শুধুই উদ্ভট ধারণা দেন?

ইলন মাস্ক
ইলন মাস্ক

শুরুর দিকে ইলন মাস্কের যেকোনো ধারণা উদ্ভট মনে হতে পারে। মাস্কের তো খ্যাতি রয়েছে পাগলাটে বিষয় নিয়ে কাজ করার। মনে হতে পারে কোনো কমিক বইয়ের বিষয়ে কথা অথবা কোনো বিজ্ঞান কল্পকাহিনির চলচ্চিত্রের দৃশ্যের কথা। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। মঙ্গলগ্রহে বসবাসের নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে। সেখানে একটি বড় সমস্যা তাপমাত্রা খুব কম। সমাধান হিসেবে মাস্ক বলছেন মঙ্গল গ্রহে নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ ঘটাতে। এ ছাড়া মাটির নিচে সুড়ঙ্গ খোঁড়া বা হাইপারলুপের মতো পরিবহনব্যবস্থার ধারণা তিনি দেন, যা শুরুতে অসম্ভব মনে হয়েছিল।
ইলন মাস্ক একসঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। টেসলা, স্পেসএক্স এবং বোরিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠান তিনটি থেকে এমন কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা শুরুতে মনে হয়েছিল কল্পকাহিনি।
শুধু পাগলাটে ধারণার জন্যই মাস্ক পরিচিত নন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্তব্য করেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। টেসলাকে পাবলিক কোম্পানি থেকে স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানে নেওয়ার বিষয়ে টুইট করার জন্য ইলন মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সমুদ্রের গুহায় আটকে পড়া থাই বালকদের উদ্ধারকাজে নিয়োজিত একজন গাড়িচালক সম্পর্কে তিনি বাজে মন্তব্য করেছিলেন।
২০১৫ সালে এক অনুষ্ঠানে মাস্ক বলেছিলেন, ‘আমরা মঙ্গল গ্রহে বসবাস করতে যাচ্ছি। এ জন্য সেখানকার তাপমাত্রা বাড়াতে হবে। আর এটি খুব দ্রুত করা সম্ভব, যদি দুই মেরুতে থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো যায়। এতে বরফ গলে বাষ্পে পরিণত হবে। এ ছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করেও লাল গ্রহটির তাপমাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া একটি বুদ্ধি রয়েছে। বড় আকারের আয়না ব্যবহার করে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করেও তাপমাত্রা বাড়ানো।
মাস্কের এ ধরনের ধারণা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। নীতির দিক থেকে বিচার করলে তা সম্ভব এবং বেশ ভালো ধারণা। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়ন কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে, তা ভেবে দেখা দরকার।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এক টুইটে মাস্ক জানিয়েছিলেন, শহরের যানজট বেশ বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য এমন একটি যন্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছি, যা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে রাস্তা তৈরি করবে। আর এই টুইট দিয়েই বোরিং কোম্পানির যাত্রা শুরু। কয়েক দিন আগেই সেই টুইটবার্তার ফলাফল জানতে পেরেছে প্রযুক্তি দুনিয়া। পরীক্ষামূলকভাবে স্পেসএক্সের প্রধান কার্যালয়ের নিচ দিয়ে দুই মাইল পথ পরীক্ষা করা হয়েছে। যেখানে ঘণ্টায় ১৫০ মাইল বেগে যাওয়া সম্ভব।
হাইপারলুপ নিয়ে বেশ আলোচনায় এসেছিলেন ইলন মাস্ক। ২০১৩ সালে হাইপারলুপের ধারণা দেন তিনি। সম্পূর্ণ বায়ুশূন্য একটি টিউবের মধ্য দিয়ে পাটাতনের ওপরে যানবাহন রেখে সেটি টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে ঘণ্টায় প্রায় ৭৫০ মাইল গতিতে। এমন ধারণা দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল মাস্ক। অধিকাংশ মানুষই অবিশ্বাস করেছিল। কিন্তু পরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় তা নিয়ে বেশ পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখে। ফল হিসেবে পাওয়া গেছে, মাস্কের ধারণা অসম্ভব নয়। তবে এখনই এত গতি পাওয়া সম্ভব হবে না।
সূত্র: সিনেট