ফাঁকে ফাঁকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলছিলেন। তিনি ২৫ মার্চ কালরাত সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসক চক্র বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরীহ বাঙালিদের ওপর। নির্বিচারে সংঘটিত হলো ইতিহাসের ভয়াবহ নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
প্রশ্ন:
ক. সাবুর গ্রামের নাম কী?
খ. সবাই শহর ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছিল কেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘তোলপাড়’ গল্পের কোথায় মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘নির্বিচারে সংঘটিত হলো ইতিহাসের ভয়াবহ নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ড’— তোলপাড় গল্পের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক. সাবুর গ্রামের নাম গাবতলী।
উত্তর: খ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্মমভাবে হত্যা করে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ, শিশু, মহিলা, যুবক-যুবতীদের। তাদের এই নির্মম অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ দিগিবদিক ছুটতে থাকে। সারা দেশেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায়। মানুষজন নিরুপায় হয়ে শহর ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাই শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে যাত্রা করে হাজার হাজার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সব শ্রেণির মানুষ।
উত্তর: গ. উদ্দীপক ও ‘তোলপাড়’ রচনায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উদ্দীপক ও তোলপাড় গল্পে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তোলপাড় রচনাটি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের পটভূমি নিয়ে রচিত। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত বাঙালিরা শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে যাত্রা করে। উদ্বাস্তু এই পথিকদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মানুষ কাতর হয়ে পড়ে। অনেকের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এমনকি পথিমধ্যে কারও কারও মৃত্যু হয়।
উদ্দীপকে জামাল সাহেব চা পান করতে করতে গ্রামের মানুষকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতের ভয়াবহতার কথা বলেছেন। উভয় ক্ষেত্রেই সেই রাতের গা শিউরে ওঠা ভয়াবহ অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে, যা নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙালিদের অসহায়ভাবে সহ্য করতে হয়েছে অথবা বরণ করে নিতে হয়েছে মৃত্যুকে।
উত্তর: ঘ. ‘তোলপাড়’ গল্পটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমানের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গল্প। এখানে লেখক মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ২৫ মার্চের কালরাতের ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়েছেন। পাকিস্তানি এ অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। এই অপারেশনের মাধ্যমে তারা ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করার খেলায় মেতে ওঠে। বুদ্ধিজীবী, গণ্যমান্য ব্যক্তি, ছাত্র, দিনমজুর, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশুসহ সবাইকে হত্যা করা শুরু করে। বাড়িঘর, অফিস-আদালত সবকিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে শহর থেকে গ্রামের দিকে ছুটতে থাকে। গ্রামের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, কাদা—সবকিছুকে উপেক্ষা করে মানুষ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে হেঁটেই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দীর্ঘ হাঁটার ক্লান্তি মানুষকে অসহায় করে তোলে। এর মধ্যে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ে সবাই। পাকিস্তানি সেনারা বাঙালির ওপর নিষ্ঠুর হায়েনার মতো আচরণ করেছে। তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও অমানবিক নির্যাতন করে পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত মানবতার কাছে তাদের হার মানতে হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের হাত থেকে ছোট-বড়, বৃদ্ধ-শিশু কেউ রক্ষা পায়নি। তাদের অত্যাচার, অবিচার ছিল মানবজাতির জন্য চরম লজ্জার।
সহকারী শিক্ষক, ন্যাশনাল ব্যাংক পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা