কোন লেন্সে কোন ছবি?

‘চোখ বাস্তবতা দেখে। লেন্স সত্যকে ধারণ করতে বাস্তবতাকে অতিক্রম করে দেখে।’

ক্যামেরার লেন্সকে একটি দৃশ্যের কোণ বলা হয়, যা সেই সীমার মধ্যে রয়েছে, যা বিষয়বস্তুকে ফোকাল লেন্থ এবং ইমেজিং ফরম্যাট অনুসারে মানুষের সাধারণ দৃষ্টির সঙ্গে মিল রেখে আলোকচিত্র হিসেবে চিত্রিত করে।

ডিএসএলআর (ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্ট) ক্যামেরায় নানা ধরনের ফোকাল লেন্থের লেন্স ব্যবহার করা হয়। কাজের ধরন বুঝে আলোকচিত্রীরা বিভিন্ন লেন্স ব্যবহার করেন।

ফোকাল লেন্থ

বিষয়বস্তু যখন ফোকাস হয়, তখন লেন্স এবং ইমেজ সেন্সরের মাঝখানের দূরত্বকে লেন্সের ফোকাল লেন্থ বলে। এই দূরত্বকে সাধারণত মিলিমিটারে (মিমি) মাপা হয়। যেমন একটি জুম লেন্সের বেলায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ফোকাল লেন্থ ১৮-৫৫ মিমি। যদিও এই ফোকাল লেন্থের লেন্সটি ক্যানন বা নিকনের সেমি ডিএসএলআর ক্যামেরার সঙ্গে কিট হিসেবে পাওয়া যায়। দামও খুব একটা বেশি না। মাত্র আট হাজার টাকায় ক্যানন অথবা নিকন যেকোনো ব্র্যান্ডের এই লেন্স কিনতে পাওয়া যায়।

ফিশ আই লেন্স

ফিশ আই লেন্সকে বলা হয় মাছের চোখ। কারণ, মাছ যেমন তার লেজ দেখতে পায়, ফিশ আই লেন্সও তেমনি ১৮০ ডিগ্রি কোণ পর্যন্ত দেখতে পায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফিশ আই লেন্স দিয়ে যেকোনো সাধারণ একটি বস্তুকে খুব সহজে অতিকায় দানবের মতো দেখানো যায়। বিশেষ করে প্রত্নতাত্ত্বিক বা স্থাপত্য নিদর্শনের ছবি তুলতে ফিশ আই লেন্সের ব্যবহৃত হয় বেশি। ক্যানন ইএফ ১০-২২ মিমি ফিশ আই লেন্সের দাম ৬২ হাজার টাকা। একটি নিকনের ১০-২৪ মিমি ফিশ আই লেন্সের দাম ৩০ হাজার টাকা।

ওয়াইড অ্যাঙ্গেল জুম লেন্স

ইএফ ১৬-৩৫ মিমি লেন্সকে বলা হয় ওয়াইড অ্যাঙ্গেল জুম বা ওয়াইড টু ওয়াইড লেন্স। এর অ্যাপারচার হচ্ছে এফ/৪। ক্যানন সিরিজের এই লেন্সের দাম পড়বে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। আবার পেশাদার আলোকচিত্রীদের খুব পছন্দের একটি লেন্স হচ্ছে ক্যাননের এল (লাক্সারি) সিরিজের ১৬-৩৫ মিমি লেন্স, যার অ্যাপারচার হচ্ছে এফ/২.৮। এল (লাক্সারি) সিরিজের লেন্সগুলোর বিশেষ সুবিধা হচ্ছে রং, শার্পনেস, দ্রুত ফোকাস ইত্যাদি। বিশেষ করে এই ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স ফটোসাংবাদিকতায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এই লেন্সের দাম পড়বে প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। নিকনের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল জুম লেন্স হচ্ছে এএফ-এস নিক্কর ১৪-২৪ মিমি। যার অ্যাপারচার হচ্ছে এফ/২.৮জি, ইডি। এই লেন্সের দাম পড়বে প্রায় ৯২ হাজার টাকা।

