যন্ত্র স্মার্ট, কিন্তু আপনি?

স্মার্ট যন্ত্রের পুরো সুবিধা নিতে যন্ত্র সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মডেল: প্রিমা, ছবি: স্মার্ট সময়
স্মার্ট যন্ত্রের পুরো সুবিধা নিতে যন্ত্র সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মডেল: প্রিমা, ছবি: স্মার্ট সময়

দুই বন্ধুর কথা হচ্ছে। একজন জিজ্ঞেস করল, ‘তুই কি ওয়াশরুমের কমোডে বসে পত্রিকা পড়িস?’
দ্বিতীয়জনের জবাব, ‘আগে পড়তাম, এখন পড়ি না। তবে কমোডে বসে পত্রিকার খবরগুলোর ছবি তুলে রাখি।’
প্রথমজন অবাক, ‘ছবি তুলে রাখিস! কেন?’

‘আরে, তারপর যখন বাসা থেকে বেরিয়ে যেখানেই ওয়াশরুমে যাই, তখনই ফোনে পত্রিকাটা পড়ে ফেলি। সময়ও বাঁচল, আবার ইন্টারনেট খরচাও কমে গেল।’

এই কৌতুক পড়ে আপনার হাসি পেল কি? না পেলেও একটা কৌশল কিন্তু আপনি জানতে পারলেন। কৌশলটা বেশ স্মার্ট কি না? আর হাতের ফোনটিকে যিনি এত বিচিত্র কৌশলে কাজে লাগান, তাকেও স্মার্ট না বলে উপায় কী!

আবার এমন অনেককেই দেখি মাঝেমধ্যে, যাদের ‘স্মার্টনেস’ বেশ ভাবায়। যেমন পরিচিত একজন দুটি ঢাউস আকারের স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। কিন্তু কোথাও বের হওয়ার আগে বিগলিত হাসি হেসে অনুরোধ করেন এভাবে, ‘ভাই, একটা গাড়ি ডেকে দেন না, মতিঝিল যেতে হবে।’ এ যেন একেবারে ‘চোখ থাকিতেও অন্ধ’।

লোকাল বাসে উঠলে প্রায়ই একটি বাক্য চোখে পড়ে, ‘ব্যবহারেই বংশের পরিচয়’। স্মার্ট যন্ত্রের বেলায় এর আধুনিকায়ন হতে পারে এ রকম, ‘ব্যবহারেই স্মার্টনেসের পরিচয়’। এই বাক্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ দুটি হলো ‘ব্যবহার’ এবং ‘যথাযথ’। হাতে বা ঘরে স্মার্ট যন্ত্র থাকলেই স্মার্ট হয়ে ওঠা যায় না। যন্ত্রটি আপনি যথাযথ ব্যবহার করছেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়। কথা হচ্ছিল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীরের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, ‘প্রতিটি যন্ত্র ব্যবহার করার আগে অবশ্যই সাধারণ একটা ধারণা থাকতেই হয়। যন্ত্র যা-ই হোক না কেন, গাড়ি, টেলিভিশন বা স্মার্টফোন, ব্যবহারের আগে একটা ধারণা নিয়ে নিন। যন্ত্রটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইলে দরকার জানাবোঝা এবং সেগুলো ব্যবহারিকভাবে কাজে লাগানো। অনেকেই কিন্তু এটা করেন না। ধরা যাক, স্মার্টফোনের ক্যালেন্ডার অ্যাপটির কথা। এটি অনেকে খুলেও দেখেন না। অথচ এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তাই যন্ত্রে যে সুবিধাগুলো আছে, সেগুলো সম্পর্কে জানুন। যন্ত্র কেনার পর ঘেঁটে দেখতে দেখতেই এই জানাবোঝা হয়ে যায়। এরপর তা কাজে লাগান। আর তা না হলে দাম দিয়ে কেনা যন্ত্রটি কেবল পেপারওয়েট হিসেবেই থেকে যাবে।’

সৈয়দ আলমাস কবীরের কথায় ‘সর্বোচ্চ’ শব্দটি খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই। খেয়াল করে থাকলে দিনের ২০ ঘণ্টাই স্মার্ট যন্ত্র নিয়ে কাটাতে যাবেন না! তাতে করে স্মার্ট হয়ে ওঠার সম্ভাবনা মাঠে মারা যাবে! এখানে সর্বোচ্চ বলতে স্মার্ট যন্ত্র থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করার কথা বোঝানো হয়েছে। স্মার্টফোন নিয়ে বহুল অভিযোগের একটি হলো, ‘দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যায়’। যন্ত্রটি যখন স্মার্ট, তখন সেটির তো বেশি বেশি চার্জই দরকার। একটু বুদ্ধি খাটালে কিন্তু এক চার্জে দিন পার করা যায়। এ জন্য কী করতে হবে? না, বিশেষজ্ঞের কাছে ছুটে যাওয়ার দরকার নেই। ফোনটি সঠিক নিয়মে চার্জ দিন। মানে চার্জ ২০ শতাংশের নিচে নামতে দেবেন না। আবার ৮০ শতাংশের বেশিও দেবেন না। একদম মানব শরীরের মতো। ফোন যেসব সুবিধা বা অ্যাপ বেশি চার্জ শেষ করে সেসব চিহ্নিত করুন। প্রয়োজন শেষে সেগুলো বন্ধ রাখুন। চার্জ যখন যাই যাই করছে, তখন ‘লো ব্যাটারি’ অপশন চালু করুন। না হয় পর্দার উজ্জ্বলতা (ব্রাইটনেস) কমান, ইন্টারনেট বন্ধ রাখুন, গেমস বা ভারী অ্যাপকে বিরতিতে পাঠান। লোকেশন বন্ধ করে রাখলেও কাজে আসবে। অ্যাপ না চালালেই যে সব বন্ধ হয়ে যায়, তা নয়। পুরোপুরি বন্ধ না করলে ভেতরে-ভেতরে সব অ্যাপই কাজ চালাতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় একটু পরিবর্তন আনলে এভাবে বলা যায়, ‘হে অ্যাপ, তুমি স্মার্টফোনে কাজ করে যাও গোপনে গোপনে…।’ এই ‘গোপন কাজে’ বাধা দিন, চার্জ থাকবে অটুট। স্মার্টফোনের মতো অন্য সব যন্ত্রের বেলায়ও একই কথা, যথাযথ ব্যবহারই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।

এক বন্ধু আছে, অনেক আগে যার হাতে ছিল একটি শক্তপোক্ত ফিচার ফোন। ফোনটি এতটাই শক্তপোক্ত ছিল যে সেটি নষ্টই হচ্ছিল না! তাই বন্ধুটি বার কয়েক ওই ফোন দিয়ে ঢিল মেরে গাছ থেকে আমও পেড়েছিল! ফোন ব্যবহারের বিরল নজির যাকে বলে! কিন্তু একে কি আর যথাযথ ব্যবহার বলা চলে? ফোনটি যদি স্মার্ট হতো আর বন্ধুটি যদি কোনো অ্যাপ ব্যবহার করে গাছে ওঠার মই নিয়ে আসার ব্যবস্থা করত? সেই মই বেয়ে যখন সে টসটসে পাকা আম নিয়ে নিচে নামত, তখন কি তাকে স্মার্ট বলা হতো? সঠিক উত্তর বের করতে পারলে ধরে নেব, আপনি যথেষ্ট স্মার্ট!