সেমিকন্ডাক্টরশিল্পের উন্নয়নে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাকেন্দ্র চালু
আজ সোমবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে সেন্টার অব রিসার্চ এক্সিলেন্স ইন সেমিকন্ডাক্টর টেকনোলজি (ক্রেস্ট)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হয় সিলিকন রিভার ইকোসিস্টেমের আয়োজনে, যা বাংলাদেশের বায়োটেক, ইলেকট্রনিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও রোবোটিকসকে একীভূত করার জাতীয় কাঠামো। অনুষ্ঠানে সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প খাত, সশস্ত্র বাহিনী এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি প্রবাসী বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআইএ) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তৃতা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ ফেরহাত আনোয়ার। তিনি আধুনিক গবেষণার বিকাশ, উদ্ভাবনভিত্তিক মানবসম্পদ গঠন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে জাতীয় অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। আয়োজক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উদীয়মান সেমিকন্ডাক্টর ও ডিপ-টেক ইকোসিস্টেমে একটি গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন। বিএসআইএর সভাপতি ও নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার মূল বক্তব্য দেন। তিনি দেশীয় সক্ষমতা উন্নয়ন, শিল্প-একাডেমিয়া সহযোগিতা ও রপ্তানিমুখী সেমিকন্ডাক্টরশিল্প গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর লিমিটেড ক্রেস্টের প্রধান শিল্প সহযোগী হিসেবে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে।
ক্রেস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি জাতীয় গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে, যার মূল লক্ষ্য উন্নত সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি, যার মধ্যে রয়েছে এআইকেন্দ্রিক চিপ ডিজাইন, ভিএলএসআই সিস্টেম, রোবোটিকস, উপকরণ বিজ্ঞান, প্যাকেজিং ও টেস্টিং ও ভবিষ্যৎ হার্ডওয়্যার প্ল্যাটফর্ম।
অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন গ্লোবালফাউন্ড্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুব রাশেদ। তিনি সমন্বিত জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি, শক্তিশালী বিশ্ববিদ্যালয়-শিল্প সংযোগ এবং গবেষণা মানবসম্পদে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁর মতে, বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর–প্রবণতা ও পরিবর্তনশীল সাপ্লাই চেইনের বাস্তবতার সঙ্গে ক্রেস্ট একটি সময়োপযোগী ও কৌশলগতভাবে সঠিক উদ্যোগ।
অনুষ্ঠানের প্রথম ক্রেস্ট ফেলোশিপ ঘোষণা করা হয়। এ ফেলোশিপের আওতায় আটজন স্নাতকোত্তর ও দুজন স্নাতক শিক্ষার্থী সারা বছরব্যাপী নয়টি উন্নত সেমিকন্ডাক্টর গবেষণা বিষয়ে নিজ নিজ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে কাজ করার সুযোগ পাবেন। ক্রেস্ট ফেলোরা হলেন মো. শাজোল আল মামুন (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়—বুয়েট), আকিফ হামিদ (ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি), কে এম মেহেদী হাসান (ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি), মো. শরীফ উদ্দিন ( ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক), ইশমাম হোসেন (নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি), প্রিয়াঙ্কা দাস (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়), জুনায়েদ জলিল (বুয়েট), মো. খালিদ হোসেন (বুয়েট), আফসানা আনজুম আখি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং শেখ তারিফুল ইসলাম (বুয়েট)।
অনুষ্ঠানে বিইএআর সামিট প্রতিযোগিতার বিজয়ীদেরও সম্মাননা প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও সৃজনশীলতাকে স্বীকৃতি জানিয়ে বিএসআইএ বিজয়ীদের পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেয়।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় সেমিকন্ডাক্টর ভার্চ্যুয়াল হাব-বুস্ট মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) নেতৃত্বে উন্নয়ন করা হবে। এমআইএসটির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল নাসিম পারভেজ একটি ভিডিও বার্তায় কাঠামোবদ্ধ জনবল উন্নয়ন, জাতীয় প্রশিক্ষণ অবকাঠামো এবং বাস্তবায়নমুখী কার্যক্রমে এমআইএসটির ভূমিকা তুলে ধরেন।
সিলিকন রিভার ভিশন ও ক্রেস্ট উদ্যোগের রূপকার হলেন যুক্তরাষ্ট্রের পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মুস্তাফা হুসাইন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রভাবশালী ধারণা ও বাস্তবায়ন, বৈশ্বিক আস্থা এবং বিশ্বমানের প্রযুক্তি ব্র্যান্ড গড়ে তোলার সক্ষমতা আছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন উপমা কবিরের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে শেষ হয়। তিনি ক্রেস্ট বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প খাত, সরকারি সংস্থা এবং প্রবাসী বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার স্বীকৃতি জানান। একই সঙ্গে তিনি পরবর্তী প্রজন্মের গবেষক ও উদ্ভাবক গড়ে তুলতে ধারাবাহিক সহযোগিতা, মেন্টরশিপ এবং প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গীকারের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
উদ্বোধনী পর্বের শেষে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ‘পেটেন্ট আইন ও মেধাস্বত্ব (আইপি) সুরক্ষা: জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে উদ্ভাবনের সুরক্ষা’ শীর্ষক এ আলোচনায় সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক মো. গোলাম সামদানী ফকির। প্যানেলিস্ট হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের পরিচালক (শিল্প-নকশা) অশোক কুমার রায়, লন্ডন চার্চিল কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব এসেক্সের অধ্যাপক দিলারা আফরোজ খান, মেধাস্বত্ব (আইপি) আইনবিশেষজ্ঞ তাসলিমা জাহান। বক্তারা সেমিকন্ডাক্টর খাতের উদ্ভাবনের মেধাস্বত্ব (আইপি) সুরক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার যৌথ উদ্যোগে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেন।