আবার অভিযুক্ত ফেসবুক, গ্রাহকদের অজান্তেই বেহাত তথ্য!

গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাতের আরেকটি ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। মার্কিন দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, গ্রাহকদের অজান্তেই তাঁদের তথ্য অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করেছে ফেসবুক।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, অ্যামাজন, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই ও ইয়ানডেক্সের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের গ্রাহকদের তথ্যে প্রবেশাধিকার দিয়েছে ফেসবুক। তবে এমন সুবিধা পাওয়া কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, ফেসবুকের দেওয়া এই বিশেষ সুবিধা সম্পর্কে তারা অবগত ছিল না। ওদিকে নিজেদের এই কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা দিয়েছে ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গ্রাহকদের অনুমতি ছাড়া তাদের ব্যক্তিগত তথ্যে কাউকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি এবং কোনো ক্ষেত্রেই এসব তথ্যের অপব্যবহার পরিলক্ষিত হয়নি।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় ফের তোপের মুখে পড়ল ফেসবুক। কিন্তু সাম্প্রতিক বক্তব্যে এটি পরিষ্কার, তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতে যেন গ্রাহকদের কোনো তথ্য না যায়, তা নিশ্চিত করবে ফেসবুক। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট এই বিশেষ সুবিধা এখনো বন্ধ হয়নি! অথচ এর অনেক আগেই ফেসবুক ঘোষণা দিয়েছিল, এমন সুবিধা নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নথি থেকে এই খবরের সত্যতা মিলেছে। ২০১৭ সালের ওই সব নথি পত্রিকাটির হাতে এসেছে। নথি থেকে জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে কাজটি করে আসছে ফেসবুক। গ্রাহকদের তথ্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে সব পক্ষই লাভবান হচ্ছিল। ওই তথ্য কাজে লাগিয়ে ফেসবুক ও অন্য প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের পণ্যকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলত। মূলত কোম্পানির উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্যই গ্রাহকদের এসব তথ্য ব্যবহার করা হতো। তবে এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সঠিকভাবে জানানো হয়নি কখনোই।

উদাহরণ টেনে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, এই ব্যবস্থায় মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিন সব ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নাম দেখতে পেত। এই অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ নথিতে দেখা গেছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত বার্তা দেখার অনুমতি ছিল নেটফ্লিক্স ও স্পটিফাই-এর। অন্যদিকে অ্যামাজনকে ব্যবহারকারীদের নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা দেখার অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক।

এদিকে এমন খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ধাক্কা খেয়েছে মার্ক জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে ফেসবুকের স্টক শেয়ারের দাম কমে গেছে। জাকারবার্গকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে যাওয়ার দাবিও তুলেছে কিছু শেয়ারহোল্ডার। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে শুরু হয়ে #DeleteFacebook আন্দোলন।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এই প্রতিবেদনের আগে ৬০ জনেরও বেশি ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফেসবুকের সাবেক কর্মী, অংশীদার ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। প্রায় ২৭০ পৃষ্ঠার অভ্যন্তরীণ নথি হাতে পেয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া ও খেলাধুলাসংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান ডেমিয়ান কলিন্স বিবিসিকে বলেছেন, ‘ব্যবহারকারীদের তথ্য বিক্রি করা হচ্ছে না বলে যে দাবি ফেসবুক করছে, তা চ্যালেঞ্জ করার সময় এসে গেছে। তারা অন্যান্য কোম্পানিকে পুরস্কারস্বরূপ কিছু বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। এটি বিক্রিরই অন্য রূপ।’

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফের বিতর্কে পড়ল ফেসবুক। এর আগে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি প্রতিষ্ঠানকেও গ্রাহকদের তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। এ ছাড়া মিয়ানমারের সহিংসতায় ইন্ধন জোগানো, মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন ঘটনায় অভিযুক্তের কাতারে আছে ফেসবুক।