সূর্যের কাছাকাছি সরে এসেছে বৃহস্পতি

এত দিন বলা হতো, সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্য থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে ও নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে। তবে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, বৃহস্পতি গ্রহ তার আগের অবস্থান থেকে সূর্যের দিকে চার গুণ কাছে সরে এসেছে। মহাকাশ বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা–বিষয়ক ইউরোপের খ্যাতনামা গবেষণা সাময়িকী অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস–এ সম্প্রতি এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি করেছেন সুইডেনের লুন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়টির জ্যোতির্বিদ্যা বিভাগের পিএইডি গবেষক সিমোনা পিরানি এই গবেষণা নিবন্ধের মূল লেখক।

সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতি। গবেষকেরা বলছেন, উৎপত্তির সময় গ্রহটি এখনকার মতো বড় ছিল না। এটি ছিল পৃথিবীর চেয়ে ছোট বা পৃথিবীর সমান। ক্রমে এটি মহাজাগতিক ধূলিকণা সঞ্চয় করে আকারে বড় হয়। সূর্যের মধ্যে ঘূর্ণমান গ্যাসমণ্ডলের মহাকর্ষ বলের কারণে গ্রহটি তার কক্ষপথের দূরত্ব এবং কক্ষপথের ব্যাসার্ধ কমিয়েছে। গবেষকদের দাবি, উৎপত্তিস্থলের চেয়ে সূর্যের চার গুণ কাছে সরে এসেছে বৃহস্পতি।

সৌরজগতের উৎপত্তি হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে বের করেছেন, উৎপত্তির ২০ থেকে ৩০ লাখ বছর পর বৃহস্পতির স্থানান্তর শুরু হয়। এই স্থানান্তর প্রায় ৭ লাখ বছর ধরে চলে। বিজ্ঞানীরা এই দাবির সপক্ষে একটি প্রমাণও হাজির করেছেন।

সৌরজগতে মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যে থাকা অসংখ্য গ্রহাণুকে বলা হয় গ্রহাণুপুঞ্জ। গ্রহাণু রয়েছে বৃহস্পতির কক্ষপথেও, এদের ট্রোজান গ্রহাণু বলা হয়। ট্রোজান গ্রহাণুগুলো দুই অংশে বিভক্ত। এর একটি বৃহস্পতির সামনে দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, অপরটি পেছন থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পেছনের গ্রহাণু সংখ্যার চেয়ে সামনের অংশে ৫০ শতাংশ বেশি গ্রহাণু রয়েছে। সৌরজগতে প্রতিসমতা লক্ষ করা যায়। ফলে বিজ্ঞানীদের দাবি, ট্রোজানের দুই অংশেই সমান গ্রহাণু ছিল। ক্রমে বৃহস্পতি সূর্যের কাছে সরে আসায় গ্রহাণুপুঞ্জের গ্রহাণু বৃহস্পতির মহাকর্ষ বল টেনে নিয়ে সামনের অংশে ট্রোজানের গ্রহাণু বাড়িয়েছে।