গ্রামীণফোন ও নগদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুই প্রতিষ্ঠান প্রধানের আলোচনা
২০৪১ সালের আগেই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার আশাবাদ
আজ দেশের শীর্ষ টেলিযোগাযোগ সেবা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন আর মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই স্বাধীনতা দিবসে নগদ চার বছর আর গ্রামীণফোন ২৬ বছর পূর্ণ করল। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বিপ্লবে, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ডিজিটাল লেনদেনের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ্যে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে একান্ত আলাপচারিতায় বসেছিলেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান এবং নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক। আলোচনায় তাঁরা বলেন, ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ স্মার্ট দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
দেশের সমৃদ্ধির গল্প করতে গিয়ে দুজনই বলেছেন, সহায়ক ও সমন্বিত নীতিমালা পরিচালন পদ্ধতি নিশ্চিত করতে পারলে ২০৪১ সালের আগেই কাঙ্ক্ষিত স্মার্ট বাংলাদেশের দেখা মিলবে। ইয়াসির আজমান বলেন, ‘যত দ্রুত আমরা পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব, তত দ্রুত আমরা লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।’
২৬ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন; বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এই দিনেই আলোর মুখ দেখেছে বাংলাদেশের দুই প্রতিষ্ঠান—নগদ ও গ্রামীণফোন। এই ত্রিমুখী উৎসব উদ্যাপনের লক্ষ্যেই আলোচনায় বসেন তানভীর এ মিশুক ও ইয়াসির আজমান। দুজনের আলোচনাজুড়েই প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশের ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হওয়ার পথের স্বপ্ন ও আর্থিক উন্নয়নের গল্প।
বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘বাংলাদেশের যে অসাধারণ উন্নয়নযাত্রা, সেটা ফিরে দেখি আমরা। ১৯৭২ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৯২ ডলার, এখন সেটা ২ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশের যে উন্নতি হচ্ছে, এতে কিন্তু গ্রামীণফোনের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আজ গ্রামীণফোনের জন্মদিন, ২৬ বছর হচ্ছে। আজ নগদেরও জন্মদিন। আমি শুধু গ্রামীণফোনকে একটা মোবাইল অপারেটর হিসেবে দেখি না। আপনারা যদি এই অবকাঠামোগত সমর্থন না দিতেন, আমরাও অর্থনৈতিক যে ডিজিটাল কর্মকাণ্ড করছি, তা সম্ভব হতো না। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের চিন্তা করাও সম্ভব হতো না।’
ইয়াসির আজমান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য আজ অনেক বড় দিন। স্বাধীনতা দিবস আর একই সঙ্গে গ্রামীণফোনের ২৬ বছর পূর্তি। আবার নগদেরও আজ ৪ বছর পূর্তি হলো। আমি বলব, বাংলাদেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে নগদের যে সংযুক্তি, উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে নগদ যেভাবে এসেছে এবং আজ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার পেছনে দূরদৃষ্টি, যুগান্তকারী কিছু সিদ্ধান্ত ছিল। এই বিষয়কে আমাদের প্রশংসা করতে হবে, এটার ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
দেশের প্রযুক্তি ও অর্থনীতি খাতের এই শীর্ষ দুই ব্যক্তি মনে করেন, বাংলাদেশ সংযুক্তির এক মহাসড়কে উঠে পড়েছে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার চূড়ান্ত রূপ দেখা যাবে। ইয়াসির আজমান বলেন, ‘১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন, তখন মোবাইল ও টেলিকম সেবাকে উন্মুক্ত করা হয়। একইভাবে ২০০৮ সালে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা শুনলাম। তখন এসব বিষয় নিয়ে কাজ করা অনেকেই জানিয়েছেন, নিন্দুকেরা সে সময় বিষয়গুলো নিয়ে হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু আজ সেটা বাস্তবতা। ২০২১ সালে এসে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। আমি বলব, এই যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্তগুলো সহযোগিতা করেছে আমাদের। তার ফলেই এই গ্রামীণফোনের জন্ম, নগদের জন্ম।’
এই আলোচনায় তানভীর এ মিশুক আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে। গ্রামীণফোন ও নগদের অংশীদারত্বের ফলে সাত কোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন ঘটেছে। আগে একটা মানুষের অ্যাকাউন্ট খুলতে যে বিড়ম্বনা হতো, ৭ থেকে ১০ দিন বসে থাকা লাগত; সেটা বদলে গেছে। যখন আমরা অংশীদারত্ব করলাম, ওয়ান ট্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি চালু করলাম, আসল লাভটা কিন্তু গ্রামীণফোন বা নগদের হয়নি, হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষের। আমি মনে করি, এখন সবার হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে হবে। আর তা করতে পারলে ২০৪১ সালের অনেক আগেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছে যাব।’
তানভীর এ মিশুকের কথার সূত্র ধরে ইয়াসির আজমান বলেন, আমদানি-রপ্তানির নতুন নতুন দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে। একের পর এক অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। এখন নগদের মতো অভিনব ব্যবসা পরিকল্পনা নিয়ে মানুষ আসছে এবং এই বাজারে বিনিয়োগ করতে চাইছে।
উল্লেখ্য, যেকোনো মোবাইল থেকে পাঁচটি ডিজিট (* ১৬৭ #) ডায়াল করে নগদের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে গ্রামীণফোনের সঙ্গে এই পদ্ধতিতে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি চালু করে নগদ। এর ফলে দ্রুত মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে যুক্ত হয়েছে। এর আগে দেশে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি পদ্ধতিতে অ্যাকাউন্ট খোলা শুরু করে নগদ।