দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্ট তৈরি করবেন যেভাবে

ক্লায়েন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারলে নিয়মিত কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।ফাইল ছবি
ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এ মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরু কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার থেকে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে’। আজ থাকছে ২২তম পর্ব।

পর্ব-২২

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে নিয়মিত আয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে চাইলে দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্ট পাওয়া যায় না। দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে একবার কাজ দেওয়া ক্লায়েন্টকে দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্টে পরিণত করা সম্ভব।

মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন ধরনের ক্লায়েন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ছোট ক্লায়েন্টের সংখ্যাই বেশি। এসব ক্লায়েন্ট সাধারণত ছোট আকারের একটি বা দুটি কাজ করিয়ে মার্কেটপ্লেস থেকে চলে যান। পরে কাজ করানোর প্রয়োজন হলে আবার মার্কেটপ্লেসে ফিরে আসেন। এরপরই রয়েছে এজেন্সি ক্লায়েন্ট। এসব ক্লায়েন্টের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থাকলেও খরচ কমানোর জন্য তাঁরা ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে কাজ করিয়ে থাকেন। উভয় ক্লায়েন্টকেই দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্টে পরিণত করার জন্য আপনার নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সাধারণ ক্লায়েন্টদের দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্টে পরিণত করার জন্য করণীয় বিভিন্ন দিক দেখে নেওয়া যাক।

সবার আগে ক্লায়েন্টের নির্দেশমতো মানসম্পন্নভাবে কাজ শেষ করতে হবে। কেননা, আপনার কাজের মান ভালো হলেই কেবল ক্লায়েন্টরা পরে আপনাকে কাজ দেবে। এ ছাড়াও সময়মতো কাজ শেষ করার পাশাপাশি কাজের হালনাগাদ তথ্য জানানো, মিটিংয়ে অংশগ্রহণও ক্লায়েন্টদের আস্থা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। একই সঙ্গে আপনার কথা এবং কাজের মধ্যে মিল থাকতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে ক্লায়েন্টের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করার পাশাপাশি নিজের দক্ষতার বিভিন্ন দিক ক্লায়েন্টকে জানাতে হবে। অর্থাৎ, আপনি হয়তো ওয়েব ডিজাইন কাজের পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনেও (এসইও) দক্ষ। ক্লায়েন্টের ওয়েব ডিজাইন কাজ করার সময় তাকে জানিয়ে রাখুন বিষয়টি। ফলে পরবর্তী সময় সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কাজের প্রয়োজন হলে সেই ক্লায়েন্ট সবার আগে আপনার সঙ্গে আলোচনা করবে। ফলে নিয়মিত কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

প্রতিশ্রুতির চেয়েও ভালোভাবে কাজ শেষ করে ক্লায়েন্টকে অভিভূত করতে হবে। এর মাধ্যমে ক্লায়েন্টরা ভবিষ্যতে আপনাকে দিয়ে কাজ করাতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
ছোট ক্লায়েন্টদের ব্যবসার পরিধি ছোট হওয়ায় তাদের বেশির ভাগেরই নিয়মিত কাজ করানোর প্রয়োজন হয় না। আর তাই তাদের দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্টে পরিণত করলেও নিয়মিত খুব বেশি কাজ পাওয়া যায় না। ফলে আয়ের পরিমাণও কম হয়। আয়ের পরিমাণ কম হলেও আপনি যদি ছোট ২০টি ক্লায়েন্টকে দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্টে পরিণত করতে পারেন। তবে দেখবেন প্রতি মাসেই কোনো না কোনো ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দিচ্ছে। ফলে নিয়মিত আয় করা সম্ভব হবে।

এজেন্সি ক্লায়েন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারলে নিয়মিত কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি থাকে। কারণ, এ ধরনের ক্লায়েন্টের কাছে কিছু না কিছু কাজ সব সময় থাকে। ফলে তাদের কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করলেই পরবর্তী সময়ে তারা আপনাকে আবার কাজ দেবে। তবে একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এজেন্সি ক্লায়েন্টরা সাধারণত সময়ের বিষয়ে খুবই সচেতন। কারণ, তারা একই সঙ্গে একাধিক কাজ ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে করিয়ে অফিসে জমা দেন। এ ছাড়া এজেন্সি ক্লায়েন্টরা সাধারণত নিজেদের তৈরি পদ্ধতি ও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করাতে পছন্দ করে। আপনি তাদের পদ্ধতি ও নীতিমালা মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভালো মানের কাজ করা শিখে গেলে দ্রুত এজেন্সি ক্লায়েন্টদের দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্টে পরিণত করা যাবে।

এজেন্সি ক্লায়েন্টদের ক্ষেত্রে আপনার কাজের পরিমাণ বেশি হলেও ছোট ক্লায়েন্টের তুলনায় কাজের পারিশ্রমিক একটু কম হতে পারে। অনেকটা পাইকারি আর খুচরা বাজারের মতো। পারিশ্রমিক কিছুটা কম হলেও এজেন্সি ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে নিয়মিত কাজ পাওয়া যায়। ফলে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে সফল হতে হলে একটি বা দুটি এজেন্সি ক্লায়েন্ট থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার

পরের পর্ব: কাজের অর্ডার বেশি হলে করণীয়