ইন্টারনেটে বাংলা লেখার স্বাধীনতা দিতে এল অভ্র

সেই সময়ে উচ্চমাধ্যমিকপড়ুয়া ছাত্র, প্রোগ্রামার মেহদী হাসান খান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা লেখার প্রোগ্রাম অভ্র প্রকাশ করেন।

অভ্র প্রোগ্রামের নির্মাতা মেহদী হাসান খানঅলংকরণ: আরাফাত করিম

২৬ মার্চ ২০০৩
ইন্টারনেটে বাংলা লেখার স্বাধীনতা দিতে এল অভ্র
সেই সময়ে উচ্চমাধ্যমিকপড়ুয়া ছাত্র, প্রোগ্রামার মেহদী হাসান খান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা লেখার প্রোগ্রাম অভ্র প্রকাশ করেন। ছোট আকারের এই প্রোগ্রাম দিয়ে সরাসরি ই–মেইলে ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বাংলা লেখার সূচনা হয়। শুরুতে ই-মেইলের মাধ্যমে অনেক ব্যবহারকারী হাতে পান অভ্র।
ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০১৮ সালে প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মেহদী হাসান খান জানান, ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়ে তিনি একদিন বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টল দেখেন। মেহদী বলেন, ‘ওই স্টলে প্রথম “ভেজাল” ছাড়া বাংলা ওয়েবসাইট দেখলাম। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলাম। ইউনিবাংলা নামে ওদের পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও দেখা হলো। তবে এটা লিনাক্সের জন্য।’ বাসায় ফিরে মেহদী তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট নামান। কিন্তু দেখলেন এটি বাংলা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য নেই। তাই তিনি নিজেই বাংলা লেখার প্রোগ্রাম তৈরির কথা ভাবলেন।

ইন্টারনেটে বাংলা লেখার সুবিধা থাকায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় অভ্র

সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেললেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার, যা উইন্ডোজে কাজ করবে। ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশ করলেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে অভ্র শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোড, পাশাপাশি বিনা মূল্যে এটা ব্যবহার করা যাবে। তাই আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। কি–বোর্ড মুখস্থ না করে সহজে বাংলা টাইপ করার জন্য মেহদী নিজে বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। অভ্রের সঙ্গে যোগ হলেন রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করতে লাগলেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভা, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটা নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬.০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’

নগদ উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৯
ছবি: নগদের সৌজন্য

২৬ মার্চ ২০১৯
মোবাইল লেনদেন সেবা নগদ চালু
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল লেনদেন সেবা নগদের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ রাজধানীর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগদের উদ্বোধন করেন। নগদের উদ্যোগে সদ্য চালু হওয়া ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি (নো ইওর কাস্টমার) ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে নগদে তাঁর অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নগদ হিসাবে সেই ১০ হাজার টাকা পাঠান (সেন্ড মানি)।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে মোস্তাফা জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগদের গ্রাহক তৈরির জন্য ই–কেওয়াইসি পরীক্ষা করতে আগেই আমার একটি অ্যাকাউন্ট নগদে ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের অ্যাকাউন্ড খোলার জন্য গণভবনের দোতলা থেকে তাঁর হাতব্যাগ আনিয়ে নেন। সেখান থেকে ১০ হাজার টাকা তিনি নগদের কর্মকর্তাদের হাতে দেন। অ্যাকাউন্ট খোলা হলে তিনি আমার নগদ হিসাবে সেই টাকা সেন্ড মানি করে পাঠিয়ে দেন। আমার নগদ হিসাবে সেই টাকা এখনো সঞ্চিত রয়েছে।’
নগদের হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, উদ্বোধনের দিন হিসাব খুলতে অ্যাড মানি হিসেবে নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুককে প্রধানমন্ত্রী ৫০০ টাকার ২০টা নোট দিয়েছিলেন।  প্রথম লেনদেনের স্মারক হিসেবে সেই নোটগুলো এখনো সংরক্ষণ করছেন তানভীর এ মিশুক।

নগদের প্রতীক

নগদে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অংশীদারত্ব রয়েছে। ডাক বিভাগের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নগদ লিমিটেড নগদ পরিচালনা করছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই নগদের মোট আয়ের ৫১ শতাংশ পায় ডাক বিভাগ আর ৪৯ শতাংশ পায় নগদ লিমিটেড। এখন নগদে নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ৯ কোটির বেশি। প্রতিদিন ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয় নগদের মাধ্যমে। অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্র স্ক্যান করে অ্যাকাউন্ট খোলার ‘ই-কেওয়াইসি’ নগদই প্রথম চালু করে।

