কত মানুষ কীভাবে মরছে

সূত্র: বিবিসি
সূত্র: বিবিসি

মৃত্যু অবধারিত। প্রতিনিয়ত মানুষ মরছে রোগ–শোক বা দুর্ঘটনায়। মৃত্যু হচ্ছে রাস্তাঘাটে, হাসপাতালে কিংবা বাড়িতে বা যুদ্ধের ময়দানে। কিন্তু ঠিক কোন কোন কারণে কত মানুষ মারা যাচ্ছে, বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মনে হতে পারে সন্ত্রাস, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। কিন্তু গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, বিশ্বে মোট মৃত্যুর মাত্র দশমিক ৫ শতাংশের পেছনে দায়ী এগুলো। মানুষ মরছে এমন সব কারণে, যা একটু সচেতন হলেই প্রতিরোধ করা যায়। সরকারি পদক্ষেপও কমিয়ে আনতে পারে অনেক মৃত্যু।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর পেছনে যে কারণটি এককভাবে সবচেয়ে বেশি দায়ী, সেটি হলো হৃদ্‌রোগ। প্রতিবছর যত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তার প্রতি তিনজনে একজন মরছে হৃদ্‌রোগে। ক্যানসারে মৃত্যুর চেয়ে যা দ্বিগুণ। ক্যানসার বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ। প্রতি ছয়টি মৃত্যুর একটির কারণ ক্যানসার। অন্য অসংক্রামক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও স্মৃতিভ্রংশতা মানুষের মৃত্যুর কারণের তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে।

অবাক করার বিষয় হলো মানুষ এখনো প্রতিরোধযোগ্য কারণেই বেশি মরছে। ২০১৭ সালে বিশ্বে প্রায় ১৬ লাখ লোক মারা গেছে ডায়রিয়ায়। এই পরিসংখ্যান ডায়রিয়াকে মানুষের মৃত্যুর কারণের তালিকায় শীর্ষ দশে তুলে এনেছে। কোনো কোনো দেশে এটি এখনো অন্যতম প্রাণঘাতী রোগ।

অন্যদিকে, নিওনেটাল ডিজঅর্ডারে নবজাতকের মৃত্যুও আছে তালিকায়। ২০১৭ সালে বিশ্বে মারা গেছে ১৮ লাখ নবজাতক। জন্মের ২৮ দিনের মধ্যেই মৃত্যুকে নবজাতকের মৃত্যু বলা হচ্ছে। ধনী দেশের চেয়ে দরিদ্র দেশে নবজাতক মৃত্যুর হার বেশি। জাপানে প্রতি এক হাজারে একটি নবজাতক মারা যায়। দরিদ্র দেশগুলোতে এই সংখ্যা প্রতি ২০টিতে একটি।

সড়ক দুর্ঘটনা ধনী-গরিব উভয় দেশেই মানুষের মৃত্যুর একটি বড় কারণ। ২০১৭ সালে বিশ্বে ১২ লাখ লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তবে এখানেও ধনী দেশ মৃত্যুহার কমের দিক দিয়ে এগিয়ে।

বিশ্বে খুনের শিকার হয়ে যত লোক মারা যায়, তার দ্বিগুণ মানুষ মরে আত্মহত্যা করে। যুক্তরাজ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা পৃথিবীর গড়ের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি। দেশটিতে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ এটি।

শিশুরা সংক্রামক রোগে বেশি আক্রান্ত হয় ও মারা যায়। উনিশ শতকে প্রতি তিনটি শিশুর একটি পাঁচ বছর বয়সের আগেই সংক্রামক রোগে মারা গেছে। তবে বর্তমানে টিকা, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানি পানের কারণে শিশুমৃত্যু হার অনেক কমেছে।

এইচআইভি বা এইডসের মতো নতুন রোগের বিস্তার বিশ্বে মৃত্যুহার কমার গতি টেনে ধরতে পারে। সাহারা আফ্রিকায় এইডসে মৃত্যুহার অনেক বেশি। গত কয়েক দশকে মৃত্যুহার ওই এলাকায় কমতে শুরু করলেও এইডসের কারণে মৃত্যুহার এখন বেড়েছে।