সাহস সমাচার

সাহস মোস্তাফিজ
সাহস মোস্তাফিজ

তখন তাঁর বয়স পাঁচ বছর ১০ মাস। এত্তটুকুন একটা শিশু রাতভর ভাওয়াইয়া গান গেয়ে মাতিয়ে রেখেছিল দর্শকদের। ‘সেটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম একক অনুষ্ঠান’, কথা শুরু করলেন সাহস। বলা ভালো, স্মৃতিকথা আওড়াতে লাগলেন। তবে স্মৃতিকথা বলতে গিয়ে স্মৃতি হাতড়াতে হলো না তাঁকে। কেননা এসব স্মৃতি তাঁর মনে কড়া রোদের মতোই উজ্জ্বল। আজও ম্লান হয়নি এতটুকু। সাহস তাই গড়গড় করে বলে চলেন, ‘তখন মা-বাবার সঙ্গে রংপুরে থাকি। বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ও মা সালমা মোস্তাফিজ ভাওয়াইয়া গান করেন। তাঁদের কাছেই আমার গানের হাতেখড়ি। মূলত বাবার আয়োজনেই সেই অত্তটুকুন বয়সে প্রথম দর্শকদের সামনে আমার আত্মপ্রকাশ।’
তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সাহসকে। দুই বছর পর আবারও সাহসের একক ভাওয়াইয়াসন্ধ্যা। এবার ঢাকায়। ‘বাবা বদলি হয়ে রংপুর থেকে ঢাকা বেতারে এলেন। স্বাভাবিকভাবে বাবার সঙ্গে আমরাও চলে এলাম ঢাকায়। তারপর বাবা আবার আয়োজন করলেন আমার একক ভাওয়াইয়াসন্ধ্যার।’ বলছিলেন সাহস।
এই ভাওয়াইয়াসন্ধ্যায় সাহসের জাদুকরি কণ্ঠে মুগ্ধ হলেন দেশের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। পত্রপত্রিকায় খবর আর ছবি ছাপা হলো সাহসের। দেশজুড়ে পড়ে গেল ধন্যি ধন্যি। মাত্র আট বছর বয়সেই সাহস হয়ে গেলেন ভাওয়াইয়া তারকা।
এরপর সাহসের ভাওয়াইয়া গান নিয়ে বের হলো একক অ্যালবাম। ২০০১ সালের কথা সেটা। ২০০৩ সালে বের হলো অবারও একটি।
সাহসের পথচলা এগিয়ে চলল দুর্দান্ত গতিতে। ছোট্ট সাহস বাগিয়ে নিতে থাকলেন একের পর এক পুরস্কার। শিশু একাডেমী স্বর্ণপদক, এটিএন শাপলা শালুক স্বর্ণপদক প্রতিয়োগিতায় মোট তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার, নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় ভিন্ন ভিন্ন তিন বিভাগে সেরা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার। গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মানেই সাহসের জন্য পুরস্কার অবধারিত।
সাহস ২০০১ সালে গেলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সেখানেও তাঁর জাদুকরি কণ্ঠে মুগ্ধ হলো পশ্চিমবঙ্গের গানপিয়াসী মানুষেরা। সাহসকে দেওয়া হলো সেরা ভাওয়াইয়া শিল্পীর পদক।
সেই ছোট্ট সাহস এখন অনেক বড়। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। বিভাগের যেকোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সাহসের অংশগ্রহণ তাই অাবশ্যিক।
সাহস অবসরে গান লেখেন। বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো রয়েছে তাঁর শখের তালিকায়। এ ছাড়া সময় পেলেই বসে যান ভাওয়াইয়া গান নিয়ে নিরীক্ষা করতে। ‘স্বপ্ন দেখি ভাওয়াইয়া গান একদিন ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। সব ভাষার সব দেশের মানুষ শুনছে ভাওয়াইয়া গান—এমন স্বপ্ন দেখতে কার না ভালো লাগে বলুন?’ প্রশ্ন ছুড়ে দেন সাহস।
সাহসের স্বপ্নকে মোটেও দুঃসাহস বলে মনে হয় না আমাদের। আমরাও চাই ভাওয়াইয়া গান সারা বিশ্বে পরিচিতি পাক এবং পরিচিতি পাক সাহসের হাত ধরেই।