বিগ ডেটা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে নতুন অস্ত্র

টেলিনর
টেলিনর

ম্যালেরিয়ার বিস্তারের তথ্য এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মানুষের গতিবিধির তথ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে ওষুধপ্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার অবস্থান শনাক্ত করা যাবে। হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ, টেলিনর গ্রুপ, মাহিডোল-অক্সফোর্ড রিসার্চ ইউনিট এবং বাংলাদেশের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

‘ম্যাপিং ইমপোর্টেড ম্যালেরিয়া’ শীর্ষক এ গবেষণায় ম্যালেরিয়ার পরজীবী বংশানুগতি ও মানুষের গতিবিধি ব্যবহার করা হয়েছে। রোগবিস্তারে মানুষের গতিবিধির অবস্থান পরিমাপের ক্ষেত্রে গবেষণাটি এখন পর্যন্ত অন্যতম প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মানুষের চলাফেরা ওষুধপ্রতিরোধী নতুন আকারের ম্যালেরিয়ার বিস্তার ঘটায়। এ গবেষণার লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার স্বাস্থ্য খাতে নতুন এ ঝুঁকি নির্ণয় ও সমাধানে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা।

রোগবিস্তার–সংক্রান্ত বিদ্যা, ভ্রমণ জরিপ, পরজীবী বংশবিস্তারের তথ্য এবং অজ্ঞাতভাবে সংগৃহীত মোবাইল ফোনের তথ্যের মাধ্যমে গবেষণায় দক্ষিণ–পূর্ব বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ওষুধপ্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার পরিবর্তনসহ পরজীবীর ম্যালেরিয়ার ভৌগোলিক বিস্তার জানা সম্ভব হয়েছে।

গবেষণা থেকে জানা যায়, দক্ষিণ–পূর্ব বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাজুড়ে এ পরজীবীর বিস্তার ও এই রোগ সংক্রমণ এর জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মতোই।

এ গবেষণা নিয়ে গবেষণার প্রকাশক ই-লাইফ সায়েন্সকে হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট শি হ্যান চ্যাং বলেন, ‘একটি সমন্বিত পদ্ধতি পরজীবী রোগবিস্তারে ভৌগোলিক অবস্থান ও তীব্রতা নিয়ে আমাদের পূর্ণ ধারণা দিয়েছে।’

টেলিনর রিসার্চের সিনিয়র রিসার্চ সায়েন্টিস্ট কেন্থ এনইয়ো মনসেন বলেন, ‘এ গবেষণা প্রমাণ করে, ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের কাছে সম্ভাব্য অস্ত্র রয়েছে।’ এনইয়ো মনসেন আরও বলেন, ‘স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ রোগবিষয়ক তথ্য এবং অজ্ঞাতভাবে নেটওয়ার্ক থেকে পাওয়া তথ্য আমাদের জানতে সহায়তা করেছে যে ম্যালেরিয়া পরজীবীর ওষুধপ্রতিরোধী পরিবর্তন কি স্থানীয়ভাবে ছড়ায়, নাকি তারা বাইরে থেকে আসে।’

টেলিনর রিসার্চের ফেলো জিওফ্রে ক্যানরাইট বলেন, ‘ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে মশারির মতো প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে জনসাধারণের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করতে এ গবেষণা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের জন্য উপকারী হবে। এটাকে আমরা একটা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি যে কীভাবে সমাজে সবার ভালো নিশ্চিত করতে তথ্যের ব্যবহার করা যেতে পারে।’

দুরারোগ্য ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় এখন শুধু একটি ওষুধই কার্যকর এবং কম্বোডিয়ায় ওষুধের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। পর্যটকদের ভ্রমণের মাধ্যমে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় এ রোগের বিস্তার ঘটেছে। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া ও বাকি বিশ্বের মাঝামাঝি অবস্থান করার কারণে এ গবেষণার জন্য বাংলাদেশকে নির্বাচিত করা হয়েছে। ওষুধপ্রতিরোধী অঞ্চলসহ অন্যান্য স্থানে ম্যালেরিয়ার অবস্থান শনাক্ত করার সক্ষমতা জাতীয় স্বাস্থ্য কর্মসূচির ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার পাচ্ছে এবং এ গবেষণায় সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই খুঁজে বের করা হয়েছে।

বর্তমানে ম্যালেরিয়া বিশ্বজুড়েই অভিশাপস্বরূপ। প্রতিবছর ২০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং ৪ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। প্রতিবেদনটি পড়ার লিংক