২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে অ্যালফাবেটের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল শাখা গুগল ভেঞ্চারস, গ্র্যাডিয়েন্ট ভেঞ্চারস ও প্রাইভেট-ইকুইটি বিভাগ ক্যাপিটাল জি মিলে ১০০টির বেশি চুক্তি করেছে। এর মধ্যে ২৫টির বেশি চুক্তি হয়েছে জীবনবিজ্ঞান (লাইফ সায়েন্স) ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত উদ্যোগের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের সিবি ইনসাইট নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এ বছরে অ্যালফাবেট স্বাস্থ্যসেবা খাতের ধারণার ওপর ১৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।
উদ্ভাবনী উদ্যোগের দিকে বেশি ঝোঁক অ্যালফাবেটের। আর তাই স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত উদ্যোগের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল দেখে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি।অ্যালফাবেট ইতিমধ্যে নানা দরকারি পণ্য ও সেবা তৈরি করে মানুষের কাছাকাছি এসেছে। এসব সেবার মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম, জিমেইল থেকে শুরু করে গুগল ডকস পর্যন্ত বিভিন্ন সেবা রয়েছে। এ ছাড়া গুগল ম্যাপসও মানুষের নানা কাজে লাগছে। মানুষের ডিজিটাল জীবনযাত্রায় সেবাগুলো প্রভাব ফেলছে। অ্যালফাবেটের এখনকার ভাবনা হচ্ছে, তারা স্বাস্থ্যসেবা খাতে সেবা দিতে শুরু করলে তাদের ডিজিটাল সেবার পাশাপাশি বাস্তব জগতের পণ্যও তৈরি করা সম্ভব হবে। তাদের এ ধারণা কতটুকু কার্যকর হবে?
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে অ্যালফাবেট স্বাস্থ্যসেবা খাতে কাজ শুরু করে। ওই সময় গুগল ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত তথ্য এক জায়গায় রাখার সুবিধা এনেছিল। কিন্তু ২০১২ সালে এ প্রকল্প বড় ধরনের ধাক্কা খায়। তবে ২০১৮ সালে আবার গুগল হেলথ নামে প্রকল্পটি চালু হয়। তবে গত বছর এখান থেকে সরে আসে অ্যালফাবেট। এখন স্বাস্থ্য খাতে চারটি বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করছে অ্যালফাবেট। এগুলো হচ্ছে পরিধানযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা পণ্য তৈরি, স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত তথ্যসেবা, স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের বয়সকে দীর্ঘায়িত করার প্রকল্প।
গুগল ২০১৯ সালে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারে ফিটবিটকে অধিগ্রহণের মাধ্যমে পরিধানযোগ্য ব্যবসায় যুক্ত হয়। ফিটবিটের জনপ্রিয় ফিটনেস ট্র্যাকার দিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। বর্তমানে প্রায় ১০ কোটি মানুষ এ সেবা ব্যবহার করেন। সম্প্রতি ফিটবিটের ট্র্যাকারে নতুন ফিচার এসেছে। এতে এমন সেন্সর যুক্ত হয়েছে, যাতে হৃদ্রোগ শনাক্ত করতে পারে। সম্প্রতি এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও পেয়েছে। গুগল এখন তাদের স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ফিচার অন্য যন্ত্রেও যুক্ত করার চেষ্টা করছে। ফিটবিটের সেন্সর এফডিএর অনুমোদন পাওয়াকে বড় ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গুগলের পিক্সেল ওয়াচেও এখন এ ধরনের ফিচার চলে আসতে পারে।
২০১৬ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ড চালু করে গুগল। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য কাজে লাগিয়ে রোগ শনাক্তে প্রতিষ্ঠানটি সফলভাবে কাজ করছে। গত বছর আলফাফোল্ড নামের এআই সফটওয়্যার খবরের শিরোনাম হয়েছিল। এটি মূলত একটি সফটওয়্যার, যা প্রোটিনের কাঠামো অনুমান করতে পারে। এ ছাড়া অ্যালফাবেটের পক্ষ থেকে ইসোমরফিক ল্যাব নামের একটি প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে, যা ওষুধ খুঁজতে সাহায্য করবে।
অ্যালফাবেটের স্বাস্থ্য পোর্টফোলিওর সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করার একটি প্রচেষ্টা। ধারণাটি হলো, বার্ধক্যকে জীবনের একটি অপরিবর্তনীয় দিক হিসেবে নয় বরং এমন একটি শর্ত হিসেবে দেখা উচিত, যা চিকিত্সাযোগ্য বা সঠিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। সেই লক্ষ্যে অ্যালফাবেটের জীবন-বিজ্ঞানের অন্যতম সহযোগী সংস্থা ক্যালিকো, বয়স-সম্পর্কিত রোগের দিকে নজর দিচ্ছে। গত বছর ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাবভির সঙ্গে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি চুক্তির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে অ্যালফাবেট। এর বাইরে এলওরিয়েলের সঙ্গে কাজ করছে ভেরিলি নামের একটি অ্যালফাবেটের প্রতিষ্ঠান। মানুষের ত্বক নিয়ে কাজ করছে তারা।
অ্যালফাবেট যেসব কাজ করছে, তা আশাব্যঞ্জক হলেও এতে বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু সমস্যা কারিগরি। ডিপমাইন্ডের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এআই) এখনো অনেক তথ্য পড়ার উপযোগী নয়। এ কারণে চিকিৎসকদের জন্য তৈরি স্ট্রিম নামে এআই সহকারী প্রোগ্রাম বন্ধ করতে হয়েছে অ্যালফাবেটকে। এর বাইরে রয়েছে বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের চাপ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারিগরি সমস্যা ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে যেসব নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের বাধা আছে, তা দূর করা সম্ভব।
সাধারণত দেখা যায়, ভালো কোনো ধারণা শেষ পর্যন্ত ভালো ব্যবসাবান্ধব উদ্যোগ হতে পারে না। অ্যালফাবেটের উদ্যোগগুলো তাই সব যে সফল হবে, তা ভাবা ঠিক হবে না। এ ছাড়া বর্তমানে পরিধানযোগ্য প্রযুক্তিপণ্যের বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। অ্যালফাবেটকে তাদের পণ্য বাজারে জনপ্রিয় করতে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। গুগলের স্বাস্থ্যসেবা–সম্পর্কিত প্রোগ্রামগুলোও প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। কেয়ার স্টুডিও, ক্যালিকো, ডিপমাইন্ডকে তাই আরও বাড়তি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পরের দশকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এসব প্রকল্পের সাফল্যের ওপরে অ্যালফাবেটের স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
সূত্র: ইকোনমিস্ট ও রয়টার্স