শিশুকে ইউটিউবে ছাড়ার আগে...

অনেক মা–বাবাই এখন শিশুর সামনে ইউটিউবের ভিডিও চালিয়ে দিয়ে তাকে ভুলিয়ে রাখেন। ইউটিউব এভাবে সারা বিশ্বে ‘বেবিসিটার’ বা শিশু দেখাশোনার দায়িত্ব পেয়ে যাচ্ছে। শিশুকে যদি প্রশ্ন করেন, তার কোন অ্যাপটি চালাতে ভালো লাগবে। সে হয়তো ইউটিউবের কথাই বলবে। ইউটিউবে এখন অনেকে অনেক ভিডিও দেখছে এবং তার মধ্যে শিশু দর্শকের সংখ্যাও কম নয়।

কিন্তু ইউটিউবে শিশু কী দেখছে, তা কি অভিভাবক হিসেবে খেয়াল রাখছেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্মে শিশুরা কতটা সময় কাটাচ্ছে বা কী ধরনের কনটেন্ট দেখছে, তা অভিভাবকদের নজরে থাকা জরুরি। কারণ, এটা কোনো স্কুলের মাঠ নয়, যেখানে শিশুকে ছেড়ে দিয়ে তার ইচ্ছামতো খেলতে দিলেন। এখানে যেসব কনটেন্ট তৈরি করা হয়, তা শিশুদের আকৃষ্ট করার জন্য এবং তাদের মধ্যে আসক্তি তৈরি হয়। শিশুরা ওই ভিডিও দেখতে দেখতে এতে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং বারবার দেখতে চায়। একসময় দেখানো বন্ধ করে দিলে জেদ করে বসে।

অভিভাবকদের মধ্যে শিশুদের অতিরিক্ত টিভি দেখা ও বিজ্ঞাপনের বিষয় নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। কিন্তু টিভির নানা শো ও ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম কিন্তু আলাদা। টিভির শো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলে। সেখানে কোনটি বিজ্ঞাপন আর কোনটি কনটেন্ট, তা পরিষ্কার বোঝা যায়। সেখানেও প্রচারের নির্দিষ্ট মান নিয়ন্ত্রণ থাকে। ইউটিউবে কোনো সীমারেখা নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিডিও চলতে থাকে। একটি শেষ হলে আরেকটি শুরু হয়। একটি ভিডিও শেষ হলে শিশুরা দ্রুত আরেকটিতে ক্লিক করে বসে।

অনেক কনটেন্ট নির্মাতা এখন শুধু শিশুদের লক্ষ্য করে ভিডিও তৈরি করে। তারা দ্রুতগতির, অধিক উজ্জ্বল ও বেশি মিউজিকযুক্ত আসক্তিকর সব কনটেন্ট পোস্ট করে। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য তাই অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি।

শিশুদের নিরাপত্তার জন্য ইউটিউব মুছে ইউটিউব কিডস ইনস্টল করে দিতে পারেন। এতে শিশুদের সামনে প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী কনটেন্ট হাজির হবে না। ইউটিউব অ্যাপ মূলত ১৭ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য। তাই শিশুদের ইউটিউবে ছেড়ে দেওয়ার আগে ভেবে দেখুন। নিজে তদারকি করে তাদের কনটেন্ট দেখাতে পারেন।

যদি মোবাইল বা ট্যাব থেকে ইউটিউব দেখান, তবে আইওএস বা অ্যান্ড্রয়েড সেটিংস থেকে ইউটিউব ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করে দিতে পারেন। মনে রাখবেন, ইউটিউবে সব ভিডিও কিন্তু সবার উপযোগী নয়। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট হিসেবে এটি নিয়ন্ত্রিত নয় বা এর কনটেন্টগুলো ঠিকমতো পর্যবেক্ষণ করা হয় না। এতে শিশুদের জন্য ক্ষতিকর অনেক কনটেন্ট থাকতে পারে। শিশুরা ভয় পেতে পারে বা তাদের জন্য বিব্রতকর কনটেন্ট সামনে চলে আসতে পারে। তথ্যসূত্র: দ্য আটলান্টিক ও স্টাফ ডটকো।