বাংলাদেশে কারখানা চালু করল স্মার্টফোন নির্মাতা অনার
গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে এআই প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্টফোন তৈরির কারখানা চালু করেছে চীনের স্মার্টফোন নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান অনার। চীনের পাঁচটি অঞ্চল ও ইন্দোনেশিয়ার পর বাংলাদেশে নিজস্ব ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন তৈরি কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ কারখানার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ সময় কারখানা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) পরিচালক মো. নূরন্নবী, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া, অনারের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট জর্জ ঝেং এবং গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেরিক ডেং উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে কারখানাটিতে একটি প্রোডাকশন লাইন দিয়ে প্রতিদিন দেড় হাজার ফোন তৈরি করা হবে। এক বছরের মধ্যেই আরও চারটি লাইন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে, ফলে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। কারখানাটিতে তৈরি প্রতিটি ফোনেই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা থাকবে। ফলে বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের প্রযুক্তি সক্ষমতা তুলে ধরা যাবে। কারখানায় যন্ত্রাংশ সংযোজনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোতে এআই প্রযুক্তিচালিত অটোমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে ফোনগুলোর মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে ডিজিটাল রূপান্তর যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। এখন আমাদের নিজেদের দক্ষতার যে ঘাটতি রয়েছে, তা কমাতে হবে। ডিভাইসের সহজলভ্যতা আরও বাড়াতে হবে, পাশাপাশি তরুণদের জন্য মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান তৈরির দিকেও নজর দিতে হবে। এই কারখানা চালুর মাধ্যমে দেশে দক্ষ জনবল তৈরি হবে, দক্ষতা-বিনিময়ের সুযোগ বাড়বে এবং নতুন উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন। সরকারের ডিজিটাল গভর্নেন্স কাঠামো বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের হার বৃদ্ধি করবে।’
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে অনার ফোন ইতিমধ্যে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে। তবে ব্যবহারকারীরা আরও সাশ্রয়ী দামে অনারের ফোন কিনতে চান। স্থানীয় এ চাহিদা মেটাতেই আমরা এই কারখানা স্থাপন করেছি। আমাদের প্রাথমিক উৎপাদনক্ষমতা ৬০ হাজার ইউনিট, চাহিদা বাড়লে তা আরও বৃদ্ধি করা হবে। কারখানাটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশ ডিজিটাল রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং একক রপ্তানিমুখী শিল্পের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। ভবিষ্যতে বৈশ্বিক প্রযুক্তি উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বাংলাদেশের সক্ষমতারও প্রমাণ এই কারখানা।’
জর্জ ঝেং বলেন, ‘এই কারখানা শুধুই একটি অবকাঠামো নয়, এটি অনার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এক অংশীদারত্বের প্রতীক—যেখানে বৈশ্বিক দক্ষতা ও স্থানীয় সক্ষমতার সম্মিলন ঘটেছে। আমাদের লক্ষ্য শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা নয়, এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে স্থানীয় পেশাজীবীদের দক্ষতা বিকশিত হবে, প্রযুক্তি অগ্রসর হবে এবং সম্প্রদায় আরও সমৃদ্ধ হবে।’