গুগল ডুডলে বাংলাদেশ
স্ক্রিনশট

২৬ মার্চ ২০১৩
বাংলাদেশ নিয়ে গুগলের প্রথম ডুডল প্রকাশিত
বাংলাদশকে বিষয়বস্তু করে প্রথমবারের মতো ডুডল প্রকাশ করে ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার সবচেয়ে বড় ওয়েবসাইট (সার্চ ইঞ্জিন) গুগল। বিভিন্ন বিষয় ধরে বিশেষ বিশেষ দিনে নিজেদের লোগো পরিবর্তন করে গুগল। এটি গুগল ডুডল নামে পরিচিত। ২০১৩ সালের মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশ নিয়ে গুগল ডুডল প্রকাশিত হয়। সেই ডুডলে দেখা যায় একটি পরিবার বাংলাদেশের লাল–সবুজ পতাকা হাতে শস্যখেত ধরে এগিয়ে চলছে। ডুডলের ওপর মাউস ক্লিক করলে ইংরেজিতে ‘বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্স ডে ২০১৩’ লেখা ভেসে আসে।

ল্যারি পেজ
রয়টার্স

২৬ মার্চ ১৯৭৩
ল্যারি পেজের জন্ম
মার্কিন ব্যবসায়ী, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, ইন্টারনেট উদ্যোক্তা ও গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা লরেন্স (ল্যারি) এডওয়ার্ড পেজ ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহণ করেন। সের্গেই ব্রিনের সঙ্গে গুগল প্রতিষ্ঠা করে তিনি বেশি খ্যাতি পান। ১৯৯৭ সালে থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ছিলেন। গুগলের আরেক প্রতিষ্ঠাতা এরিক স্মিডটকে তিনি সিইওর পদ ছেড়ে দেন। পরে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যালফাবেট ইনকরপোরটেড গঠিত হলে ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি অ্যালফাবেটের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করনে।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার সূচকের করা চলতি মার্চ মাস পর্যন্ত ল্যারি পেজের মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর ফোর্বস সাময়িকীর হিসাবে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার ২৮০ কোটি ডলার। ল্যারি পেজ বর্তমানে পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের তালিকায় নবম স্থানে রয়েছেন। তিনি উড়ন্ত গাড়ির দুই উদ্ভাবনী উদ্যোগ (স্টার্টআপ) কিটি হক ও ওপেনারে বিনিয়োগ করেছেন।  মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ল্যারি পেজ গুগলের সার্চ র‌্যাঙ্কিং অ্যালগরিদম পেজর‌্যাঙ্কের সহলেখক।  

ডেভিড প্যাকার্ড
উইকিমিডিয়া

২৬ মার্চ ১৯৯৬
মারা গেলেন এইচপির ডেভিড প্যাকার্ড
বেশ কয়েক সপ্তাহ অসুস্থ থাকার পর মারা যান কম্পিউটার নির্মাতা হিউলেট–প্যাকার্ডের (এইচপি) সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেভিড প্যাকার্ড। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সতীর্থ উইলিয়াম (বিল) হিউলেটকে সঙ্গে নিয়ে প্যালো অ্যালটোর একটি গ্যারেজে এইচপি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এইচপির উন্নতি পরবর্তী সময়ে সিলিকন ভ্যালি হিসেবে পরিচিতি পায়। এইচপির প্রথম পণ্য ছিল একটি অসসিলেটর। ডিজনির জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ফ্যানটাসিয়ায় এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত পারসোনাল কম্পিউটার, লেজার প্রিন্টার, ক্যালকুলেটর, অনুষঙ্গ ও গবেষণাগারে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার যন্ত্রপাতির উৎপাদক হিসেবে এইচপি একটি বিশ্বস্ত নাম। ১৯১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ডেভিড প্যাকার্ড তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসনে উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২৬ মার্চ ১৯৯৯
এক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে মেলিসা ভাইরাস
ই–মেইলের মাধ্যমে এক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বব্যাপী কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে মেলিসা ভাইরাস। এটিকে ভাইরাসের ইতিহাসে অন্যতম দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস হিসেবে ধরা হয়। ছড়িয়ে পড়ার পর মাত্র পাঁচ দিন সক্রিয় ছিল মেলিসা। এতেই এক লাখ কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছিল। ইন্টেল ও লকহেড মার্টিনের মতো বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ই–মেইল ব্যবস্থায় আঘাত হানে মেলিসা এবং প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ই–মেইল ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। মেলিসার লক্ষ্যবস্তু ছিল মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও আউটলুক এক্সপ্রেস ই–মেইল সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় এমন সব কম্পিউটার। জরুরি বার্তা আছে এমন বিষয় লেখা ই–মেইলের মাধ্যমে হানা দিত মেলিসা। ই–মেইল খুলে এর লিস্ট ডট ডট নামের সংযুক্তি ফাইলে ক্লিক করলেই কম্পিউটার মেলিসায় আক্রান্ত হতো।