আপনার পণ্যের জন্য ফেসবুক পেজ

কিছুদিন আগে ফেসবুকে মেসেজ দেখতে গিয়ে একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল। বিজ্ঞাপনটি একটা ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া। সেই পেজের মালিক একজন নারী, যিনি কেক বানানো শেখান এবং কেকের অর্ডার নেন। বিজ্ঞাপনটি ছিল কেক বানানো–শেখানো নিয়ে। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে সেখানে লিখেছিলেন যে কী কী শেখাবেন, কত দিনে শেখাবেন, কোথায় শেখাবেন, কোর্স ফি কত এবং কোর্স ফি কোন নম্বরে বিকাশ করে পাঠাতে হবে। বিজ্ঞাপন দেখামাত্রই আমার মনে হলো যে এটার সত্যতা আছে কি না? এতগুলো টাকা বিকাশ করে যদি দেখি যে কোথাও এমন কোনো কিছু আসলে করাচ্ছে না, তখন কী হবে? এসব ভাবনা থেকে বিজ্ঞাপনের পেজটিতে ঢুকি এবং দেখি সেখানে কী আছে। দেখলাম কয়েক হাজার লাইক, কমেন্টস, শেয়ার এবং অনেক সুন্দর সুন্দর কেকের ছবি। কমেন্টস ও রিভিউ পড়ে বুঝলাম যে এর সত্যতা আছে। তারপর বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে ফোন করে বিস্তারিত জানলাম। সবকিছু ঠিক মনে হলো তাই কোর্সে ভর্তি হয়ে কেক বানানো শিখে ফেললাম!


এই বিজ্ঞাপন যিনি দিয়েছিলেন তিনি দুই সন্তানের মা। শ্বশুর–শাশুড়ি, ননদ, স্বামী, সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। বাসাতেই কোর্স করান এবং কেক বানানোর বিষয়টিতে তিনি অনেক অভিজ্ঞ ও দক্ষ। তাঁকে দেখে আমার মনে হলো তিনি আমাদেরই একজন।

এই নারীর মতো আপনি, আমি—আমাদের অনেকেই হয়ত কিছু না কিছু বিষয়ে অভিজ্ঞ। কেউ হয়ত অনেক ভালো রান্না করেন, ভালো পোশাক বানাতে পারেন, মজার মজার মিষ্টান্ন বানাতে পারেন, কেউ হয়তো ব্লক-বাটিকের কাজ জানেন। যদি কাজটায় দক্ষ হন আর তা কাউকে শিখিয়ে উপার্জন করতে চান তবে ফেসবুকের মাধ্যমে সেটা করা সম্ভব। অনেকেই এখন এভাবে উপার্জন করছেন। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করছেন পোশাক, গয়না, গেরস্থালি সামগ্রী, বাসায় বানানো খাবার ইত্যাদি।

একসময় নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে ভাবতে হতো দোকান নিয়ে। ফেসবুকের কল্যাণে সেটা এখন ভাববার প্রয়োজন পড়ে না। ফেসবুকের মাধ্যমে আপনি খুলতে পারেন আপনার পণ্যের পেজ বা দোকান।'

কীভাবে?
কম–বেশি সবারই ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে। আপনার অ্যাকাউন্টের Home–এ ক্লিক করলে যে পেজ খুলবে তার বাঁদিকে নিচে Create লেখাটা দেখবেন। সেখানে Page নির্বাচন করুন। এরপর Business or Brand নির্বাচন করতে হবে। এবার আপনার পেজের একটা নাম দিন, যেটা আপনার ব্যবসার নাম। পেজটি কোন ক্যাটাগরির তা নির্বাচন করুন। যেমন: Cloth and Brand, Food, Apparel, Toys ইত্যাদি। আপনার কাজ বা ব্যবসার সঙ্গে যায় এমন একটি ছবি প্রোফাইল ছবি হিসেবে যুক্ত করুন। অনেকে ব্যবসার জন্য লোগো বানিয়ে নেন, সেটিকে প্রোফাইল ছবি হিসেবে দিতে পারেন। পণ্যের ছবি কভার ফটো হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। হয়ে গেল প্রাথমিক কাজ। পেজ তৈরি হওয়ার পর এটাকে কার্যকর ও সচল একটি পেজে পরিণত করতে হবে। পেজের Description–এ আপনার ব্যবসার সংক্ষিপ্ত বিবরণ যুক্ত করুন। এই পেজে পণ্যের ছবি পোস্ট করুন নিয়মিত। কেউ কোনো কমেন্ট করলে যত দ্রুত সম্ভব উত্তর দিন। মেসেজ পাঠালে সেটারও দ্রুত উত্তর দিন। আপনার পরিচিতদের সঙ্গে পেজটি শেয়ার করুন যাতে পেজে লাইকের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। মোট কথা, এটি যে বিশ্বাসযোগ্য একটি ব্যবসা, সেটি আপনাকে সবার কাছে তুলে ধরতে হবে।

যা করবেন, যা করবেন না
কোনো অর্ডার পেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেটি আপনার ক্রেতার কাছে যাতে পৌঁছায় সে ব্যবস্থা করুন। ত্রুটিপূর্ণ বা নিম্নমানের পণ্য কাউকে দেবেন না। তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যেই আপনার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ যাঁরা ত্রুটিপূর্ণ পণ্য পাবেন বা ঠকবেন তাঁরা সেটা ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার পেজের নাম লিংকসহ সবাইকেই জানিয়ে দেবেন। পরবর্তী সময়ে কেউ আপনার পেজ থেকে পণ্য কিনবেন না। তাই সততার সঙ্গে ব্যবসা চালাতে হবে।

আরকেটা বিষয় হলো পেশাদারি মনোভাব। বিভিন্ন ক্রেতা নানা রকমের মন্তব্য করবেন। কিছু মন্তব্য আপনার মনমতো হবে না, তাতে উত্তেজিত হয়ে উত্তর দেবেন না। ক্রেতাকে কোনো পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে বা নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় লাগলে ক্রেতাকে শুরুতেই তা বুঝিয়ে বলুন।

সঠিক যোগাযোগ অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। পণ্য দেওয়ার পর ক্রেতা বা গ্রাহককে অনুরোধ করুন আপনার পেজে তাঁর মতামত জানাতে। এই মতামত বা ফিডব্যাক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী সময়ে কেউ আপনার পেজ থেকে পণ্য কিনতে গেলে এসব মতামত দেখেই আপনার পণ্য কেনার উৎসাহ পাবেন। যত ভালো ফিডব্যাক পাবেন, তত বেশি সম্ভাবনা বাড়বে আপনার পণ্য বিক্রির।

প্রচারেই প্রসার
পেজটিকে আরও পরিচিত করতে আপনি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের তুলনায় বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের ফেসবুকের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখাতে খরচ অনেক কম পড়ে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো এ কাজটি করে দিতে পারবে। ইন্টারন্যাশনাল ভিসা বা মাস্টার কার্ড থাকলে আপনি নিজেও বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন আপনার ফেসবুক অ্যাড আকাউন্টের মাধ্যমে।

সবশেষে এটাই বলব, যেকোনো ভালো কাজেই সফল হতে গেলে সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য, শ্রম ও সততার প্রয়োজন, তা ফেসবুকের মাধ্যমে উপার্জনই হোক না কেন।

লেখক: সহপ্রতিষ্ঠাতা, এমরাজিনা টেকনোলজিস এবং বাংলাদেশে পেওনিয়ারের দূত