ভাঁজ খুললেই ট্যাব

নতুন দুটি ফোন উন্মোচন করল স্যামসাং। ২১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে গ্যালাক্সি ফোল্ড নামের নতুন ভাঁজ ফোনও দেখানো হয়েছে। এই ফোন বাজারে আসবে এপ্রিলে। তবে তার আগে বিশেষজ্ঞেরা শুরু করেছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ।

মাহফুজ রহমান

কবি কামরুজ্জামান কামুর লেখা ও প্রয়াত সংগীতশিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীর ওই গান খুব মনে পড়ছে, ‘তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও, করি প্রেমের তরজমা…’। ২১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে হয়ে গেল ‘গ্যালাক্সি আনপ্যাকড ২০১৯’ অনুষ্ঠান। এই আয়োজনে স্যামসাং নতুন কিছু স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। চারটি সংস্করণে এসেছে গ্যালাক্সি এস১০। সঙ্গে ফোল্ডেবল পর্দার স্মার্টফোন গ্যালাক্সি ফোল্ড। এই ফোনের ঝকমারি দেখে যেসব স্যামসাংপ্রেমী মশগুল, তাঁদের জন্যই উৎসর্গ করা হলো লেখার শুরুর ওই গান। ভাঁজ করা যায়, এমন ফোনের প্রেমে পড়লে এর চেয়ে জুতসই গান আর হয় না।

‘আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী’—পয়লা দর্শনেই গ্যালাক্সি ফোল্ড মোটামুটি ‘বোল্ড’ হয়ে গেছে। এই বোল্ড মানে ক্রিকেটের উইকেটের পতন। অথচ স্যামসাং যে রকম ঢাক পেটাচ্ছিল, তাতে মনে হচ্ছিল গ্যালাক্সি ফোল্ড হবে ‘বোল্ড অ্যান্ড বিউটিফুল’। এদিকে নিজেদের ‘ডিউটি’ ঠিকই পালন করেছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা সব স্মার্টফোন বিশেষজ্ঞ। স্যামসাংয়ের ‘গ্যালাক্সি আনপ্যাকড ২০১৯’ অনুষ্ঠানের পর শুরু হয়ে গেছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আর তাতেই স্যামসাংয়ের কর্তারা হয়তো দুশ্চিন্তায় চুল ছিঁড়তে শুরু করেছেন। তেমনটা হলে অবশ্য ভালোই। অন্তত এপ্রিলে ফোনটি বাজারে ছাড়ার আগে কিছুটা হলেও ঘষামাজা করবেন। আর না হলে গ্যালাক্সি ফোল্ডও ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’র দলে নাম লেখাবে। এমনকি ২১ তারিখের ওই অনুষ্ঠানে মঞ্চের সামনে বসে থাকা অতিথিরাও উপস্থাপকদের পরিবেশনায় যথেষ্ট সন্তুষ্ট হতে পারেননি। অবস্থা এমনই ছিল, যেন তালি দিলেও পয়সা লাগে!

ভাঁজ ফোনের যত খুঁত

পয়সা অবশ্য কম লাগবে না, ১ হাজার ৯৮০ ডলার (সম্ভাব্য)! গাঁটের এত পয়সা খরচা করার পর কী মিলবে গ্যালাক্সি ফোল্ডে? প্রথমত, ফোনটি ভাঁজ করা যাবে। কিন্তু এতেই গলদ ধরা পড়েছে। অনুষ্ঠানে প্রদর্শনের সময়কার ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞেরা দাবি করছেন, ভাঁজ খোলার পর খুঁত ধরা পড়ে। ফোনটির দুই ভাঁজ মেলে ধরলে নিখুঁতভাবে সমতল হয় না। ভাঁজের ঠিক মাঝ বরাবর আলোর প্রতিফলনও দৃষ্টিকটু। আর দুই পাশের রঙের তারতম্যও চোখের পড়ার মতো। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এটা কোনো রকমে জোড়াতালি দেওয়া আরকি।

ভাঁজ করা অবস্থায় ফোনটির পর্দার মাপ হয় ৪ দশমিক ৬ ইঞ্চি। আধুনিক স্মার্টফোনের পর্দার তুলনায় যা অনেক ছোট। অথচ স্যামসাং কিন্তু ভাঁজ করা অবস্থায় এই ফোনকে স্মার্টফোন হিসেবে ব্যবহার করার জন্যই বানিয়েছে। ফলে ‘ছোট পর্দা’র এই স্মার্টফোন স্মার্টওয়াচের মতোই কেবল নোটিফিকেশন দেখার জন্য ব্যবহৃত হবে।

তবে ভাঁজ খোলার পর পুরো পর্দায় সবকিছু ফুটে ওঠে চমৎকারভাবেই। এটাই বোধ হয় একমাত্র দিক, যেটি বিশেষজ্ঞদের খানিকটা মুগ্ধ করতে পেরেছে। এই ফোনে একই পর্দায় তিনটি অ্যাপ চালানো যাবে। শুনতে মন্দ নয়। কিন্তু একই সঙ্গে ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ এবং সার্চ ইঞ্জিন চালু করলে কোনো কাজই আসলে ভালোভাবে করা যায় না। প্রতিটি অ্যাপের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে জায়গা না দিলে সমস্যা হওয়ারই কথা। একেই বুঝি বলে ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’!

কাজেই পরিচয়

গ্যালাক্সি ফোল্ডই কিন্তু প্রথম ফোল্ডেবল স্মার্টফোন নয়। এ বছরের শুরুতেই বাজারে এসেছে এ ধরনের প্রথম ফোন রয়োল ফ্লেক্সপাই। সাফল্যের সঙ্গে ‘সুপার ফ্লপ’ গ্যাজেটের তালিকায় নাম লিখিয়েছে এরই মধ্যে। অতিমাত্রায় ধীরগতি, ক্যামেরার শাটার স্পিডও কচ্ছপগতির, অথচ দাম বেশ গালভরা—১ হাজার ৩০০ ডলার। ফ্লপ হওয়ার জন্য এসবই তো যথেষ্ট। এখন দেখার বিষয়, গ্যালাক্সি ফোল্ড কেমন করে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, একই দামে বাজারের সেরা ফোন দুটি কেনা যাবে। মানুষ কেন ঝুঁকি নেবে এর বেলায়? আগ্রহী ক্রেতারা কেনার পর রিভিউ দেবেন নিশ্চিত, আমরা না হয় সেই দিনের অপেক্ষায় থাকি। স্যামসাংয়ের ওয়েবসাইটে গ্যালাক্সি ফোল্ডের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘আমরা কেবল ফোনের শেপে বদলে ফেলিনি, আমরা আগামীকালের শেপও বদলে ফেলেছি।’ কথায় নয়, কাজেই পরিচয়।

সূত্র: দ্য ভার্জ ও টেক রাডার