মেলায় প্রযুক্তির বই প্রযুক্তির ছোঁয়া

প্রমাণ আকারের ডিজিটাল পর্দায় দেখা যাচ্ছে নানা বই। ছবি: খালেদ সরকার
প্রমাণ আকারের ডিজিটাল পর্দায় দেখা যাচ্ছে নানা বই। ছবি: খালেদ সরকার

প্রযুক্তির নানা কিছু শেখার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মানুষের। আবার প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সব আয়োজনেই। তারই প্রতিফলন দেখা গেল এবারের বইমেলায়ও। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তথ্যপ্রযুক্তির বইও প্রকাশিত হয়। এবারও এ ধারা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি তারহীন ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল পর্দায় মেলার মানচিত্র—প্রযুক্তির নানা ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।

মেলায় প্রযুক্তির বই

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমিজুড়ে চলা এ বছরের বইমেলায় প্রযুক্তির বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রশিক্ষণ ও পরামর্শমূলক বই-ই বেশি। মেলা ঘুরে দেখা গেল, এগুলোর চাহিদাও আছে বেশ। বিশেষ করে প্রোগ্রামিং, ফ্রিল্যান্সিং ও প্রযুক্তির বিভিন্ন কলাকৌশলের প্রশিক্ষণমূলক বইয়ের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।

অদম্য, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, সিসটেক পাবলিকেশনস, তাম্রলিপি, আদর্শ, অন্যরকম প্রকাশনী ও দ্বিমিক প্রকাশনীতে প্রযুক্তিবিষয়ক বইয়ের প্রাধান্য রয়েছে। এবারের মেলায় বেশ কিছু নতুন বইও প্রকাশিত হয়েছে, কিছু বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে অদম্য প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে প্যারসোনাল ব্রান্ডিং ফর প্রফেশনাল সাকসেস, লিখেছেন মো. মাছুম চৌধুরী। দাম ২৫০ টাকা। দ্বিমিক প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে সবার জন্য উবুন্টু।

লেখক: নাসির খান সৈকত। দাম ১৮৫ টাকা এবং প্রোগ্রামিং এক্সারসাইজ (পেপারব্যাক), লিখেছেন তাহমিদ রাফি। দাম ১৩৫ টাকা। বাংলাপ্রকাশ থেকে বের হয়েছে ইনকাম @ ফেসবুক, লিখেছেন মো. ইকরাম। দাম ২০০ টাকা। নি পাবলিকেশন্স থেকে বের হয়েছে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড পিএইপি ৭ এবং ডাটাবেজ প্রোগ্রামিং, লিখেছেন মো. কামরুজ্জামান নিটন। দাম ৬৪০ টাকা। জ্ঞানকোষ প্রকাশনীতে এসেছে ইউটিউব ক্যারিয়ার, বইটি লিখেছেন বাপ্পি আশরাফ। দাম ২৩০ টাকা।

বইমেলায় স্টল নিয়ে সরাসরি বই বিক্রি করছে বই বিক্রির ওয়েবসাইট রকমারি ডটকম (www.rokomari.com)। বইমেলায় যে দিন যে বই বের হচ্ছে, সেদিনই সেটা রকমারি ডটকমের সাইটে প্রদর্শিত হচ্ছে।

প্রযুক্তির ছোঁয়া

বইয়ের স্টলের পাশাপাশি মেলায় তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া দিতে বই বিক্রির ওয়েবসাইট এবং ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্রও রয়েছে মেলায়। আছে বিনা মূল্যে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের একটি স্টল আছে বাংলা একাডেমি অংশে। এই স্টল বাংলা ভাষার নিজস্ব রীতি অনুযায়ী ইউনিকোডে বাংলা যুক্ত করার দাবি নিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

মেলার বাংলা একাডেমি অংশে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের উদ্যোগে নজরুল মঞ্চের পাশে কম্পিউটার কিওস্ক বসানো হয়েছে। যেখানে চাইলে দর্শক বইমেলার তথ্য পেতে পারেন। নজরুল মঞ্চ এলাকায় তারহীন ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক সুবিধাও দিচ্ছে এটুআই। বইমেলা নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এসেছে মেলা উপলক্ষে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে নতুন বইয়ের তথ্য ও স্টলের অবস্থান জানা যাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে এখানে। এখানে তথ্য বাতায়ন কেন্দ্র সম্পর্কেও জানা যাবে।

মেলায় বই কেনায় বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে বিকাশ। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে বই কিনলে ৩২ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাচ্ছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বইয়ের প্রতি ক্রেতা–আগ্রহ রয়েছে
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বইয়ের প্রতি ক্রেতা–আগ্রহ রয়েছে


ডিজিটাল মনিটরের সুবিধা

মেলায় এসে নির্দিষ্ট কোনো স্টল খুঁজে না পেলে কাউকে জিজ্ঞেস না করলেও চলবে। মেলায় ঢোকার দুই পাশেয় রয়েছে ডিজিটাল মনিটির, যেখানে স্টল খোঁজার সাহায্য পাওয়া যাবে।

আছে ওয়াই-ফাই, কিন্তু...

পুরো বইমেলা প্রাঙ্গণে বিনা মূল্যের তারহীন ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে সেই সংযোগ পাওয়া বেশ কঠিনই বলা চলে। সরেজমিনে দেখা গেল মেলায় আসা দর্শনার্থী, পাঠক ও বিক্রেতারা তাঁদের ফোন থেকে এই ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারছেন না। কষ্টেসৃষ্টে যদিও সংযোগ দেওয়া যায়, তবে সেই ইন্টারনেটে গতি থাকে না। মেলায় ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে ডট ইন্টারনেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিহা রহমানকে মেলা প্রাঙ্গণে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘মেলায় ওয়াই-ফাই জোন আছে, ব্যানারে সেটির পাসওয়ার্ডও দেওয়া হয়েছে, তবে আমি অনেকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাইনি। তাই নিজের মোবাইলের ডেটা প্যাক ব্যবহার করছি।’

মেলায় ইন্টারনেটের দায়িত্বে থাকা বাংলা একাডেমির নেটওয়ার্কিং অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সোহাগ কবীর বলেন, ‘কিছু সমস্যা আছে, এটা অস্বীকার করব না। তবে বাংলা একাডেমির মধ্যে ইন্টারনেটের কোনো সমস্যা নেই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কিছু জাগায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা দ্রুত এর সমাধান করব।’