মিড ওয়াইড প্রাইম লেন্স

৩৫ মিমি ফোকাল লেন্থের লেন্সকে বলে মিড ওয়াইড প্রাইম লেন্স। মূলত প্রামাণ্য ছবি আলোকচিত্রীদের পছন্দের লেন্স এটি। ক্যাননের ইএফ ৩৫ মিমি অ্যাপারচার এফ/১.৮ ইউএসএম লেন্সটির দাম পড়বে ৩৮ হাজার টাকা। অপরদিকে ৩৫ মিমি অ্যাপারচার এফ/১.৪ এল (লাক্সারি) সিরিজের লেন্সটির দাম পড়বে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। নিকন সিরিজের ৩৫ মিমি অ্যাপারচার এফ/১.৪ লেন্সটির দাম পড়বে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

প্রাইম লেন্স

৫০ মিমি ফোকাল লেন্থের লেন্সকে প্রাইম লেন্স বলে। এই লেন্স মূলত পোর্ট্রেট তোলার জন্য বেশি ব্যবহার হয়। এই লেন্সের তিন ধরনের অ্যাপারচার নম্বর হয়। যেমন এফ/১.২, এফ/১.৪ এবং এফ/১.৮। বলা হয়ে থাকে, মানুষের সাধারণ দৃষ্টিসীমা ৫০ মিমির কাছাকাছি। যার জন্য ৫০ মিমি প্রাইম লেন্সের ছবি খুব বেশি জীবন্ত মনে হয়। শুধু তা–ই নয়, এই লেন্স শিক্ষানবিশ আলোকচিত্রীদের জন্য একটি আদর্শ লেন্স।

ক্যাননের এল (লাক্সারি) সিরিজের ৫০ মিমি অ্যাপারচার এফ/১.২ লেন্সের দাম ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে নিকনের ৫০ মিমি অ্যাপারচার এফ/১.৪ লেন্সের দাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

ম্যাক্রো লেন্স

ম্যাক্রো লেন্সের কয়েক ধরনের ফোকাল লেন্থ হয়। যেমন ৫০ মিমি, ৮৫ মিমি, ১০০ মিমি, ১০৫ মিমি ও ১৩৫ মিমি। ৫০ মিমি ফোকাল লেন্থ, বিশেষ করে পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত হয়। ৮৫ মিমি ফোকাল লেন্থ ফুল, ক্ষুদ্র প্রাণী বা অন্যান্য সূক্ষ্ম বিষয়ের ছবি তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়। ১০০ মিমি ফোকাল লেন্থ মূলত ফুড ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত হয়। ১০৫ মিমি এবং ১৩৫ মিমি লেন্স স্ট্যাম্প, প্রজাপতি বা ফড়িংয়ের ডানার সূক্ষ্ম কারুকাজের ছবি তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়।

টেলিফটো বা সুপার টেলিফটো লেন্স

সাধারণত ২০০ মিমি থেকে ৩০০ মিমি ফোকাল লেন্থকে টেলিফটো লেন্স বলে। ৪০০ মিমি থেকে ৮০০ মিমি ফোকাল লেন্থকে সুপার টেলিফটো লেন্স বলে। ২০০-৩০০ মিমি টেলিফটো লেন্সগুলো ব্যবহৃত হয় পোর্ট্রেট, ফ্যাশন, গ্ল্যামার ইত্যাদি বিষয়ের ছবি তোলার জন্য। সুপার টেলিফটো ৪০০-৮০০ মিমি লেন্সগুলো ব্যবহৃত হয় মূলত স্পোর্টস, পাখি, অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা ইত্যাদি বিষয়ের ছবি তোলার জন্য।

ক্যানন অথবা নিকনের টেলিফটো বা সুপার টেলিফটো লেন্সগুলোর দাম দেড় লাখ থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

* বাজারের নানা উৎস থেকে লেন্সের দাম সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলে দামের তারতম্য হতে পারে।


লেখক: প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক