অধ্যায়-৪ জিনতত্ত্ব
শিক্ষার্থীরা, আজ তোমাদের জন্য রয়েছে জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রের ৪ নম্বর অধ্যায় থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর।
# একজন মূক বধির পুরুষের সঙ্গে একজন মূক বধির নারীর বিয়ে হলো। তাঁদের সন্তানেরা সবাই বাক্শ্রবণক্ষম হলো। পরবর্তী সময়ে বাক্শ্রমক্ষম সন্তানদের বিয়ে হলো। কিন্তু তাঁদের সন্তানদের কেউ কেউ বাক্শ্রবণক্ষম আবার কেউ কেউ মূক বধির হলো।
প্রশ্ন: ক. সেক্স ক্রোমোসোম কাকে বলে?
প্রশ্ন: খ. প্রকট বৈশিষ্ট্য বলতে কী বোঝায়?
প্রশ্ন: গ. উল্লিখিত ঘটনাটির আলোকে দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিস ব্যাখ্যা করো।
প্রশ্ন: ঘ. ঘটনাটি মেন্ডেলের সূত্রের ব্যতিক্রম—বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক. যে ক্রোমোসোমের মাধ্যমে জীবের লিঙ্গ নির্ধারিত হয়, তাকে সেক্স ক্রোমোসোম বলে।
উত্তর: খ. একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হোমোজাইগাস জীবে (TT এবং Tt) সংকরায়ণ ঘটালে F1 বংশে সৃষ্ট হেটারোজাইগাস জীবে যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়, তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন: F1 জনুর মটরগাছে লম্বা ও খাটো উভয় ধরনের লক্ষণের জন্য একটি করে জিন থাকলেও (Tt) শুধু লম্বা বৈশিষ্ট্যই প্রকাশিত হয়। অতএব মটরগাছের লম্বা বৈশিষ্ট্যই প্রকট।
উত্তর: গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটি দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিসের উদাহরণ। দুটি ভিন্ন লোকাসে অবস্থিত দুটি প্রচ্ছন্ন অ্যালিল যখন পরস্পরের প্রকট অ্যালিলকে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাধা দেয়, তখন তাকে দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিস বলে। নিচে এর জিনতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
মনে করি, d ও e দুটি প্রচ্ছন্ন জিন। অতএব ddEE ও DDee জিনোটাইপধারী ব্যক্তি মূক বধির হবে। এ ক্ষেত্রে এপিস্ট্যাটিক প্রচ্ছন্ন জিন d ও e হোমোজাইগাস অবস্থায় থাকায় প্রকট হোমোজাইগাস জিন EE ও DD বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাধা পায়। তাই মূক বধিরতা প্রকাশ পায়।
উপরিউক্ত জিনোটাইপধারী একজন মূক বধির পুরুষের (DDee) সঙ্গে একজন মূক বধির নারীর (ddEE) বিয়ে হলে তাঁদের সব সন্তান স্বাভাবিক বাক্শ্রবণক্ষম হবে। ওই সন্তানদের জিনোটাইপের অনুরূপ জিনোটাইপধারী পুরুষ ও নারীর বিয়ে হলে তাঁদের সৃষ্ট পরবর্তী বংশধরে স্বাভাবিক বাক্শ্রবণক্ষম ও মূক বধির সন্তান ৯: ৭ অনুপাতে প্রকাশ পাবে। নিচে বর্ণিত ছকের মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
F2 জনুর ফিনোটাইপিক অনুপাত:
স্বাভাবিক বাক্শ্রবণক্ষম: মূক বধির = ৯: ৭
উত্তর: ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটি দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিসের উদাহরণ। এ ক্ষেত্রে শুধু হোমোজাইগাস প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যই প্রকাশিত হয়। যেহেতু এখানে একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়, তাই মনোহাইব্রিড ক্রসের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এ ক্ষেত্রে পৃথক্করণ সূত্রকে বিবেচনায় আনলে F2 জনুতে ফিনোটাইপিক অনুপাত ৩: ১ হয়। কিন্তু দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিসের ক্ষেত্রে বাক্শ্রবণক্ষম ও মূক বধিরের অনুপাত ৯: ৭ পাওয়া যায়। সুতরাং ঘটনাটি মেন্ডেলের প্রথম সূত্র (পৃথক্করণ সূত্র) থেকে ব্যতিক্রম। অন্যদিকে, বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশে যেহেতু দুটি লোকাসের সম্পর্ক রয়েছে, সেহেতু এটিকে দ্বিসংকর বা ডাইহাইব্রিড ক্রসের সঙ্গে তুলনা করাটাই অধিক যুক্তিসংগত। এর ফলাফল মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রের (স্বাধীনভাবে সঞ্চারণ সূত্র) অনুরূপ হওয়ার কথা। মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রে F2 জনুতে ফিনোটাইপিক অনুপাত ৯: ৩: ৩: ১ পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে চার ধরনের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যধারী বংশধর পাওয়া যায়। কিন্তু দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিসের F2 জনুতে দুই ধরনের বৈশিষ্ট্যধারী বংশধর পাওয়া যায়, যাদের ফিনোটাইপিক অনুপাত ৯: ৭ হয়। অর্থাৎ ঘটনাটি মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রকে অনুসরণ করে না। সুতরাং উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটি মেন্ডেলের সূত্রের ব্যতিক্রম।
প্রভাষক, রূপনগর মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা