বাংলাদেশের আয়োজনে আমরা মুগ্ধ

১০ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরার (আইসিসিবি) ৪ নম্বর হলে তখন চলছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্ব। হলের বাইরে পাওয়া গেল আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেলর ইউনিভার্সিটির কম্পিউটারবিজ্ঞানের অধ্যাপক উইলিয়াম বি পাউচারকে। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন আইসিপিসি ঢাকার স্বাগতিক পরিচালক এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) উপাচার্য কামরুল আহসান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পল্লব মোহাইমেন

উইলিয়াম বি পাউচার (ডানে) ও কামরুল আহসান
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

বিশ্বের কম্পিউটারশিল্প ও কম্পিউটারবিজ্ঞান শিক্ষায় আইসিপিসির প্রভাব কী রকম?

উইলিয়াম বি পাউচার: বাসযোগ্য পৃথিবী ও মানুষের কল্যাণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি, আরও খোলাসা করে বললে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং দিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে হবে। এখনই তা দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। আর প্রোগ্রামাররা হলেন অনেক দক্ষ সমাধানকারী (সলভার)। আইসিপিসি হলো কম্পিউটারবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং দক্ষতা দেখানোর সবচেয়ে বড় আয়োজন। আইসিপিসির শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৯ লাখ সমস্যা সমাধান করতে হয়েছে। আইসিপিসিতে যাঁরা ভালো করেন, তাঁরা তথ্যপ্রযুক্তিশিল্পে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। গুগল, কোরা, ফেসবুকের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তারা আইসিপিসিতে ভালো ফল করেছেন। বিশ্বের এক হাজারের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠাতা বা প্রধান নির্বাহী আইসিপিসির প্রতিযোগী। পাঁচ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি নেতৃত্বে আছেন আইসিপিসির প্রতিযোগীরা। সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ ১০০ কোম্পানিতেও তাঁদের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে। আইসিপিসি সমস্যার সেরা সমাধানকারী তৈরি করে দেয়।

প্রশ্ন :

এই প্রতিযোগিতা ছাড়া আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের আর কী কী কাজ রয়েেছ?

উইলিয়াম বি পাউচার: এটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আইসিপিসি ফাউন্ডেশন বিশ্বব্যাপী আইসিপিসি আয়োজন করে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্পনসর নেওয়া হয়। এর বাইরে অন্য ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা হয়। যেমন ভারতে শুধু মেয়েদের জন্য আমরা অ্যালগো কুইন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং চর্চার জন্য অবকাঠামোগত সুবিধা দিয়ে থাকি। সরাসরি পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারবিজ্ঞান শিক্ষায় সহায়তা করে থাকি। সমস্যার সমাধান করে দিই, যাতে ভবিষ্যতে তাঁদের ও আমাদের জন্য সুবিধা হয়।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের আতিথেয়তা কেমন লাগল?

উইলিয়াম বি পাউচার: খুবই ভালো। চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা। এখানকার আতিথেয়তা খারাপ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। (পাশে ইঙ্গিত করে) আর কামরুল আহসান তো এখন আমার ও আইসিপিসির বড় শক্তি। বাংলাদেশ এত সুন্দর, গোছানো একটি আয়োজন করেছে, আমরা মুগ্ধ। ২০১৬ সালে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী যখন বাংলাদেশে এ আয়োজন করতে চাইলেন, তখন তাঁর সেই স্বপ্নের প্রতি আমরাও আগ্রহ দেখাই। এরপর নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে আজকের দিনটি এল।

প্রশ্ন :

আইসিপিসির শুরু থেকেই আপনি যুক্ত…

উইলিয়াম বি পাউচার: ১৯৭৭ সালে আমি একটি দলের কোচ ছিলাম। এরপর ১৯৮০ সাল থেকে আয়োজনে যুক্ত হয়ে পড়ি। সেই থেকে আছি। সব প্রজন্মকেই ত্যাগ স্বীকার করতে হয় পরের প্রজন্মের জন্য। নতুন নতুন সব সমস্যা আসে পৃথিবীতে, যার সমাধান করতে হয়। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের চর্চা সমস্যার সমাধান করতে দক্ষ করে তোলে। তরুণেরা আইসিপিসির মাধ্যমে দক্ষ হয়ে ওঠে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য।

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: ১৯৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামায় জন্ম উইলিয়াম বি পাউচারের। বাবা ছিলেন শিক্ষক। উইলিয়ামের প্রথম ১০ বছর কেটেছে ১৪টি জায়গায়। ১৯৭২ সালে উইলিয়াম বি পাউচার কম্পিউটারবিজ্ঞানে শিক্ষকতা শুরু করেন। টেক্সাসের বেলর ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন ৩৯ বছর ধরে। ১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আইসিপিসির নির্বাহী পরিচালক (বিভিন্ন পদবিতে) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতার কোচ ও আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন।