জৈব প্রযুক্তি: এক নতুন পৃথিবী তৈরির পথে

জৈব প্রযুক্তির হাত ধরে বহু শিল্পোৎপাদনের প্রক্রিয়া বদলে গেছে। বিশেষত ওষুধশিল্পে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। ছবি: সংগৃহীত
জৈব প্রযুক্তির হাত ধরে বহু শিল্পোৎপাদনের প্রক্রিয়া বদলে গেছে। বিশেষত ওষুধশিল্পে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

পিঠে শুভ্র পাখা লাগিয়ে অপ্সরা তো কতজন সাজে। কিংবা মৎস্যকন্যার গল্প প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ঘুরে বেড়ায়, স্বপ্ন দেখায়। আকাশ, মাটি ও পানিতে মানুষের কর্তৃত্ব সম্প্রসারণের ইচ্ছাই এই স্বপ্নের উৎস। এই বল্গাহীন স্বপ্নই আবার সুপারম্যান থেকে শুরু করে হালের এক্সম্যানের নির্মাতা। সুপারম্যানের শক্তির উৎস যেখানে ভিন গ্রহ, সেখানে এক্সম্যান বেরিয়ে আসে পরীক্ষাগার থেকে। আর এই পরীক্ষাগারই এখন মানুষের সামনে নিয়ে এসেছে কল্পনার রাজ্যকে সত্যে পরিণত করার সম্ভাবনাকে। কীভাবে? সোজা উত্তর জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল।

পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এর বৈশিষ্ট্যের সঞ্চারটি ঘটেছে কোষের সবচেয়ে ক্ষুদ্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একক ডিএনএ ও জিনের অনুলিপি তৈরির মাধ্যমে। চার শ কোটি বছরের বেশি সময় ধরে এ-ই চলে আসছে, যে প্রক্রিয়ার মধ্যেই নিবদ্ধ রয়েছে বিবর্তনের মৌল সূত্রটি। কারণ, বিদ্যমান নানা বাস্তবতার কারণে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ডিএনএর মধ্যে ঘটে যেতে পারে কোনো পরিবর্তন, যা অনুলিপির মাধ্যমে পরের প্রজন্মে সঞ্চারিত হতে পারে। আবার অনুলিপি তৈরির সময়ও কিছু পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে। পুরো বিষয়টিই নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং তা থেকে উদ্ভূত নতুন প্রয়োজনের ওপর। আর এর মাধ্যমেই বিবর্তনের সূচনা, যা এই বহু প্রজাতি ও বৈচিত্র্যময় পৃথিবী উপহার দিয়েছে আমাদের। মোটাদাগে জিন থেকেই জিনের জন্ম—এই ছিল একমাত্র সত্য। ছিল বলা হচ্ছে, কারণ এখন আর এটিই একমাত্র সত্য নয়।

এখন নতুন জিন লিখে নেওয়া সম্ভব। অনেকটা লেখার মতো করেই ইচ্ছেমতো জিন–নকশা করা সম্ভব। আর এটিই এই পৃথিবীর প্রাণের ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করেছে। জিন সম্পাদনা করে নতুন জিনকাঠামো তৈরি করার এই প্রক্রিয়া জৈব প্রযুক্তি ও প্রকৌশলের অন্তর্ভুক্ত। এর মাধ্যমে ওষুধ, জ্বালানি, তন্তু, খাবার, গন্ধসহ এমন অনেক কিছুর উদ্ভাবন সম্ভব, যা শুধু কঠিনই নয় এত দিন অসম্ভব মনে করা হতো। এমনকি কোষ কী করবে এবং তা কী হয়ে উঠতে পারে, তারও নির্দেশনা তৈরি করা সম্ভব এই অণু পর্যায়ের নির্মাণের মাধ্যমে। শরীরের প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত কোষগুলোকে নির্দেশ দেওয়া সম্ভব যে তারা যেন চিকিৎসকের আদেশ পালন করে। এমনকি ভ্রূণকে নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে এমনভাবে বেড়ে উঠতে, যা তার উৎস প্রাণ থেকে একেবারে আলাদা।

জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল এক সম্পূর্ণ নতুন পৃথিবীর বার্তা নিয়ে আসছে আমাদের সামনে। খাদ্য, চিকিৎসা, পরিধেয় বস্ত্র, উৎপাদন উপায় থেকে শুরু করে পুরো বিশ্বকাঠামোই বদলে যেতে পারে। ফিরে আসতে পারে বিলুপ্ত প্রাণের দল। ছবি: রয়টার্স
জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল এক সম্পূর্ণ নতুন পৃথিবীর বার্তা নিয়ে আসছে আমাদের সামনে। খাদ্য, চিকিৎসা, পরিধেয় বস্ত্র, উৎপাদন উপায় থেকে শুরু করে পুরো বিশ্বকাঠামোই বদলে যেতে পারে। ফিরে আসতে পারে বিলুপ্ত প্রাণের দল। ছবি: রয়টার্স

অনেক কিছুই বদলে গেছে
এরই মধ্যে এই জৈব প্রযুক্তির হাত ধরে বহু শিল্পোৎপাদনের প্রক্রিয়া বদলে গেছে। বিশেষত ওষুধশিল্পে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে, যার প্রাথমিক উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ইনসুলিনের কথা। এখন এর সম্প্রসারণ ঘটছে নানা ক্ষেত্রে। জৈব প্রযুক্তি যেভাবে বিকশিত হচ্ছে, তা অন্য খাতের নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মিলে এক দারুণ বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রযুক্তি সমন্বয়ের দিশা দিচ্ছে। এই প্রযুক্তির বদৌলতে আজকের হাতি থেকে ফিরে আসতে পারে অতিকায় ম্যামথ, যা হয়তো দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়াবে সাইবেরিয়ায়। আসতে পারে নতুন নতুন ইতিবাচক অণুজীব। আর এই তাবৎ সম্ভাবনার মূল সূত্রটি লুকিয়ে আছে প্রোটিনে।

পৃথিবীর প্রাণজগতে মোটামুটি ৫০ লাখ ভিন্ন ধরনের প্রোটিনের অস্তিত্ব রয়েছে। এর সব কটির কাজের ধারা এখনো অজ্ঞাত। এমনকি সবচেয়ে সরল ব্যাকটেরিয়াতেও এমন প্রোটিন রয়েছে, যার কাজ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো ঠিকঠাক জানেন না। কিন্তু ওই ব্যাকটেরিয়ার জন্য ওই প্রোটিনটি অপরিহার্য। কারণ, ওই প্রোটিনের অনুপস্থিতিতে তার সংশ্লিষ্ট জিনটি মরে যাবে। অর্থাৎ প্রোটিন সম্পর্কে অনেক কিছু এখনো অজ্ঞাত থাকলেও একটি বিষয় কিন্তু নিশ্চিত যে প্রোটিনই প্রাণ। পৃথিবীর সব প্রোটিনের ক্ষেত্রেই এটি একটি সাধারণ সত্য। একটি প্রাণ, তা যত ক্ষুদ্র বা যত বড়ই হোক না কেন, তার পরিসর যা-ই হোক না কেন, সে যত বিস্ময়কর কাজই সম্পাদন করুক না কেন, তার ভেতরে যত বিস্ময়কর জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াই ঘটুক না কেন, তার প্রতিটি ক্রিয়া প্রতিটি প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে কোনো না কোনো প্রোটিন। এমনকি এই বসন্তে কোকিল যে কুহুতানটি তুলছে, তারও নির্দেশ আসছে এই প্রোটিন থেকেই। মাংস কিংবা মজ্জা, কাঠ কিংবা পাতা—এই সবকিছুই যেসব উপাদানে তৈরি, তা ওই প্রোটিনের সক্রিয় সংশ্লেষে তৈরি। আর এই সাধারণ সূত্রই মূলত জৈব প্রযুক্তির অসীম সম্ভাবনাকে সামনে এনেছে।

এই অসীম সম্ভাবনা বোঝা যাবে, যখন ৫০ লাখ ভিন্ন প্রোটিনের কথা বিবেচনা করা হবে। ধরা যাক ৬৬টি অ্যামিনো অ্যাসিডের (প্রোটিনের ক্ষুদ্রতম একক) সমন্বয়ে তৈরি সব প্রোটিনের কথা। সব বলতে কতগুলো? প্রতিটি অ্যামিনো অ্যাসিডের চেইনে ২০টি পৃথক সমন্বয়কে বিবেচনায় নিলে এ সংখ্যা হতে পারে ২ হাজার ৬৬টি। মনে রাখতে হবে যে প্রোটিনে মাত্র ৬৬টি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, তা খুবই ছোট।

সত্যিকার অর্থেই এক প্রোটিনের সমুদ্রে আমাদের বাস, যার রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিড বেকার। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, ২০০০ সাল নাগাদ তিনি হয়ে ওঠেন এই ক্ষেত্রের অঘোষিত নেতা, যার মূল কাজই ছিল প্রোটিনের প্রাকৃতিক কাঠামো খুঁজে বের করা। প্রোটিনে বিদ্যমান অ্যামিনো অ্যাসিডের ক্রম বিশ্লেষণ করে ডেভিড বেকার এর কাঠামো সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পুরোপুরি সফল হননি। কারণ, প্রোটিনের ভেতরে অ্যামিনো অ্যাসিডের শিকলগুলো এমন জড়াজড়ি করে থাকে যে সেখানে (আন্ত–আণবিক) এক অবিশ্বাস্য রকমের রাসায়নিক শক্তি ক্রিয়াশীল থাকে। কিন্তু বেকার ল্যাব পিছপা হয়নি। সেই প্রচেষ্টা থেকেই গড়ে ওঠে আরজেডা নামের একটি প্রোটিন ডিজাইন কোম্পানি। পাঁচ বছর আগে ড. বেকার এত দিনের অর্জিত জ্ঞান থেকে প্রাকৃতিক প্রোটিনের রহস্য উন্মোচনচেষ্টায় ইস্তফা দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন।

ডেভিড বেকারের এই সিদ্ধান্তের ফল এল হাতেনাতে। তাঁরা দেখলেন, কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যার মধ্যে এমন প্রোটিন রয়েছে, যা বরফে থাকা ক্রিস্টাল কাঠামোর (ত্রিমাত্রিক স্তরবিন্যাস, যার কারণে বরফ একই সঙ্গে কঠিন ও পানির চেয়ে কম ঘন হয়) অনুরূপ কাঠামো তৈরি করতে পারে। বর্তমানে স্কি রিসোর্টগুলোয় কৃত্রিম তুষার তৈরিতে এই প্রোটিন ব্যবহার করা হয়। ঠিক একইভাবে এমন পারমাণবিক কাঠামো তৈরি সম্ভব, যা আরও বিস্ময়কর পদার্থের জন্ম দিতে পারে। বেকার ল্যাবের অ্যালেক্সিস করবেট ঠিক এমনই এক বিশেষ প্রোটিন তৈরি করেছেন, যা চাকার মতো একটি অক্ষ ধরে ঘুরতে পারে। নাম দেওয়া হলো ন্যানোমোটর। গতি শনাক্ত ও পরিমাপের জন্য মোবাইল ফোনে এ ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম এ প্রোটিন ব্যবহার করা গেলে তা আরও জটিল কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।

অ্যালেক্সিস করবেটের ন্যানোমোটর আরও বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রতিদিন কয়েক শ কোটি গিগাবাইট তথ্য উৎপন্ন হয়। মানুষ সত্যিকার অর্থেই তথ্যের এক মহাসমুদ্রে বাস করছে। এই তথ্য সংরক্ষণ এক বিরাট দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে এখন। ড. অ্যালেক্সিস করবেট যে ন্যানোমোটর তৈরি করেছেন, তা এ সমস্যার সমাধান দেখাচ্ছে। কারণ, একটি ক্ষুদ্র ডিএনএতেই এই কয়েক শ কোটি তথ্য জমা রাখা সম্ভব। ফলে এই জৈব প্রযুক্তি বিশাল তথ্য সমুদ্রকে একটি ছোট্ট গুদামঘরে কয়েক হাজার বছর সংরক্ষণের আশা দেখাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা একটাই, ‘ব্যয়’। তবে তা–ও খুব বড় সমস্যা নয়। ডিএনএ সিকোয়েন্সিং যন্ত্রের দাম ১৯৯৫-২০১৫ এই বিশ বছরে কল্পনাতীতভাবে কমেছে, যা সামনের দিনে আরও অনেক কমবে। ফলে ব্যয়কে আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। কারণ, বিজ্ঞানের অন্য শাখাগুলো বসে নেই।

এখন নতুন জিন লিখে নেওয়া সম্ভব। অনেকটা লেখার মতো করেই ইচ্ছেমতো জিন-নকশা করা সম্ভব। আর এটিই এই পৃথিবীর প্রাণের ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করেছে। ছবি: রয়টার্স
এখন নতুন জিন লিখে নেওয়া সম্ভব। অনেকটা লেখার মতো করেই ইচ্ছেমতো জিন-নকশা করা সম্ভব। আর এটিই এই পৃথিবীর প্রাণের ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করেছে। ছবি: রয়টার্স

বেকার ল্যাবের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক উদ্ভাবনটি এসেছে গবেষক জিবো চেনের হাত ধরে। তিনি ডিএনএর সর্পিল কাঠামোর (ডাবল হেলিক্স) মতো প্রোটিনের একটি কাঠামো তৈরি করেছেন, যার একাংশ অন্য অংশের সঙ্গে হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত। ডিএনএর ক্ষেত্রে এই বন্ধন নির্ভর করে এর ভিত্তি চারটি ক্ষারের ক্রমের ওপর। আর প্রোটিনের ক্ষেত্রে তা নির্ভর করে জিবো চেনের ওপর। জিবো চেন এখন পর্যন্ত ৬৪টি এমন প্রোটিন তৈরি করেছেন, যা ৩২টি জোড় তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে একটি প্রোটিনের কাজকে শর্তাধীন করা সম্ভব। অর্থাৎ একটি প্রোটিন একা কিছু করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার জোড়টি হাজির হচ্ছে।

প্রোটিনের কাজে এই শর্ত প্রয়োগের কৌশল অনেক বড় একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে প্রাণিদেহের কোষকে নতুন করে সাজানো সম্ভব, দেওয়া সম্ভব নতুন নির্দেশনা। এই পদ্ধতি এরই মধ্যে ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী গুরুত্বপূর্ণ কোষ টি-সেলে একধরনের জিনের সংযোজন ঘটানো হয়, যার কাজ হচ্ছে ক্যানসার কোষ শনাক্ত করে তা অপসারণে টি-সেলকে নির্দেশ দেওয়া। তবে এখনো এই পদ্ধতির ব্যবহার সংশয়মুক্ত হয়নি। কারণ, ক্যানসার কোষ শনাক্তে ভুলচুক হলেই বড় বিপদ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ নিয়ে এখন আরও বিস্তৃত পরিসরে গবেষণা চলছে। শুধু ক্যানসার নয়, চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেই মূল হাতিয়ার করে নিরাময়ের পথ দেখাতে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে এখন। মূল লক্ষ্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই আরও উন্নত করা।

এ ক্ষেত্রে ক্যালটেকের মাইকেল এলউইটজ আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে চান। শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা উন্নত করতে তিনি টি-সেল সংগ্রহ না করেই একটি জিনের অনুলিপি শরীরে প্রবেশ করাতে চান, যা ক্ষতিকর কোষগুলোকে বাজে কিছু করা থেকে বিরত রাখবে। আর এই প্রক্রিয়া ওই জিন সম্পন্ন করবে সুনির্দিষ্ট প্রোটিনের সঙ্গে জোড় সৃষ্টি করে। কারণ, জোড় সৃষ্টির মাধ্যমেই একটি প্রোটিনের কাজকে শর্তাধীন করা যায়। এর মাধ্যমে শরীরের কোষকেই ওষুধ, এমনকি সার্জনে পরিণত করা যাবে। অর্থাৎ আপনার চিকিৎসক আপনার শরীরের ভেতরেই বাস করবে।

আছে আরও নানা চমকপ্রদ উদ্ভাবন। প্রতিবছর ইন্টারন্যাশনাল জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড মেশিন (আইজেম) শীর্ষক একটি সম্মেলন হয়। গত বছরের অক্টোবরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে। সেখানে মূলত জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল নিয়ে কাজ করেন এমন তরুণ গবেষকেরা অংশ নেন। গেল বছরের সম্মেলনে বেশ কিছু বিস্ময়কর প্রকল্প তুলে ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি প্রকল্পে জিন সম্পাদনার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে মানুষের মতো ঘ্রাণশক্তির সঞ্চার করা হয়েছিল। আরেকটি দল উপস্থাপন করেছিল এমন একটি ছত্রাকের, যা মঙ্গল গ্রহে ঘাঁটি গাড়তে সক্ষম হবে। অর্থাৎ মঙ্গলের পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে। প্রকৃতি শাসন করে পৃথিবীকে খেপিয়ে তোলা মানুষের জন্য এটি নিঃসন্দেহে বড় সুখবর। এমন বহু প্রকল্পের উপস্থাপন করা হয়েছিল ওই সম্মেলনে।

সব মিলিয়ে জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল এক সম্পূর্ণ নতুন পৃথিবীর বার্তা নিয়ে এসেছে আমাদের সামনে। খাদ্য, চিকিৎসা, পরিধেয় বস্ত্র, উৎপাদন উপায় থেকে শুরু করে পুরো বিশ্বকাঠামোই বদলে যেতে পারে। ফিরে আসতে পারে বিলুপ্ত প্রাণের দল। মানুষে-মানুষে সম্পর্ক থেকে শুরু করে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধ—এই সবই বদলে যেতে পারে খোলনলচে। সে পরিবর্তন ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে এমন জায়গায় নিতে পারে, যেখানে ভোরের আলোয় বসে আগামীর শিশু অতীত আমাদের কথা শুনে হয়তো বলবে, ‘এমনও ছিল নাকি!’

আগামীকাল পড়ুন: জৈব প্রযুক্তি: আছে সম্ভাবনা, আছে সংশয়ও

ফজলুল কবির: সাংবাদিক