সফল সালাউদ্দিন

সালাউদ্দিন ইশাদ। ছবি: খালেদ সরকার
সালাউদ্দিন ইশাদ। ছবি: খালেদ সরকার

মুক্তপেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনলাইনে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করেন সালাউদ্দিন ইশাদ। মাসে কমবেশি দুই হাজার ডলার আয়। বাংলাদেশি হিসেবে ভালোই বলতে হয়। তবু দেশীয় এক প্রতিষ্ঠানে কাজও করেন। গত বছর ফ্রিল্যান্সার ডটকমের অনুপ্রেরণাদায়ী ফ্রিল্যান্সারদের একজন ছিলেন সালাউদ্দিন। এই ফ্রিল্যান্সারের গল্প শোনা যাক।

শুরুতেই ধাক্কা
অনলাইনে কাজ করে যে আয় করা যায়, তা প্রথম শুনেছিলেন বন্ধুদের আড্ডায়। সালাউদ্দিন তখন কাজ করেন এক বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। বেতন কম। কোনো রকমে দিন চলত। অতিরিক্ত আয়ের আশায় বন্ধুদের পরামর্শে অনলাইনে কাজের বাজার ওডেস্কে (বর্তমানে আপওয়ার্ক) গ্রাফিক ডিজাইনের কাজগুলোতে আবেদন করতে শুরু করেন। প্রথম দিনেই এক নিয়োগদাতা যোগাযোগ করে কাজ বুঝিয়ে দিলেন। ঠিকঠাক করে দিলেও শেষমেশ সালাউদ্দিনের পকেটে পারিশ্রমিক ঢোকেনি। কারণ আবেদন করলেও চুক্তি না করেই কাজ করে দিয়েছিলেন। কাজের বিজ্ঞাপনদাতাও সে সুযোগ নিয়েছিলেন।

চাকরি ছেড়ে দেওয়া
প্রথম কাজের অভিজ্ঞতায় কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন। তবে বুঝেছিলেন, কাজের দক্ষতার সঙ্গে দিকনির্দেশনাও দরকার। সে জন্যই বিজ্ঞাপন দেখে তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করেন। গ্রাফিক ডিজাইন মোটামুটি জানতেন। আরেক প্রস্থ প্রশিক্ষণ নিলেন। এরপর শুরু হলো সালাউদ্দিন ইশাদের ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার।
অনলাইনে প্রথম আয় লোগোর নকশা করে। ফ্রিল্যান্সার ডটকমে লোগো নকশার প্রতিযোগিতা হয়। যার নকশা চূড়ান্ত হবে, পুরস্কার হিসেবে তিনি পাবেন ১৫০ ডলার। প্রথমেই দেড় শ ডলারের সে পুরস্কার পান সালাউদ্দিন। এরপর বিজ্ঞাপনী সংস্থার চাকরি ছেড়ে দিয়ে পূর্ণোদ্যমে ফ্রিল্যান্সিংয়ে মন দেন।

সেরাদের তালিকায়
অনলাইনে সাধারণত পশ্চিমা দেশের নিয়োগদাতারা বেশি কাজ পোস্ট করে থাকেন। বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁদের সময়ের ফারাক থাকায় শুরুতে বিপাকে পড়েন সালাউদ্দিন। মা বুঝতেন না। বারবার বলতেন, রাত জেগে এত কাজ কিসের? তবু অনেক রাত জেগে কাজ করে গেছেন দীর্ঘদিন। কাজের মাধ্যমেই বেশ কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতে থাকে সালাউদ্দিনের। নিয়োগদাতারাও তাঁর কাজ পছন্দ করতেন। এতে আর নতুন নতুন কাজের জন্য রাত জেগে আবেদন করতে হতো না। নির্ধারিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কাজ করতে থাকেন।
গত বছর আড়াই কোটি মুক্তপেশাজীবী যোগ দেওয়ার মাইলফলক উদ্​যাপন করে ফ্রিল্যান্সার ডটকমে। সে সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুপ্রেরণাদায়ী ফ্রিল্যান্সারদের গল্প ওয়েবসাইটটিতে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে স্থান করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের সালাউদ্দিন ইশাদ।

