টিকটকের অ্যালগরিদম নিয়ন্ত্রণ করবে কোন প্রতিষ্ঠান

টিকটকছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়া ঠেকাতে সম্প্রতি দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান চীনের বাইটড্যান্স। এ চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করবে ওরাকলসহ বিভিন্ন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। তবে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের পরিচালনা কার্যক্রমে পরিবর্তন হলেও একটি বড় প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে গেছে। টিকটকের সাফল্যের পেছনে মূল ভূমিকা রাখা অ্যালগরিদম কোন প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা।

সাবেক মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল সদস্য রাশ দোশি জানিয়েছেন, টিকটকের অ্যালগরিদম কি পুরোপুরি হস্তান্তর করা হয়েছে, নাকি বেইজিং নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে বা ওরাকল কেবল এটি পর্যবেক্ষণ করবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এর আগে বাইটড্যান্স জানিয়েছিল, তারা প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ করে দেবে, তবু এর মূল প্রযুক্তি বা অ্যালগরিদম বিক্রি করবে না। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাইটড্যান্স যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক মালিকানা নিজের কাছে রাখলেও ব্যবহারকারীর তথ্য, আধেয় (কনটেন্ট) ও অ্যালগরিদমের নিয়ন্ত্রণ এই নতুন যৌথ উদ্যোগের হাতে ছেড়ে দিতে পারে। এখানে বেইজিংয়ের অবস্থানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে চীন তাদের রপ্তানি আইন সংশোধন করে অ্যালগরিদম ও সোর্স কোড রপ্তানির ওপর সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করেছে, যা এই চুক্তিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

প্রযুক্তিবিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, টিকটকের সাফল্যের পেছনে কেবল সফটওয়্যার নয়; বরং শর্ট ভিডিও ফরম্যাটের সঙ্গে এর নিখুঁত সমন্বয় কাজ করে। মেটার দুই প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর সোশ্যাল গ্রাফ বা বন্ধুতালিকার ওপর ভিত্তি করে কনটেন্ট দেখায়, টিকটক সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। টিকটকের অ্যালগরিদম মূলত ব্যবহারকারীর আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। টিকটকের অ্যালগরিদম এতই গতিশীল যে এটি ব্যবহারকারীর রুচির পরিবর্তন তাৎক্ষণিকভাবে ধরতে পারে। এমনকি দিনের কোন সময়ে ব্যবহারকারী কী ধরনের ভিডিও পছন্দ করছেন, তা–ও এটি নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির গবেষকদের করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, টিকটক তার সুপারিশ করা ভিডিওর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর বর্তমান আগ্রহের বাইরের বিষয়বস্তু দেখায়। ‘টিকটক অ্যান্ড দ্য আর্ট অব পারসোনালাইজেশন’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলা হয়, অ্যাপটি মূলত ব্যবহারকারীর রুচি আরও গভীরভাবে বোঝার জন্য বা তাকে দীর্ঘক্ষণ অ্যাপে আটকে রাখার কৌশল হিসেবে নতুন ধরনের ভিডিও সামনে নিয়ে আসে। মূলত এই ব্যক্তিগত পছন্দ বুঝতে পারার অবিশ্বাস্য ক্ষমতাই টিকটককে অন্য সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আলাদা করে রেখেছে।

সূত্র: রয়টার্স