২০১৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার বিশেষ প্রস্তুতি-৩৫

অধ্যায়-১ ও ২ 
প্রিয় পরিক্ষার্থী, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের অর্থনীতি ১ম পত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ওপর আলোচনা করব।

প্রশ্ন: সুযোগ ব্যয় কাকে বলে?
উত্তর: চাহিদার তুলনায় উৎপাদনের উপাদানের জোগান সীমাবদ্ধ বলে উৎপাদনের কোনো একটি ক্ষেত্রে কিছু উপাদান ব্যবহার করা হলে উৎপাদনের অন্যান্য ক্ষেত্রে ওই উপাদান ব্যবহার করার সুযোগ থাকে না। একটি বিশেষ ক্ষেত্রে উৎপাদনের উপাদান ব্যবহারের অর্থই হলো অন্যান্য বিকল্প ক্ষেত্রকে উপাদানসমূহের ব্যবহার থেকে বিরত রাখা। এটাই সুযোগ ব্যয়। উৎপাদনের উপাদানসমূহ অন্যান্য বিকল্প ক্ষেত্রে নিয়োজিত হয়ে যে অর্থমূল্য লাভ করতে পারে, কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রে নিয়োগ করেও উপাদানগুলোকে সেই পরিমাণ মূল্যই দিতে হয়। উপাদানসমূহের বিকল্প ব্যবহারের জন্য যে মূল্য দিতে হতে পারে, তাকেই সুযোগ ব্যয় বলা হয়। অর্থাৎ উপাদানগুলোকে কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে নিয়োজিত রাখার দামই হচ্ছে সুযোগ ব্যয়। যেমন—ধরা যাক, একটি জমিতে ২০ কুইন্টাল আলু এবং ৫০ কুইন্টাল ধান উৎপাদন করা যায়। এখন এই জমিতে আলু উৎপাদন করা হলে ২০ কুইন্টাল আলুই পাওয়া যাবে কিন্তু ৫০ কুইন্টাল ধান পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ ৫০ কুইন্টাল ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবে। এ ক্ষেত্রে ২০ কুইন্টাল আলুর সুযোগ ব্যয় হলো ৫০ কুইন্টাল ধান।
প্রশ্ন: সমাজের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা কয়টি ও কী কী?
উত্তর: অধ্যাপক পল এ. স্যামুয়েলসনের মতে, সমাজের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা তিনটি। যেমন- ১.কী উৎপাদন করা হবে? ২.কীভাবে উৎপাদন করা হবে? ৩.কার জন্য উৎপাদন করা হবে?
প্রশ্ন: সামষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে?
উত্তর: সামষ্টিক অর্থনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Macro Economics. এই Macro শব্দের অর্থ হলো বড় বা বৃহৎ। গ্রিক শব্দ Makro থেকে Makros শব্দের উৎপত্তি। যে অর্থনীতিতে কোনো দেশের সামগ্রিক অর্থব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলে। মোট উৎপাদন, জাতীয় উৎপাদন, মোট চাহিদা, মোট জোগান, মোট নিয়োগ, সুদের হার, মজুরির হার প্রভৃতি সামষ্টিক অর্থনীতিতে আলোচিত হয়। জেমস এম হেন্ডারসন ও রিচার্ড ই কোয়ান্টের ভাষায়, ‘সামষ্টিক অর্থনীতি হলো বৃহৎ সমষ্টিসমূহ, যেমন মোট নিয়োগ, জাতীয় আয় ইত্যাদির পর্যালোচনা।’
প্রশ্ন: উন্নত দেশ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যেসব দেশ আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল ও উন্নত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে মাথাপিছু প্রকৃত আয়ের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ঘটিয়ে উচ্চ মানের জীবনযাত্রা জনগণের জন্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে, সেসব দেশকে বোঝায়। এসব দেশে জাতীয় আয় বেশি বলে মাথাপিছু আয়ও বেশি। আবার জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন হওয়ার ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মানও উঁচু। আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল উন্নত দেশে ব্যবহূত হয় বলে উৎপাদনের পরিমাণ খুব বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়াও উন্নত দেশসমূহে জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার বিলাসদ্রব্যও উৎপাদিত হয়। এসব দেশ মূলত শিল্পপ্রধান দেশ। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব ক্ষেত্রে উন্নত দেশ যথেষ্ট উন্নত। মোট কথা, উন্নত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমন যে জনগণ জীবনযাত্রার মৌলিক ও অন্য বিলাসদ্রব্যসমূহ উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশল ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করার মতো সব দ্রব্য পর্যাপ্ত পরিমাণে লাভ করতে পারে।
প্রশ্ন: প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: অর্থনৈতিক ‘প্রবৃদ্ধি’ ও ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ ধারণা দুটি প্রায় একই অর্থে ব্যবহূত হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ ধারণা দুটির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। কোনো কোনো অর্থনীতিবিদের ধারণা, দুটি একই অর্থে ব্যবহার করলেও সুমপিটার ও মিসেস উরশুলা হিকস প্রমুখ অর্থনীতিবিদ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। তাঁদের মতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা। পক্ষান্তরে প্রবৃদ্ধি উন্নত দেশের সমস্যা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলতে বোঝায় আর্থসামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন ছাড়াই দেশের প্রকৃত জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি এবং তার ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মানের বৃদ্ধিকে। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে বোঝায় দেশের প্রকৃত জাতীয় আয় ও প্রকৃত মাথাপিছু আয়ের কাঠামোগত পরিবর্তনকে। এ. ম্যাডিসন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন এভাবে: ‘ধনী দেশের আয় স্তরের বৃদ্ধিকে সাধারণত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলা হয় এবং দরিদ্র দেশে এটাকে বলা হয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন।’

প্রভাষক. সিলেট ক্যাডেট কলেজ, সিলেট

পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল