সবখানে প্রথম স্নিগ্ধ

বুয়েটের শিক্ষার্থী মির্জা তাওসীফ শরীফ
বুয়েটের শিক্ষার্থী মির্জা তাওসীফ শরীফ

যেখানেই অংশ নেন সেখানেই ‘প্রথম’ হওয়াটা যেন অভ্যাসে পরিণত করেছেন মির্জা তাওসীফ শরীফ। পরিবার ও বন্ধুমহলে তিনি অবশ্য স্নিগ্ধ বলে পরিচিত। গণিতে, গানে, পড়াশোনাসহ সব জায়গায় সেরা স্থানটি অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে সবার চেয়ে অনেক আলাদা করে চিনিয়েছেন ময়মনসিংহ শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা তাওসীফ। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন তিনি।
তাওসীফ যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই যেন সোনা ফলেছে। পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বোর্ডে তৃতীয় স্থান অর্জনের মাধ্যমে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ, অষ্টম শ্রেণীতে বোর্ডে দশম হয়ে আবারও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ এবং সব শেষে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সব বিষয়ে এ+ অর্জন। এরপর তাওসীফ নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সব বিষয়ে এ+ অর্জনের কৃতিত্ব অটুট রাখেন।
শুধু একাডেমিক পর্যায়ের অর্জন দিয়েই তাওসীফের প্রতিভার ভান্ডার শেষ হওয়ার নয়। ক্লাসের সিলেবাসের গণিত করেই শেষ নয়, যুক্তি ও কৌশলের এই বিষয়টি নিয়ে প্রবল আগ্রহ থেকেই ২০০৫ সালে গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম অংশ নেন তাওসীফ। বাজিমাত করে দেন প্রথমবারেই, প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হন সেবার। এরপর ২০০৬-১০ পর্যন্ত গণিত অলিম্পিয়াডে প্রতিবারই অংশ নিয়ে আঞ্চলিক অথবা জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের প্রতি প্রত্যাশার পারদটা উঠিয়ে নিয়েছেন আরও উঁচুতে।
তাওসীফের প্রতিভার ঝলক সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও আলো ছড়িয়েছে। সেখানেই আবারও প্রথম স্থান দখল করে নিজের প্রথম হওয়ার রেকর্ডকে আরও ওপরে নিয়ে গিয়েছেন। জাতীয় শিশু-কিশোর পুরস্কার প্রতিযোগিতা, নতুন কুঁড়ি, শাপলা কুঁড়ি, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের মতো জাতীয় আসরগুলোতে ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পল্লিগীতি, দেশাত্মবোধক গান, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসংগীত এমনকি আবৃত্তি ও উপস্থিত বক্তৃতায় অংশ নিয়ে প্রতিবারই পেয়েছেন পুরস্কার।
এমনকি ২০১০ সালে জাতীয় শিশু-কিশোর পুরস্কার প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেন তিনি। রিয়েলিটি শো মার্কস অলরাউন্ডারের চারটি ইভেন্টে প্রথম হয়ে ঢাকা বিভাগে প্রথম হন তাওসীফ।
এমনকি মুক্ত ঝরানো হাতের লেখার জন্য ২০১২ সালে ঢাকা মহানগরের মধ্যে প্রথম হওয়ার গৌরবও আছে তাঁর।
এত সব অর্জনের মধ্যে খেলাধুলাটাই বা বাদ যাবে কেন? ক্যারম, দাবা, টেবিল টেনিসে জেলা পর্যায়ে পুরস্কার, টেবিল টেনিসে টানা তিন বছর ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ও নটর ডেম কলেজে চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেছেন তাওসীফ।
শিক্ষক বাবা ইসকান্দার মির্জা ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক মা তাহমিনা বেগমের আদর্শের মানুষ তিন ভাইয়ের সবাই। বড় ভাই মির্জা সাদিদুল ইকাব প্রকৌশলী। আর তাওসীফের যমজ ভাই গান ও গণিতের আরেক বিস্ময় মির্জা তানজীম শরীফ মুগ্ধ। তাওসীফের ইচ্ছা, মুগ্ধ-স্নিগ্ধ জুটির মাধ্যমে গানের জগতে ভালো কিছু গান উপহার দেওয়ার।