আবারও চাকরি
শুরুতেই বলা হয়েছে, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সালাউদ্দিনের দিন ভালোই যাচ্ছে। তবু আবার দেশীয় এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। সালাউদ্দিনের কণ্ঠে যেন খানিকটা হতাশা। বললেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয় ভালো, তবে এই কাজের সামাজিক স্বীকৃতি নেই। চাকরিটা করতে হয় সম্মানের জন্য। বলতে পারেন একটা পরিচয়ের জন্য।’

উপস্থাপনাই মুখ্য
সে যা–ই হোক, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। মোটামুটি সব মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট থাকলেও ফ্রিল্যান্সার ডটকমে বেশি কাজ করেন। আর গ্রাফিক ডিজাইনের মধ্যে ব্র্যান্ডিং ধাঁচের কাজ করেন বেশি। লোগো, ইউজার ইন্টারফেস, ভিজ্যুয়াল বিজ্ঞাপন, ব্যানার, ফ্লোচার্ট, সাইট ম্যাপ, বিজনেস কার্ড, সাময়িকী ও পত্রিকার লেটারহেড ইত্যাদি নকশার কথাই ঘুরেফিরে এল সালাউদ্দিনের কথায়। বর্তমানের তথ্যপ্রযুক্তির যেকোনো কাজে নকশা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সালাউদ্দিন। বললেন, ‘কঠিন প্রোগ্রামিং–সংকেত মানুষ দেখে না, তারা দেখে এর উপস্থাপনা।’

নতুনদের উদ্দেশে
পরিশ্রম, দিকনির্দেশনা ও ধৈর্য—ফ্রিল্যান্সিংয়ে নতুন হলে এই তিনটির অনেক দরকার। নতুনদের জন্য বর্তমান সময়টা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য পরিশ্রমী হতে হবে। প্রতিনিয়ত শিখতে হবে। অল্প শিখেই আবেদন না করে বরং অভিজ্ঞদের সাহায্য নিন। গুটিকয়েক কাজ করলেই পেশাদারত্ব চলে আসে না। নিজের কাজের ভুল নিজে খুঁজে বের করা কিন্তু কঠিন। এ জন্য অভিজ্ঞদের সহায়তা নেওয়ার কথা বললাম। সবচেয়ে বড় কথা, এ কাজে সফলতা পেতে চাইলে ধৈর্য থাকতে হবে। অল্পে হতাশ হওয়া চলবে না।
যেকোনো পেশায় যেমন দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির ব্যাপার আছে, ফ্রিল্যান্সিংয়েও তা–ই। এই কাজে বরং জবাবদিহির দায় বেশি হওয়া উচিত। কারণ কাজের বাজার থেকে প্রতিযোগিতা করেই কাজ নিতে হচ্ছে। নিয়োগদাতারাও বিশ্বাস করেই কাজ দিচ্ছেন। তাঁদের সে বিশ্বাসের প্রতি সম্মান থাকতে হবে। এ জন্য পুরো কাজ ভালোভাবে বুঝে, তবেই সে কাজে হাত দিতে হবে। এর ওপরেই সুনাম নির্ভর করে। কাজ শেষে নিয়োগদাতা যে পর্যালোচনা (রেটিং) জানান, ভবিষ্যৎ কাজ পেতে তা সাহায্য করে।
যাঁরা অনলাইনে তথ্যপ্রযুক্তি কাজে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাচ্ছেন, তাঁদের জন্য সালাউদ্দিন দুটি বিভাগে পরামর্শ দিয়েছেন।

যাঁরা নতুন
● পছন্দের বিষয় নিয়ে সব সময় গবেষণা করুন
● ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখুন
● অনবরত কাজের অনুশীলন করুন
● কাজসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন
● প্রয়োজনে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখুন

যাঁরা অভিজ্ঞ
● এখানেও শুরুতেই গবেষণার কথা বলতে হয়, এতে নতুন নতুন ধারণা পাওয়া যায়
● যত বেশি সম্ভব কাজ করে যান
● অভিজ্ঞদের কাজ দেখুন
● পোর্টফলিও সাইট, যেমন বিহ্যান্স, ড্রিবলের মতো ওয়েবসাইটগুলোতে হালানাগাদ থাকুন

মাথায় রাখা ভালো
● নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ জমা দিন
● কাজ সম্পর্কে নিয়োগদাতার প্রতিক্রিয়া গুরুত্বের সঙ্গে নিন
● নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিন

যেসব মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করতে পারেন
● upwork.com
● freelancer.com
● peopleperhour.com
● envato.com
● fiverr.com
● creativemarket.com
● codegrape.com
● 99design.com