সোনারগাঁর এই কারখানায় প্রতিদিন ৯ হাজার মুঠোফোন তৈরি হয়

টেকনোর নতুন কারখানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
সংগৃহীত

চলতি মাসেই চালু হয়েছে কারখানা। শুরুতেই প্রতিদিন ৯ হাজার মুঠোফোন উৎপাদিত হচ্ছে ১ হাজার কর্মীর হাতে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে আই স্মার্ট ইউ টেকনোলজি বিডি লিমিটেডের মুঠোফোন তৈরির কারখানা। এটি চীনের ট্রানশান হোল্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠান। এই কারখানায় তৈরি হচ্ছে টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন ও ফিচার ফোন।

আজ বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কারখানার উদ্বোধন করা হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার কারখানার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি সশরীর অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম শিল্পবিপ্লব বাষ্পীয় ইঞ্জিন, দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবে বিদ্যুতে আমরা বেশি যুক্ত হতে পারিনি। তবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট নিয়ে যে তৃতীয় শিল্পবিপ্লব, সেটিতে আমাদের অংশগ্রহণ ভালো। ডিজিটাল বিপ্লবের যে অগ্রগতি, তাতে আমরা অনেক এগিয়েছি। বাংলাদেশ ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদন করবে, এই স্বপ্ন এখন পূরণ হয়েছে। ২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। তাই দেশে এখন ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট এবং ১৮ কোটি মানুষ মুঠোফোনে যুক্ত।

কারখানার উদ্বোধনী বক্তৃতায় মোস্তাফা জব্বার বলেন, মুঠোফোন কারখানাগুলো শুধু যে দেশের চাহিদা মেটাবে তা নয়, বাংলাদেশ থেকে একদিন মুঠোফোন রপ্তানি হবে। তরুণদের কর্মসংস্থান হয় এসব কারখানায়।

অনুষ্ঠানে ট্রানশান হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান ও মহাব্যবস্থাপক জর্জ জু তাঁদের ব্যবসার প্রসারে বাংলাদেশকে ‘কৌশলগত বাজার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার এই দেশে গ্রাহক পর্যায়ে সাশ্রয়ী এবং উচ্চ মানের মুঠোফোনের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশের নতুন সম্ভবনাময় বাজার তৈরি হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আই স্মার্ট ইউর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক, বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, ঢাকার চীনা দূতাবাসের ইকোনমিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল কাউন্সেলর সং ইয়াং ও গুগল পার্টনারশিপ ডিরেক্টর মাহির শাহীন উপস্থিত ছিলেন।

আই স্মার্ট ইউ কারখানার প্রথম ধাপের বিনিয়োগ ২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। তিনতলা ভবনের প্রায় পুরোটায় (২২০০০ বর্গমিটার) মুঠোফোন তৈরির কারখানা। কারখানার কর্মকর্তারা জানালেন, এখানে গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। মানা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কারখানা ঘুরে দেখা গেল, স্থানীয় দক্ষ কর্মীরা এখানে মুঠোফোন সংযোজন, পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও মোড়কজাত করার কাজ করছেন। ধাপে ধাপে হচ্ছে সব। আই স্মার্ট ইউর এই কারখানায় মুঠোফোনের মাদারবোর্ডও তৈরি হয়। মাদারবোর্ড তৈরি ও মুঠোফোন পরীক্ষায় রোবট ব্যবহার করা হয়।

শুরুর দিকে কর্মদিবস ধরে কারখানার কাজ চলছে। ভবিষ্যতে ২৪ ঘণ্টা মুঠোফোন উৎপাদন করা হবে। কারখানার কর্মকর্তারা জানালেন, এই কারখানা প্রতি মাসে ১০ লাখ মুঠোফোন উৎপাদন করতে সক্ষম। কাঁচামাল আমদানি নির্বিঘ্ন হলে পূর্ণ উৎপাদনে যাবে কারখানাটি। এখন প্রতিদিন টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল ব্র্যান্ডের তিন হাজার স্মার্টফোন ও ছয় হাজার ফিচার ফোন উৎপাদিত হচ্ছে এই কারখানায়।

নতুন এই কারখানা চালুর আগে আই স্মার্ট ইউর কারখানা ছিল গাজীপুরে। সেটি বন্ধ করে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে চার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নতুন কারখানা।