অ্যানিমেশন ভিডিও বানিয়েও আয় করা যায়

প্রথম আলোর পাঠক মোবাশশির নেহাল টেক–বার্তার প্রশ্নোত্তর বিভাগে অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। মোবাশশির নেহালসহ আরও পাঠকের আগ্রহ বিবেচনা করেই এবার টুডি অ্যানিমেশন নিয়ে মূল প্রতিবেদন। লিখেছেন—আফরোজা হোসাইন

অলংকরণ: আপন জোয়ারদার

প্রাথমিক ধারণা

অ্যানিমেশন বলতে প্রথমেই মনে পড়ে মীনা কার্টুনের কথা। কারও আবার মজার কোনো ভিডিও বা সেভেন আপের বিজ্ঞাপনের চরিত্র ফিডো ডিডোর কথা মনে পড়ে যায়। মজার এসব ভিডিওর কোনো চরিত্রই কিন্তু বাস্তবে নেই। কম্পিউটারে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে বানানো। মজার এসব ভিডিও দেখার সময় অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, কীভাবে বানানো হয় ভিডিওগুলো।

কাজের ক্ষেত্র

শখের বশে অ্যানিমেশন শিখেছেন। সবাইকে আনন্দ দিতে ঘরে বসেই বানাচ্ছেন মজার মজার অ্যানিমেশন ভিডিও। চাইলেই কিন্তু অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি করে আয়ও করতে পারেন। বর্তমানে অ্যানিমেশন ভিডিওর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অ্যানিমেটর হিসেবে বিভিন্ন অ্যানিমেশন নির্মাতা বা বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কাজ করতে পারেন। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে না চাইলেও ক্ষতি নেই। অনলাইনে এখন অ্যানিমেশন ভিডিওর জয়জয়কার। ইউটিউব থেকে শুরু করে বিভিন্ন যোগাযোগের সাইটে হরহামেশাই চোখে পড়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যানিমেশন ভিডিও। এসব প্রতিষ্ঠানের হয়ে অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি করে আয় করা যায়। শুধু তা–ই নয়, ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে দেশ–বিদেশের ক্লায়েন্টদের জন্য অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি করে আয়ের সুযোগ তো রয়েছেই। ফ্রিল্যান্সিং কাজে অ্যানিমেশনের চাহিদা অনেক বেশি থাকায় কাজ পেতে বেশি কষ্ট করতে হবে না। তবে আপনি যেখানেই কাজ করেন না কেন, ভালো মানের অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি করা শিখতে হবে। সেই সঙ্গে ক্লায়েন্টদের নির্দেশনা ভালোভাবে বুঝে কাজ করতে হবে। এ জন্য অ্যানিমেশনের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাতেও দক্ষ হতে হবে আপনাকে।

যেভাবে অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি হয়

ছবি আঁকার পাশাপাশি বেশ কিছু সফটওয়্যার দিয়ে সহজেই অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি করা যায়। কিন্তু অ্যানিমেশন ভিডিও কত ভালো হবে, সেটা নির্ভর করছে ছবির মান আর সফটওয়্যার ব্যবহারের পারদর্শিতার ওপর। অ্যানিমেশন সাধারণত তিনটি ধাপে করতে হয়। এগুলো হলো প্রি–প্রোডাকশন, প্রোডাকশন এবং পোস্ট–প্রোডাকশন। প্রি–প্রোডাকশনের জন্য প্রথমেই আপনাকে চরিত্রের নকশা, পেছনের দৃশ্যে, স্টোরিবোর্ড এবং অ্যানিমেটিক (শব্দসহ অ্যানিমেটেড গল্প) তৈরি করতে হবে।

চরিত্র নকশার সময় চরিত্রটির অবয়ব বিভিন্ন দিক থেকে দেখতে কেমন হবে, তা ঠিক করে নিতে হবে। এরপর পেছনের দৃশ্য আঁকাতে হবে। এই দুটি কাজ হয়ে গেলে ভিডিওতে কোন দৃশ্যের পর কোন দৃশ্য দেখা যাবে, সেটার একটা প্রাথমিক ধারণা আঁকতে হবে, যা স্টোরিবোর্ড নামে পরিচিত। এরপর স্টোরিবোর্ড অনুসরণ করে চরিত্র কীভাবে নড়াচড়া করবে, সেটার খসড়া বা অ্যানিমেটিক তৈরি করা হয়। অনেকে একে লাইকা রিলও বলে। প্রি-প্রোডাকশনের জন্য ভালো মানের ছবি আঁকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এবার প্রোডাকশন। প্রোডাকশনের প্রথম ধাপ ক্যারেক্টার লে-আউট। স্টোরিবোর্ডে থাকা ছবিগুলো আঁকা ছবি অনুযায়ী নড়াচড়ার জন্য প্রস্তুত করাকেই বলা হয় লে-আউট। এরপর তৈরি করতে হবে চরিত্রের আশপাশের ছবি। এটাকে বলে ব্যাকগ্রাউন্ড পেইন্টিং। চিন্তার কিছু নেই, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর বা অ্যানিমেট সিসি সফটওয়্যারের সাহায্যে সহজেই লে–আউট ও ব্যাকগ্রাউন্ড পেইন্টিং করা যায়। লে–আউট ও ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরির পরই মূলত অ্যানিমেশনের কাজ শুরু হয়। এ জন্য প্রয়োজন হবে অ্যানিমেট সিসি বা আফটার ইফেক্টস সফটওয়্যার। একেক ধরনের স্টুডিও একেক ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে অ্যানিমেশন করে। অ্যানিমেশন তৈরির পর ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর চরিত্রগুলোর অ্যানিমেশন যুক্ত করাই পোস্ট–প্রোডাকশন কাজ।

অ্যানিমেশন শেখার উপায়

অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরির প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার পর অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, কোথায় শিখব? যদি সিনেমা, টিভি সিরিজ বা বিজ্ঞাপন বানাতে চান, তবে প্রথমেই ভালো ছবি আঁকা শিখতে হবে। তারপর যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানিমেশন বিষয় রয়েছে, সেখানে ব্যাচেলর কোর্সে ভর্তি হতে হবে। তবে সাধারণ মানের অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি শেখার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা অনলাইন কোর্সে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে অবশ্যই যেকোনো অ্যানিমেশন কাজ করা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। কারণ, এ কাজে দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: অ্যানিমেটর ও উদ্যোক্তা