স্মার্টসঙ্গী

কম্পিউটার গেমে ‘লেভেল আপ’ বলে একটা কথা আছে। এক স্তর থেকে পরবর্তী স্তরে উন্নীত হওয়া। আমাদের জীবনও অনেকটা তাই। একটা করে নতুন প্রযুক্তি আসে, আর আমাদের জীবনযাপনের লেভেল আপ ঘটে। মুঠোফোন যেমন আগেও ছিল, এখন সেটা স্মার্টফোন। ঘড়িও এখন স্মার্টঘড়ি। সঙ্গে ট্যাব থাকলে স্মার্টফোন-কম্পিউটার দুটোরই কাজ সারা যায়। এসব অনুষঙ্গ একজন মানুষের নিত্যসঙ্গী হলে কাজ, যোগাযোগ, বিনোদন—সবই থাকে তাঁর সঙ্গে। লিখেছেন মেহেদী হাসান

সব কাজের কাজি স্মার্টফোন
স্মার্টফোন সঙ্গে নেওয়া হয়নি বলে আবার ঘরে ফিরে আসার ঘটনা মোটামুটি ‘সর্বজনীন’। এর একটা কারণ, জীবন যত আধুনিক হচ্ছে, তত বাড়ছে কাজ (পড়ুন ঝক্কিঝামেলা)। আর সব কাজে স্মার্টফোন এমনই উপকারী বন্ধুর মতো এগিয়ে এসেছে যে একটা দিনও ‘বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না’। কোনো তথ্য দরকার? ইন্টারনেটে সংযুক্ত স্মার্টফোন আছে—গুগলে খুঁজুন। পথ চেনেন না? স্মার্টফোন আছে—মানচিত্রে অবস্থান লিখে দিন। গান শুনতে ইচ্ছে করছে? পকেটের স্মার্টফোনই ওয়াকম্যান, সিডি প্লেয়ার কিংবা আইপড। সেরা ক্যামেরা কোনটি? সঠিক সময়ে যেটা আপনার সঙ্গে থাকে—সেই স্মার্টফোন। আর এখন তো ফোনেই ডিএসএলআর মানের ছবি পাওয়া যায়।
ভুলোমনার জন্য স্মার্টফোন হলো রিমাইন্ডার, আলসেদের জন্য অ্যালার্ম ঘড়ি, ভোজনরসিকের জন্য খাবার আনানোর মাধ্যম আর জ্ঞানপিপাসুর জন্য জ্ঞানের উৎস। কোথাও যেতে চাইলে স্মার্টফোনেই গাড়ি বা মোটরসাইকেল ডাকা যায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয় স্মার্টফোন, খবর পড়ে শোনায় স্মার্টফোন, ফ্ল্যাশলাইট, ক্যালকুলেটর, কম্পাসসহ এক স্মার্টফোন যে কত শত কাজে লাগে, সে তালিকা বানানোও কঠিন। সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে যোগাযোগে। এখন তো ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জারে বার্তা আদান–প্রদান থেকে শুরু করে অডিও বা ভিডিও কলও করা যায়।

নিত্যসঙ্গী স্মার্টঘড়ি
স্মার্টঘড়ির ধারণা হলো নিত্যসঙ্গী—কবজিতে বেঁধে রাখতে হয়। শুরুতে অবশ্য অন্য যন্ত্রের সঙ্গী ছিল। স্মার্টফোনের সঙ্গে মিলিয়ে কাজ করতে হতো। ফোনে বার্তা বা কল এলে নোটিফিকেশন আকারে স্মার্টঘড়িতে জানান দিত। কিংবা স্মার্টফোনের মিউজিক প্লেয়ার নিয়ন্ত্রণ করা যেত। এখনো যায়। তবে স্মার্টঘড়ি দিয়েই এখন কল করা যায়, বার্তা পাঠানো যায়। কোনো কোনোটায় গানও শোনা যায়।
বাজারে দুই ধরনের স্মার্টঘড়ি পাওয়া যায়। একটা হলো সাধারণ কাজের জন্য, আরেকটি বিশেষায়িত। অ্যাপলের ওয়াচ ওএস কিংবা গুগলের ওয়্যার ওএস অপারেটিং সিস্টেমে যে স্মার্টঘড়িগুলো চলে সেগুলো মোটামুটি সব ধরনের কাজের জন্য। অ্যাপ ইনস্টল করলেই নতুন কাজ করা যায়। তবে এই স্মার্টঘড়িগুলো স্মার্টফোনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। অন্যদিকে বিশেষায়িত স্মার্টঘড়িগুলোতে বিশেষ কাজের জন্য সুবিধা ও অ্যাপ আগে থেকেই ঠিক করে দেওয়া থাকে। যেমন দূরে কোথাও ভ্রমণের জন্য হাইকিং ওয়াচ, পানির নিচে ডাইভিং ওয়াচ এবং স্কাই ডাইভারদের জন্য ফ্লায়িং ওয়াচ।
জিপিএসের সাহায্যে স্মার্টঘড়িতেই পথনির্দেশনা পাওয়া যায়, তারহীন ব্লুটুথ হেডফোন যোগ করলে গান শোনা যায়, স্মার্টবাড়ির অনেক যন্ত্র নিয়ন্ত্রণের সুযোগও যুক্ত হচ্ছে। আর বর্তমানে আপনার হৃদ্​রোগ আছে কি না, দেহঘড়ি ঠিকঠাক চলছে কি না, এ সব কিছুই বলে দিতে পারে স্মার্টঘড়ি।

