ক্লাউড সেবা কী? কেন ব্যবহার করবেন

এখন ইন্টারনেটে ক্লাউডের সেবা প্রায় প্রত্যেকেই ব্যবহার করেন

ক্লাউড সেবা কী

ক্লাউড হলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওয়েব সার্ভারে তথ্য ও প্রোগ্রাম সংরক্ষণ। অনলাইনে থাকা এসব ফাইল যখন-তখন ইচ্ছেমতো খোলার সুবিধা থাকে। নিজের হার্ডডিস্ক ড্রাইভে ফাইল জমা রাখলে সেটা হবে স্থানীয় সংরক্ষণ। ঠিক একই কাজে ড্রপবক্স বা গুগল ড্রাইভের মতো অনলাইনের কোনো সুবিধা ব্যবহার করলে তা হবে ক্লাউডভিত্তিক সংরক্ষণ।

যাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাঁরা কোনো না কোনোভাবে ক্লাউডও ব্যবহার করছেন। জেনে বা না জেনে। যাঁরা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই একটা গুগল অ্যাকাউন্ট আছে, যেখানে তাঁদের ই-মেইল, ছবি, ভিডিও সবকিছু থাকে। বেশির ভাগ মানুষ বিনা মূল্যের ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহার করছেন। যাঁরা বড় বা বেশি আকারে তথ্য সংরক্ষণ করতে চান, তাঁরা পয়সা গুনে ক্লাউডসেবা ব্যবহার করেন। যে যেভাবেই করুন না কেন, সবই কিন্তু ক্লাউডসেবা। আপনি যে ফেসবুক ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও দিচ্ছেন, সেগুলোও কোনো না কোনো ক্লাউড সার্ভারে জমা হচ্ছে। কাজেই আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছি, তারা কোনো না কোনোভাবে ক্লাউডসেবা ব্যবহার করছি। অর্থাৎ ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের সুবিধা নিচ্ছি।

ক্লাউডসেবার সুবিধা

যেকোনো সময় সার্ভার বা হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ জন্য ব্যাকআপসহ অনেক কিছু করতে হয়। বেশির ভাগ ছোট প্রতিষ্ঠানই এ খরচ শুরুতে করতে পারে না। এ জন্য তারা মাঝেমধ্যে বিপদে পড়ে। এ ক্ষেত্রে তারা যদি ক্লাউডসেবা ব্যবহার করে, তাহলে তারা একটা নিরাপদ জায়গায় বিভিন্ন তথ্য রাখতে পারবে। ক্লাউডে তথ্যগুলো নিরাপদে থাকে, রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও কোনো চিন্তা করতে হয় না। ফলে ছোট ও মাঝারি অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য এ সেবা বেশ সহায়ক।

আমাদের দেশে কয়েক হাজার রপ্তানি পোশাক কারখানা রয়েছে। তারা কিন্তু প্রচুর ডেটাভিত্তিক কাজ করে এবং মাঝেমধ্যে নানা সমস্যার কারণে তাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের কাছে যেতে হয়। পোশাক কারখানাগুলো যদি ভালো ক্লাউডসেবা ব্যবহার করে, তাহলে তাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। একই সঙ্গে অনেক বেশি নিরাপদ থাকবে ডেটাগুলো। এখানে একটা কথা বলে রাখি, সব সেবায়ই তো একটু ঝুঁকি থাকে। তবে ক্লাউডসেবার ঝুঁকি কমই বলা যায়।

ধরুন একজন নতুন একটা ব্যবসা শুরু করতে চান। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসা বা ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করতে চান। ব্যবসার তথ্য সংরক্ষণের জন্য তাঁর অবকাঠামো তৈরি করতে যে খরচ হবে, তা ক্লাউডের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু ক্লাউডে অল্প খরচে এই সেবা পাওয়া যায়। নতুন উদ্যোক্তারা ক্লাউডসেবা নিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারেন কোনো চিন্তা ছাড়াই।

তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে একাধিক সার্ভারের প্রয়োজন হয়। এসব সার্ভার বিভিন্ন বিভাগের জন্য আলাদা সেবা দিয়ে থাকে। প্রতিটির জন্য আলাদা সফটওয়্যার থাকে। এসব সফটওয়্যারকে বিভিন্ন সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত করতে হয়। অনেক সময় সার্ভারগুলোতে বিভিন্ন কারণে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। সার্ভার নষ্টও হয়ে যেতে পারে। তখন সেগুলো থেকে কোনো কাজ পাওয়া সম্ভব নয়, যতক্ষণ না সেগুলো ত্রুটিমুক্ত হয়। এখন বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সব সফটওয়্যার ক্লাউডে রাখছে। এর ফলে কোনো কিছু নষ্ট হওয়ার আশাঙ্কা কমে যাচ্ছে। ফলে সার্ভার ক্র্যাশ করলেও ডেটা নষ্ট হয় না। কারণ, ক্লাউডের এসব ডেটা নানা জায়গায় রাখার সুযোগ রয়েছে।

ক্লাউডসেবায় নির্ভরশীলতা বাড়ছে

দিন দিন ক্লাউডের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ক্লাউডের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। ধরা যাক, একটা অফিস বা বাসায় সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা আছে। এই সিসি ক্যামেরা ক্লাউডে থাকলে আপনি কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বসেও এর ছবি দেখতে পাবেন। একই সঙ্গে এর অসীম (আনলিমিটেড) ডেটা আপনি জমা রাখতে পারবেন। ফলে সিসি ক্যামেরার কার্যকারিতা বেড়ে গেল। একই সঙ্গে তথ্যের স্থায়িত্বও অনেক বাড়বে।

ক্লাউডে কোনো কিছু রাখলে তার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক কম। তাই নিজের সার্ভারে রাখার চেয়ে ক্লাউডে রাখা খরচের দিক দিয়ে তুলনামূলক অনেক কম। কারিগরি দিক নিয়েও আপনি চিন্তামুক্ত থাকতে পারছেন ক্লাউডে কোনো তথ্য রাখলে। এ জন্য ক্লাউডের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। কারণ, খরচ অনেক কম।

ক্লাউডের ঝুঁকি

ক্লাউডের কিছু ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ক্লাউডের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ইন্টারনেটের গতি। গতি বেশি না থাকলে ক্লাউডে নির্ভর করা যাবে না। মানুষের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তাও কাজ করে। আপনার তথ্যের দায়িত্ব আপনি আরেকজনকে দিচ্ছেন। এখানে যে তথ্য ফাঁস হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে হয়তো কারও কোনো আগ্রহ নেই। রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক অনেক তথ্য আছে, যা গুরুত্বপূর্ণ। েকউই চাইবে না, এগুলো অন্য কারও কাছে চলে যাক। সেই সব ডেটা নিজের কাছেই রাখা উচিত। কিছু ডেটা কখনোই পাবলিক ক্লাউডে রাখা উচিত নয়। ধরুন, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য। এটা কখনোই অন্যের কাছে রাখা উচিত নয়।

[অনুলিখিত]

লেখক: এশিয়া–প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের (এপনিক) কার্যনির্বাহী সদস্য এবং ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা (সিটিও)