সৃজনশীল প্রশ্ন

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় 
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

# শিপন সদরঘাটে রাস্তায় রাস্তায় কাগজ কুড়িয়ে বেড়ায়। এতে তার যে সামান্য উপার্জন হয় এ দিয়ে কোনো রকমে তার তিন বেলার খাবার জোগাড় হয়। আত্মীয়স্বজন বলতে এ দুনিয়াতে তার কেউ নেই। সে জানে না তার নিজের পরিচয়। এসব ভেবে সে যখন দুঃখ-কষ্ট অনুভর করত তখনি ধূমপান করত। আস্তে আস্তে সে গাঁজা, ফেনসিডিল, মদ, জুয়া ইত্যাদিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। এসবের জন্য টাকা জোগাড় করতে গিয়ে সে এখন সদরঘাটে ছিনতাই করে।

ক. মাদক শব্দটির উত্পত্তি কোন শব্দ থেকে?
খ. মাদকাসক্তি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে শিপনের কর্মকাণ্ড আমাদের সামাজিক জীবনে কোন ধরনের প্রভাব ফেলবে বুঝিয়ে বলো।
ঘ. উদ্দীপকে শিপনের বর্তমান অবস্থার কারণ কী? তার বর্তমান প্রবণতা হ্রাস করতে কোন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক. মাদক শব্দটির উত্পত্তি হয়েছে মদ শব্দ থেকে।
উত্তর: খ. মাদকাসক্তি বলতে বোঝায় যে দ্রব্য সেবনের ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং ওই দ্রব্যের প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। এ জাতীয় দ্রব্যকে বলা হয় মাদকদ্রব্য আর এমন মাদকদ্রব্যের প্রতি কোন ব্যক্তির আসক্তিকে মাদকাসক্তি বলে।
উত্তর: গ. উদ্দীপকে শিপনের কর্মকাণ্ড আমাদের সামাজিক জীবনে নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। শিপন গাঁজা, ফেনসিডিল, মদ ইত্যাদিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে । এর জন্য অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে সে ছিনতাই করছে। এ কাজ করতে গিয়ে তার দ্বারা যেকোনো সময় হত্যার মতো জঘন্য কাজ ঘটে যেতে পারে। তা ছাড়া ছিনতাই করার সময় ছিনতাইয়ের শিকার নারীদের প্রতি অশালীন আচরণ, কটূক্তি তার দ্বারা হতে পারে। এমনকি তার দ্বারা নারী পাচার, শিশুপাচার, নারী নির্যাতন সংঘটিত হতে পারে। কারণ, সে টাকার জন্য সবই করতে পারে। মাদকের নেশা তার স্বাভাবিক বিচার-বিবেচনার শক্তিকে কেড়ে নিয়েছে। সুতরাং, এ কথা বলা যায় যে শিপনের কর্মকাণ্ড আমাদের সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যা সমাজ জীবনে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে।
উত্তর: ঘ. উদ্দীপকে শিপনের বর্তমান অবস্থার মূল কারণ হলো যথাযথ পরিচর্যার অভাব। পথ শিশু হিসেবে তার জীবনের শুরু। শত বাধা-বিপত্তিকে সাথি করে তার জীবন চলা। অনাদর-অবহেলা আর মানুষের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা নিয়ে তার জীবন। হতাশা আর অভাববোধ তার স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। ফলে সে সঙ্গী-সাথি আর নোংরা পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেছে। ছিনতাই, মাদক সেবন, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। শিপনের জন্য যদি সুস্থ মানসিক বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় তবে তাকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে। আমাদের দেশে পথ শিশুদের নিয়ে অনেক বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। তাদের অনবদ্য প্রচেষ্টার ফলে শিপনের মতো কিশোর অপরাধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। শিপনের জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে সে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনে আগ্রহী হবে। বিদ্যালয়ের পরিবেশ তাকে অপরাধ থেকে দূরে রাখবে।
শিপনের মানসিক বিকাশের জন্য যদি টেলিভিশন, বিশুদ্ধ আনন্দদায়ক ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তার
বর্তমান মানসিকতার পরিবর্তন হবে। এ ছাড়া পাঠাগার, ব্যায়ামাগার, খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যেতে পারে।