'জেগে দেখি স্বপ্নে যা দেখেছি সবই বাস্তব'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

সমস্যা:
আমার বয়স ১৬ বছর। বাবা-মা লেখাপড়ার জন্য খুব চাপ দেয়। আজকাল সব কাজকর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। সবকিছু অসহ্য মনে হয়। খুব সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। কথাবার্তা অগোছালো ও কাজকর্মে পাগলামোর প্রকাশ পায়।
নীলা, শনির আখড়া, ঢাকা
পরামর্শ:
মনে হচ্ছে, তুমি বিষণ্নতায় ভুগছ। তুমি যে অগোছালো আচরণ করছ সেটি কি সবাই বলছে? নাকি তুমি নিজেই সেটি ভাবছ? যদি এটি শুধু তোমার নিজের ভাবনা হয়, তাহলে বলব তুমি খুবই সচেতন একজন মানুষ। দিনের কোন সময় তুমি বিরক্ত বোধ করছ, সেটা মাথায় রেখে কোনো একটি সময় বসে ঘটনাটির বিবরণ এবং ঘটনাটা নিয়ে তোমার ভাবনা লিখে ফেলবে। তুমি ভাববে ‘ওই মানুষটির আচরণ আমার মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করেছে ঠিকই, তবে এই অনুভূতিটির তীব্রতা কমিয়ে রাখার ক্ষমতাও আমি রাখি।’ এভাবে ধীরে ধীরে নিজের চিন্তায় পরিবর্তন আনতে পারলে তুমি কিছুটা স্বস্তি অনুভব করবে। যদি তাতে উপকার না হয়, তোমাকে কোনো মনোবিজ্ঞানীর কাছে যেতে হবে।
সমস্যা:
বহু আগে একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম আমার এক মামা খুব অসুস্থ। রাতে ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে কিছুক্ষণ রাখার পর উনি মারা যান।
বাড়িতে আনার পথে আমাদের বাড়ির সামনে অ্যাম্বুলেন্স হর্ন দেয় এবং আমি তখন জেগে যাই। জেগে দেখি স্বপ্নে যা দেখেছি সবই বাস্তব। মামার অ্যাম্বুলেন্স আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। সবাই দেখতে গেছে কিন্তু আমি ভয়ে যেতে পারিনি। আমার স্বপ্ন আর বাস্তবের হুবহু মিল দেখে আমি তখন আর নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমি যখন কোনো বিষয় নিয়ে খুব বেশি ভাবি বা খুব টেনশন করি, তখন আমি আর নিঃশ্বাস নিতে পারি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক 
পরামর্শ:
মামার মৃত্যুর দিনে তোমার ক্ষেত্রে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি হয়তো পুরোটা স্বপ্ন ছিল না। তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো-বা মামা অসুস্থ হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমন হতে পারে, বাড়ির লোকেরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং তুমি কিছুটা জেগে গিয়ে হালকা ঘুমের মধ্যে সেই কথাবার্তাগুলো শুনেছ। যখন খুব জোরে গাড়ির হর্ন বেজেছে, তখন তুমি সম্পূর্ণ জেগে গেছ। তোমার তখন মনে হয়েছে, এভাবে বাস্তবে ঘটে যাওয়া বিষয়টি তুমি কীভাবে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পেলে। এরপর তোমার ভেতরে হয়তো প্রচণ্ড ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তুমি প্রতিদিন অন্তত তিনবেলা সমস্ত শরীর শিথিল করে নাক দিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে ছাড়বে। একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ বার করবে। যদি নিয়ম করে আন্তরিকভাবে এটি করো, তুমি নিশ্চয়ই কিছুটা উপকৃত হবে। কোনো কিছু নিয়ে খুব বেশি ভাবনা হলে নিজেকে বলবে তুমি এই বিষয়টি নিয়ে পরে কখনো চিন্তা করবে। মনকে অন্য একটি আনন্দময় বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করবে, কেমন? আর তোমার যে প্রায়ই মনে হয় কোনো দৃশ্য আগেও দেখেছ। সেটি নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, কারণ আমাদের অনেক অভিজ্ঞতার ছোটখাটো অংশ নিজেদের অজান্তে অবচেতন মনে জমে থাকে। যখন নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে আগের অভিজ্ঞতার কিছুটা সাদৃশ্য থাকে, তখন আমাদের মনে হতে থাকে এটি তো আগেও আমার জীবনে ঘটেছে।