খবর প্রকাশকদের সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ ফেসবুক, নতুন চেষ্টা চলছে

ফেসবুকে মানুষ খবর পেতে এবং সেখান থেকে পড়তে পছন্দ করে। সংবাদ প্রকাশকেরা তাই পাঠকের কাছে ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে খবর ছড়িয়ে দেন। তাঁদের কনটেন্টগুলো ফেসবুকে ব্যবহারকারীকে টেনে আনে। এতে ফেসবুক সমৃদ্ধ হয়। ফেসবুকের আয় বাড়ে, বিজ্ঞাপন বাড়ে। কিন্তু খবর প্রকাশকেরা বঞ্চিত হন প্রত্যাশিত আয় থেকে। তাঁদের কাছ থেকে বিজ্ঞাপনদাতারা মুখ ফিরিয়ে নেন। কিন্তু এত দিনেও প্রকাশকদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসা মডেল তৈরি করতে পারেনি ফেসবুক। এর আগে বেশ কয়েকবার কয়েকটি মডেল নিয়ে চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।

ফেসবুক মানেই নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। খবর প্রকাশকদের নিয়েও চলছে নানা পরীক্ষা। এর আগে খবর প্রকাশকদের অর্থ আয়ের সুযোগ দিয়ে ফেসবুক চালু করে ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল নামের একটি সেবা। ফেসবুকে খবর প্রকাশ করে প্রকাশকদের জন্য অর্থ আয়ের একটি সুবিধা এটি। কিন্তু এ প্রচেষ্টা প্রকাশকদের খুশি করতে পারেনি। বলা চলে, এটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা। এরপর ফেসবুক লাইভ ভিডিও নিয়ে একটি প্রচেষ্টা চালায়। ফেসবুকে প্রচুর লাইভ ভিডিও আনার প্রচেষ্টা হিসেবে প্রকাশকদের অর্থ দেওয়ার কথা জানায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ প্রচেষ্টাও খুব বেশি সফলতার মুখ দেখেনি। ঠিকমতো অর্থ না পেয়ে অনেকেই লাইভ ভিডিও করা বাদ দিয়েছেন।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট রিকোড বলছে, ফেসবুক আবার নতুন উদ্যমে আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি ফেসবুকের ওয়াচ নামের ভিডিও বিভাগে প্রকাশকদের জন্য খবরের নানা অনুষ্ঠান প্রচারের সুবিধা চালু করার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নতুন এ ব্যবসা পরিকল্পনার সঙ্গে আগে লাইভ ভিডিও প্রকাশের নিয়মকানুনের মিল রয়েছে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে যে মিডিয়া কোম্পানি বা প্রকাশক ফেসবুকে খবরের অনুষ্ঠান প্রচার করবে, ফেসবুক তাদের অর্থ পরিশোধ করবে। এর বাইরে অনুষ্ঠানের মাঝে বিরতিতে বিজ্ঞাপন প্রচার করে বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকবে।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুক যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবে, তাদের অনুষ্ঠানগুলো ফেসবুকের অর্থায়নে তৈরি হবে এবং শুধু ফেসবুকে সম্প্রচার হবে। এখন থেকে এবিসি, সিএনএন ও ফক্স নিউজের মতো সংবাদমাধ্যমগুলোর সংবাদমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ফেসবুকে দেখা যাবে। ফেসবুকের নিজস্ব ‘ভিডিও সার্ভিস’-এর অধীনে এই অনুষ্ঠানগুলো ফেসবুকে সম্প্রচার হবে। ইতিমধ্যে ওই সব সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ভিডিও সম্প্রচার নিয়ে একটি অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

মূলত গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ওঠার পর থেকে ফেসবুক তাদের ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। আর এই উদ্যোগ সেই প্রচেষ্টারই, যা সংবাদশিল্পের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের উন্নয়ন করবে বলেই তাদের বিশ্বাস।

ফেসবুকের গ্লোবাল নিউজ পার্টনারশিপের প্রধান ক্যাম্পবেল ব্রাউন বলেন, ‘আমরা ছয় মাস ধরে সংখ্যার চেয়ে গুণগত মানের ওপর বেশি জোর দিয়েছি। এখন ফেসবুকে মানসম্মত সংবাদের সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি।’

ফেসবুকের প্রথম দিকের শোগুলো অনেকটা ব্রডকাস্ট টেলিভিশন শোয়ের আদলে তৈরি হবে। যেখানে এবিসি, সিএনএন ও ফক্স নিউজের খ্যাতনামা সাংবাদিকদেরই উপস্থাপক হিসেবে দেখা যাবে। এ ছাড়া এটিটিএন, মাইক ও আলাবামার কিছু শোও এতে দেখানো হবে। ব্রাউন সিএনএনকে জানান, ফেসবুক অন্যান্য সংবাদ সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ মাসের শেষ দিকে আরও ঘোষণা আসতে পারে।

রিকোড বলছে, ফেসবুকের অন্যান্য ‘ওয়াচ’ অনুষ্ঠানগুলোর জন্য একই রকম পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এটি ঠিক কীভাবে কাজ করবে, তা এখনো স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ফেসবুকের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে চুক্তিবদ্ধ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানকে বেশি অর্থ দেওয়া হবে। এর মধ্যে সিএনএনের অ্যান্ডারসন কুপারসের নিয়মিত অনুষ্ঠান, ফক্স নিউজের সেপ স্মিথের অনুষ্ঠান, এবিসি নিউজ, ইউনিভিশন ও এমআইসির অনুষ্ঠান রয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, আগের প্রচেষ্টাগুলো যেখানে ব্যর্থ, সেখানে এ ধরনের অনুষ্ঠানের সফল হওয়া কতটুকু সম্ভব?

সমস্যা হচ্ছে—ফেসবুকের জন্য কোনো অনুষ্ঠান বা ভিডিও তৈরি করতে যে প্রচেষ্টা চালানো হয়, সে তুলনায় প্রকাশকদের আয় সামান্য। ফেসবুকের জন্য যেসব প্রকাশক কাজ করবেন, তাঁদের জন্য পকেট থেকে কোনো অর্থ খরচ করতে নারাজ ফেসবুক। প্রকাশকদের নিজের উদ্যোগে তাঁদের ভিডিও বা অনুষ্ঠানের জন্য দর্শক ধরতে হবে। এসব অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন থেকে অর্থ আয় করতে হলে এর বিকল্প নেই। এর বাইরে অনুষ্ঠান তৈরির খরচ তো আছেই।

একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ফেসবুক কিন্তু ইউটিউব বা নেটফ্লিক্সের মতো ভিডিওর গন্তব্য বলে পরিচিত নয়। তাই ফেসবুক ভিডিওতে দর্শক টানা কঠিন। ফেসবুক অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া খবর প্রকাশকেরাও এর সঙ্গে তাল মেলাতে মরিয়া বলে ফেসবুক আরও একটি পরিকল্পনা নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। এ উদ্যোগ সফল হলে ফেসবুকের জন্য ভালো হবে। কিন্তু খবর প্রকাশকেরা এতে খুশি হন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।