টোকিও অলিম্পিকে প্রযুক্তির চমক

যেনতেন ব্যাপার নয়—গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ! বুঝতেই পারছেন, অলিম্পিকের কথা বলা হচ্ছে। ২০২০ সালে অলিম্পিকের আসর বসছে জাপানের রাজধানী টোকিওতে। বিশ্বের বাঘা বাঘা অ্যাথলেট অংশ নেবে এতে। তবে এবারের আসরে কেবল ওই অ্যাথলেটরাই নজর কাড়বে না; জাপানের প্রযুক্তি আর উদ্ভাবন বিস্মিত করবে নিশ্চিত। বিশ্বের নামজাদা কিছু সংবাদমাধ্যমে টোকিও অলিম্পিকের বিস্ময়কর প্রযুক্তির কথা ফাঁস হয়েছে। জেনে নিন সেসবই। লিখেছেন মাহফুজ রহমান

ফেলনা থেকে মেডেল
অলিম্পিকে ঝকমারি দেখিয়ে দুনিয়ার সেরা অ্যাথলেটরা জিতে নেয় সোনা, রুপা আর ব্রোঞ্জের মেডেল। টোকিও অলিম্পিকে তারা কী পাবে জানেন? একটু ঘুরিয়ে বললে—ফেলনা জিনিসপত্র! খুব সামান্য হলেও ফেলে দেওয়া প্রতিটি গ্যাজেট থেকে মূল্যবান ধাতু আহরণ করা সম্ভব। তাই জাপান সরকার জনগণের কাছে অব্যবহৃত ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলো দান করে দেওয়ার অনুরোধ করেছে। এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৬৩৬ মেট্রিক টন যন্ত্র জমা পড়েছে। এগুলোর মধ্যে মোবাইল ফোন আছে প্রায় ৮০ হাজার। এই যন্ত্রগুলো থেকেই মূল্যবান ধাতু সংগ্রহ করে তৈরি করা হবে অলিম্পিকের ৫ হাজার মেডেল!

চালকবিহীন ট্যাক্সি
ভিনদেশি অতিথি আর অ্যাথলেটদের ঘুরতে হবে বনবন করে। এই ঘোরাঘুরি আরও সহজ করতে টোকিও আনছে রোবো–ট্যাক্সি। এই দায়িত্ব বর্তেছে জাপানের বিখ্যাত অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডিএনএ–র (DeNA) ওপর। সঙ্গে আছে নিশান ও টয়োটার মতো প্রতিষ্ঠান। যাত্রীরা মোবাইল অ্যাপে ভয়েস কমান্ড দিলেই দোরগোড়ায় চলে আসবে রোবো–ট্যাক্সি। ট্যাক্সিতে থাকবে না কোনো চালক!

তাৎক্ষণিক ভাষান্তর
২০৭টির মতো দেশ অংশ নেবে ২০২০ সালের অলিম্পিকে। অসংখ্য ভাষার মানুষ ভেসে বেড়াবে টোকিও শহরে। ফলে ভাষাগত জটিলতার সৃষ্টি হবেই। জাপান এই মুশকিলের আসান করে ফেলেছে প্রায়। একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে ২৭টি ভাষা তর্জমা করে দেবে। প্যানাসনিকও গলায় পরার মতো একটি যন্ত্র তৈরি করছে, যা ১০টি ভাষা অনুবাদ করতে পারবে। এ ছাড়া একটি অ্যাপও তৈরি করছে প্যানাসনিক, যা দিয়ে জাপানি ভাষায় লেখা সংকেতের মর্মোদ্ধার করা যাবে।

শৈবাল যখন জ্বালানি
সারা বিশ্ব পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খুঁজতে মাথা কুটছে। কিন্তু এটা অনেকটাই পরিষ্কার যে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির উৎপাদন ভীষণ ব্যয়বহুল ব্যাপার। কিন্তু জাপান তো ‘ছাড়ার পাত্র’ নয়! উড়োজাহাজ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান বোয়িং এরই মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ‘অ্যালজি’ নামের এক ধরনের শৈবাল দিয়ে জ্বালানি উদ্ভাবন করে চালানো হবে উড়োজাহাজ এবং বাস। টোকিও অলিম্পিকেই যা বাস্তবে দেখা যাবে। এর ফলে কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ কমে আসবে ৭০ শতাংশ। এই প্রকল্পে বোয়িংয়ের সঙ্গে আছে নিপ্পন এয়ারওয়েজ, ইউনিভার্সিটি অব টোকিও, জাপান সরকার এবং জাপান এয়ারলাইনস।

কৃত্রিম উল্কাপাত
টোকিও অলিম্পিকে যাবেন বলে ঠিক করেছেন? তাহলে জেনে রাখুন, অলিম্পিকের সময় টোকিও শহরে উল্কাপাত হবে! ভয় পাবেন না, পুরোটাই কৃত্রিম। জাপানি প্রতিষ্ঠান এএলই মহাকাশে একটি খুদে স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে। এই স্যাটেলাইট কৃত্রিম উল্কাপাত ঘটাবে। কৃত্রিম হলেও উল্কাগুলো ধেয়ে আসবে সেকেন্ডে পাঁচ মাইল বেগে। ৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এসব করা হচ্ছে অলিম্পিক–অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্যই।

রোবট সহকারী
রোবটের ছোট একটা দল থাকবে টোকিওর অলিম্পিক ভিলেজে। এই যন্ত্রমানবদের কাজ হবে অতিথিদের সহযোগিতা করা। শহর পথঘাট চেনানো, যাতায়াত এবং ভাষা অনুবাদের মতো কাজ করবে এরা। এ ছাড়া অতিথিদের তল্পিতল্পা বহন করার কাজটুকুও করবে বলে জানা গেছে। এটা আসলে জাপানের একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই অংশ। সূর্যের দেশ চায়, জাতীয়তা, বয়স কিংবা আর্থসামাজিক অবস্থান—যা–ই হোক না কেন, ভবিষ্যতে এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াবে রোবট।

সৌরশক্তি সবখানে
২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ হয়েছিল ৩ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ৩ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন হয়েছিল ২০১৬ সালে রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকে। জাপান বলছে, অনেক হয়েছে, আর না! তো কী করা? সেরা সমাধান হিসেবে সৌরশক্তিই বেছে নিয়েছে জাপান। তাই পথঘাটও সোলার প্যানেলে ঢেকে দেবে জাপান সরকার। কীভাবে? সড়কে সোলার প্যানেল বসিয়ে তার ওপরে রেজিন ঢেলে দেওয়া হবে। এর ফলে যানবাহন চলাচলের সময় প্যানেলগুলো থাকবে অক্ষত। এই না হলে সূর্যের দেশের প্রযুক্তি!

সূত্র: রয়টার্স, ইন্ডাস্ট্রি লিডার্স ম্যাগাজিন ডটকম এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম