পাঁচ বছরে মোটরসাইকেলশিল্পে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে

হিরো বাংলাদেশে জনপ্রিয় এক মোটরবাইক। বাংলাদেশের সার্বিক বাজার ও হিরোর অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন হিরো বাংলাদেশ লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) বিজয় কুমার মন্ডল

প্রথম আলো:

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মোটর বাইকের বাজারের পরিস্থিতি কেমন ছিল এবং কীভাবে এটি বিকশিত হয়েছে?

বিজয় কুমার মন্ডল: গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মোটরসাইকেলশিল্পে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ সরকার আমদানিনির্ভরতা হ্রাস এবং স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহিত করার জন্য একাধিক নীতি পরিবর্তন করেছে। এর ফলে কারখানাভিত্তিক উৎপাদন, ভ্যালু অ্যাডিশন ও লোকাল সাপ্লাই চেইন গঠনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহ পাওয়া গেছে। হিরো বাংলাদেশ এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থানীয় উৎপাদন ও দক্ষতা উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে।

প্রথম আলো:

বর্তমানে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারের আকার কত এবং হিরো বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার কতটুকু?

বিজয় কুমার মন্ডল: বর্তমানে বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজার উল্লেখযোগ্যভাবে বিস্তৃত হয়েছে। ২০২৪ সালে মোট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪ দশমিক ২৫ লাখ ইউনিট, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করে যে মোটরসাইকেল এখন কেবল ব্যক্তিগত যাতায়াতের একটি মাধ্যম নয়; বরং কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা কার্যক্রম ও দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।

হিরো হলো বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাসের আরেক নাম। হিরো বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালে নিলয় মোটরস লিমিটেডের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমরা প্রায় ১০ লাখ ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি করেছি, যা ব্র্যান্ড হিসেবে হিরোর শক্ত অবস্থান ও গ্রাহকের ভালোবাসার প্রতিফলন।

প্রথম আলো:

ভবিষ্যতে ব্যবসা সম্প্রসারণ নিয়ে হিরো বাংলাদেশের কী পরিকল্পনা রয়েছে?

বিজয় কুমার মন্ডল: হিরো বাংলাদেশ ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধিকে টেকসই এবং গ্রাহককেন্দ্রিক করতে একটি সুপরিকল্পিত কৌশলের ভিত্তিতে এগোচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, শুধু পণ্য বিক্রিই নয়, একটি ব্র্যান্ডকে টেকসইভাবে গড়ে তুলতে হলে তা গ্রাহকের আস্থা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা দেশের প্রতিটি শোরুমকে আধুনিক, প্রযুক্তিসম্পন্ন ও গ্রাহকবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি, যাতে একজন ক্রেতা হিরোতে প্রবেশ করার মুহূর্ত থেকেই একটি ভিন্নমাত্রার অভিজ্ঞতা পান।

প্রথম আলো:

হিরো কীভাবে উদ্ভাবনী প্রযুক্তির চর্চা করে?

বিজয় কুমার মন্ডল: হিরো মটোকর্প উদ্ভাবনকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করে। আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাহকের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করা এবং তাঁদের জীবনযাত্রা সহজতর করে তোলা। আমাদের সাম্প্রতিক মডেলগুলোতে যুক্ত করা হয়েছে ‘আইথ্রিএস’ প্রযুক্তি, স্মার্ট ডিজিটাল কনসোল, এলইডি হেডল্যাম্প, ক্লাস-লিডিং ৪ভি ইঞ্জিন, ডুয়েল/ সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস, মনোশক সাসপেনশন ও স্মার্ট কানেকটিভিটি–সুবিধা।

এসব উদ্ভাবনের ভিত্তি তৈরি হয়েছে আমাদের দুটি বিশ্বমানের গবেষণা ও উন্নয়নকেন্দ্রের মাধ্যমে—ভারতের সেন্টার অব ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিআইটি) এবং জার্মানির একটি আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি হাব। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি মডেল যেন শুধু প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকে তা নয়; বরং বাংলাদেশি রাইডারদের বাস্তব চাহিদার সঙ্গেও মানানসই হয়। সেই ধারাবাহিকতায় হিরো বাংলাদেশে একমাত্র ব্র্যান্ড, যারা গ্রাহকদের জন্য ৫ বছরের ওয়ারেন্টি দিচ্ছে।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের মোটরসাইকেল শিল্পের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?

বিজয় কুমার মন্ডল: হিরো বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, দেশের মোটরসাইকেলশিল্প এখনো বৃদ্ধির পর্যায়ে রয়েছে এবং আগামী তিন বছরে এটি আরও দ্রুতগতিতে বিকশিত হবে। তবে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন কিছু কৌশলগত ও নীতিগত সহায়তা এবং বাজারের কাঠামোগত উন্নয়ন।

প্রথমত, মোটরসাইকেল কেনার জন্য সহজ ফাইন্যান্সিং সুবিধা, যেমন মাইক্রোফাইন্যান্স এবং ইএমআই স্কিম চালু করা অত্যন্ত জরুরি। এতে এন্ট্রি লেভেল গ্রাহকেরা সহজে বাইক ক্রয় করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, দেশে যন্ত্রাংশের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য একটি সুসংগঠিত ভেন্ডর ডেভেলপমেন্ট পলিসি প্রয়োজন। তৃতীয়ত, সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো এবং রোড সেফটি–সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ আরও বিস্তৃত করা জরুরি, যাতে বাইক কেনা আরও গ্রহণযোগ্য ও নিরাপদ হয়। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের টু-হুইলার বাজার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নত দেশের মতোই পরিণত হবে।