স্বাস্থ্যসচেতনতায় স্মার্টব্যান্ড
স্মার্টঘড়ি আর স্মার্টব্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য দিন দিন সূক্ষ্ম হচ্ছে। স্মার্টব্যান্ড হলো স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জন্য। মিনিটে হৃৎস্পন্দন কত, রাতে কতক্ষণ ঘুম হয়েছে, ঘুম পাতলা নাকি গাঢ় ছিল—স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের এমন সুবিধা থাকে বেশি। আর অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করতে হয় বলে স্মার্টঘড়ির তুলনায় হালকাপাতলা গড়নের হয়ে থাকে। কত কদম হেঁটেছি, কত কিলোমিটার দৌড়েছি কিংবা কত ক্যালরি খরচ হলো—এ ধরনের তথ্য পাওয়া যায় স্মার্টব্যান্ডে। এ জন্য স্মার্টব্যান্ডকে ফিটনেস ট্র্যাকারও বলা হয়। আর যন্ত্রাংশ কম বলে দামেও সস্তা। বেশির ভাগ স্মার্টব্যান্ডের ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ খুব সহজ হয়ে থাকে।

ট্যাবের যত কাজ
ট্যাবলেট কম্পিউটার একসময় পরিচয়–সংকটে ভুগেছে। কেউ কেউ বলেছেন স্পর্শকাতর পর্দার ছোট ল্যাপটপ, কেউ আবার ধরেই নিয়েছেন বড় পর্দার স্মার্টফোন। সে যা হোক, আলাদা ঘরানার গ্যাজেট হিসেবে ট্যাব কিন্তু দিব্যি টিকে আছে। আর মাইক্রোসফট, লেনোভো এবং অ্যাপল যেভাবে লেগেছে, তাতে শিগগিরই প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে, সে আশঙ্কা নেই। তবে ইদানীং শিক্ষা আর সৃজনশীল কাজে ট্যাবের ব্যবহার বেশি দেখা যাচ্ছে। ছোট ব্যবসায়িক মিটিংয়ে কোনো উপস্থাপনার জন্য ট্যাবলেট ব্যবহার করা যায়।

হেডফোন
হেডফোনের মূল কাজ গান শোনা। প্রয়োজন, আকার, সুবিধা আর ধরনভেদে কয়েক ধরনের হেডফোন পাওয়া যায় বাজারে। এর মধ্যে কিছু আছে অনুশীলনের জন্য, কিছু ভ্রমণের জন্য, কিছু আবার গেমের জন্য বিশেষায়িত। আকারভেদে ইন-ইয়ার, অন-ইয়ার এবং ওভার-ইয়ার হেডফোন পাওয়া যায়। ইন-ইয়ার হেডফোন আকারে ছোট, কানের ভেতরে লাগিয়ে গান শুনতে হয়। অন-ইয়ার আর ওভার-ইয়ার হেডফোন দেখতে একই রকম। দুটোই কানের ওপর থাকে। হেডফোন তারহীন কিংবা তারযুক্ত হতে পারে।

কোথায় কিনবেন?
রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটি, প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্ক, হাতিরপুলের ইস্টার্ন প্লাজা ও মোতালিব প্লাজা এবং নিউ এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের ইসিএস কম্পিউটার সিটি ছাড়াও আশপাশের বেশ কিছু বাজারে প্রযুক্তিপণ্যের দোকান পাওয়া যাবে। চট্টগ্রামে আগ্রাবাদ, জিইসি মোড় ও চকবাজার এলাকায় এবং আমতলের শাহ আমানত সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটে প্রযুক্তিপণ্যের দোকান পাওয়া যাবে।

এর বাইরে বিভাগীয় শহরসহ সব জেলা শহরেই প্রযুক্তিপণ্যের দোকান আছে। আর আশপাশের দোকানে চাহিদামাফিক পণ্য না পেলে অনলাইনেও ফরমাশ জানাতে পারেন। প্রযুক্তিপণ্যের বিশেষায়িত ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মধ্যে আছে পিকাবু, ট্রেন্ডি-ট্র্যাকার ইত্যাদি। এ ছাড়া বাগডুম, আজকের ডিল বা দারাজেও খুঁজতে পারেন।
দাম: স্মার্টফোনের দাম শুরু মোটামুটি সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে। কমবেশি ২০০ টাকা থেকেই পাওয়া যায় হেডফোন। স্মার্টঘড়ির ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড একটা বড় ব্যাপার, পরিচিত ব্র্যান্ডের ঘড়িগুলোর দাম একটু বেশি পড়বে, অন্তত ৮ থেকে ১০ হাজার ধরে রাখতে হবে। ট্যাবের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।