খালি চোখেই ধূমকেতু দেখার সুযোগ

খালি চোখে দেখা যাবে নিশিমুরা ধূমকেতুএএফপি

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ধূমকেতু কবিতায় লিখেছেন, ‘আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু/ এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!’ ধূমকেতু নিয়ে অবশেষে মানুষের আরেকটি অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে। নিশিমুরা নামের একটি ধূমকেতু ৪৩৭ বছর পর আবারও দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে এই মাসে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত নিশামুরা ধূমকেতু নিয়ে এরই মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হ্যালির ধূমকেতু পৃথিবীবাসী দেখার সুযোগ পায় প্রতি ৭৫-৭৬ বছর পরপর। ঠিক তেমনি নিশিমুরা উত্তর গোলার্ধে প্রতি ৪৩৭ বছর পরপর ভ্রমণে আসে।

প্যারিস অবজারভেটরির জ্যোতিঃপদার্থবিদ নিকোলাস বিভার জানান, এটা সত্যিই ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা। ৪৩৭ বছর পরপর এই ধূমকেতু যাত্রাপথে সূর্যকে অতিক্রম করে। অর্থাৎ সৌরজগতের বাইরের শীতল পরিবেশেই বেশি সময় পার করে এই ধূমকেতু। যখন সূর্যের কাছাকাছি ধূমকেতুরা আসে, তখন তাপের কারণে মহাজাগতিক বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। সূর্যের তাপে ধূমকেতুর বরফকেন্দ্র গলে ধুলাবালু ও গ্যাসে পরিণত হয়। এই ধুলাবালু ও গ্যাস মিলে বিশালাকায় লেজ তৈরি হয়। সেই লেজের ওপর সূর্যের আলো প্রতিফলিত হলে আমরা পৃথিবী থেকে ধূমকেতু দেখার বিরল সুযোগ পাই। এই ধূমকেতুর লেজ কিছুটা সবুজ রঙের। নিশিমুরা ধূমকেতুর বৈজ্ঞানিক নাম সি/২০২৩পিওয়ান। ১৭ সেপ্টেম্বর দেখা যাবে এই ধূমকেতু।

যাঁদের মা–বাবা এত দিন রাত জাগার জন্য বকুনি দিতেন, তাঁরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন কিন্তু। বলা তো যায় না, নতুন কোনো ধূমকেতুর নামকরণও হতে পারে আপনার নামেই। নিশিমুরা ধূমকেতুর গল্পকে যে কেউ এফ মাইনর ব্যান্ডের বিখ্যাত ‘আমি নিশি রাইতের জংলা ফুল’ গানের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারেন। ১৭ সেপ্টেম্বর রোববার উত্তর গোলার্ধের নানান জায়গায় সূর্য ওঠার আগে ধূমকেতুকে ভালোভাবে দেখা যাবে।সূর্য ওঠার আগে শুকতারার পাশেই চোখ রাখলেই দেখা মিলবে ধূমকেতুটির। পৃথিবী থেকে ১২ কোটি ৫০ লাখ কিলোমিটার দূর দিয়ে ‘এই শিখায় আমার নিযুত ত্রিশূল বাশুলি বজ্র-ছড়ি’ কবিতার লাইনের মতো অতিক্রম করবে ধূমকেতুটি।

বরফ আর পাথরের এই বলাকৃতির ধূমকেতুর আসল আকার এখনো অনুমান করতে পারছেন না জ্যোতির্বিদেরা। জাপানের শৌখিন জ্যোতির্বিদ হিদিও নিশিমুরা আগস্ট মাসের এক রাতে এই ধূমকেতুর প্রথম সন্ধান পান। ১২ আগস্ট নিজের ক্যানন ইওএস ৬ডি ক্যামেরার মাধ্যমে ২০০-মিমি এফ/৩ টেলিফোটো লেন্সের মাধ্যমে তিনি ধূমকেতুর ছবি তোলেন। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিমণ্ডলে ধূমকেতু শিকারি নামে আলোচিত। নিশিমুরা তার আবিষ্কৃত তৃতীয় ধূমকেতু। এর আগে ১৯৯৪ সালে দলীয়ভাবে নাকামুরা-নিশিমুরা-ম্যাকহোলজ ধূমকেতু ও ২০২১ সালে আরেকটি ধূমকেতুর খোঁজ পান হিদিও নিশিমুরা।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান