ঘরে বসে ঘুরে দেখুন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ভার্চ্যুয়াল ট্যুর
স্ক্রিনশট

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গিয়ে জানা যাবে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। তবে সশরীর জাদুঘরে যাওয়া হয়তো অনেকের পক্ষে সম্ভব না–ও হতে পারে। প্রযুক্তির এই সময়ে তাঁদেরও সুযোগ রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর দেখার। এ জন্য ইন্টারেনেটে ভার্চ্যুয়াল পরিদর্শনের ব্যবস্থা রেখেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। 

www.liberationwarmuseumbd.org ঠিকানার ওয়েবসাইটে গিয়ে ভার্চ্যুয়াল ট্যুর করে পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখে আসতে পারবেন যে কেউ। এ ছাড়া মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের মাইজিপি অ্যাপেও এই সুবিধা পাবেন ব্যবহারকারীরা। 

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কিউরেটর আমেনা খাতুন বলেন, ‘স্বাধীনতাসংগ্রাম আমাদের কাছে যেমন গৌরবের, তেমনি নৃশংসতার। সারা দেশের মানুষের কাছে এই ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। দেশের চালিকা শক্তি তরুণ সমাজের কাছে সেই ইতিহাস পৌঁছে দিতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। ভার্চ্যুয়াল জাদুঘরের মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই জাদুঘর ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন সবাই। শুধু বাংলাদেশ থেকেই নয়, পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে জাদুঘর দেখা যাবে।’ 

আমেনা খাতুন জানান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ভার্চ্যুয়াল ট্যুরে তরুণদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জীবন্তভাবে তুলে ধরা যাচ্ছে। এমন আয়োজন অনেককে মুক্তিযুদ্ধের কাছে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি প্রযুক্তির সঙ্গে না যাই, তাহলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। আমাদের দেশের গৌরবের ইতিহাস সবার কাছে জানাতে হবে। তরুণদের কাছে জানাতে হবে, তারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবে।’

ভার্চ্যুয়াল ট্যুর যেভাবে

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইটে ঢুকলেই ভার্চ্যুয়াল ট্যুর নামে একটা ট্যাব পাওয়া যাবে। এই ট্যাব দিয়ে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঘুরে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রকল্প সমন্বয়ক (তথ্যপ্রযুক্তি) হাসিবুল হক জানান, ৩ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের ভার্চ্যুয়াল ট্যুরের মাধ্যমে জাদুঘর ঘুরে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। সাধারণভাবে দেখার পাশাপাশি ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর) মাধ্যমে এটি দেখার সুযোগ রয়েছে। 

ভার্চ্যুয়াল ট্যুর শুরু হলেই নির্দেশনা হিসেবে ‘জাদুঘরে প্রবেশ করতে এই আইকনে ক্লিক করুন’। এমন একটি নির্দেশনা বাংলা ও ইংরেজি দুইভাবে দেখা যাবে। ভেতরে প্রবেশ করে তিনটি আলাদা আইকন থাকবে। প্রতিটি আইকনের আলাদা অপশন রয়েছে। ওই আইকনগুলোতে ক্লিক করলে সেই সুবিধাগুলো পাবেন দর্শনার্থী। জাদুঘরের চারটি আলাদা গ্যালারির জন্য চার রঙের পৃথক আইকন রয়েছে। সে আইকনগুলোতে ক্লিক করে আলাদাভাবে চারটি গ্যালারি দেখতে পাবেন ভার্চ্যুয়াল দর্শনার্থীরা। গ্যালারির মধ্যে প্রতিটি বিষয়ে আলাদা আইকন দেওয়া আছে। সেগুলোতে ক্লিক করে বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। 

অনলাইনে জাদুঘর

অনলাইনেও জাদুঘর দেখার সুযোগ রয়েছে। ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়া সেক্টর কমান্ডারদের নাম ও যুদ্ধের ময়দানে তাঁদের সাফল্যের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অপশন হলো আর্কাইভ। আর্কাইভে সবার ওপরে রয়েছে ‘টুডে ৭১’। এখানে ১৯৭১ সালের দিনভিত্তিক উল্লেখযোগ্য ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। ফলে আপনি চাইলেই মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন দিনে ঘটে যাওয়া খুঁটিনাটি তথ্য জানতে পারবেন। রয়েছে ডকুমেন্টস বিভাগ। এখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। দেশের বিভিন্ন জেলার যুদ্ধের ইতিহাসের পাশাপাশি গণহত্যা ও নৃশংসতার তথ্যও জানার সুযোগ মিলবে। ‘ফটো আর্কাইভ’ অপশনে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ ছবি।

ফেসবুকে:

ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুকেও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সরব উপস্থিতি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের https://bit.ly/3h9mss7 পেজে হালনাগাদ সব তথ্যই জানা যাবে।

এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দুটো গাড়ি রয়েছে। যে গাড়ি দুটো ৬৪ জেলায় গিয়ে মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানায়। হাসিবুল হক বলেন, এরই মধ্যে গাড়ি দুটো সারা দেশে দুবার ভ্রমণ করেছে। ভবিষ্যতেও এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।