হুয়াওয়ের জন্য আরেক বড় ধাক্কা

মাইক্রোএসডি কার্ড ব্যবহারে হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি। ছবি: সংগৃহীত।
মাইক্রোএসডি কার্ড ব্যবহারে হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি। ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ব্যাপক আকারে পড়তে শুরু করেছে। হুয়াওয়েকে এসডি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসডি অ্যাসোসিয়েশন হচ্ছে বিশেষ বাণিজ্য সংস্থা, যারা এসডি ও মাইক্রোএসডি কার্ড ও যন্ত্রাংশের মান নিয়ে কাজ করে। এতে হুয়াওয়ের ভবিষ্যৎ কোনো স্মার্টফোন বা ল্যাপটপে অফিশিয়ালভাবে কোনো এসডি ও মাইক্রোএসডি কার্ড লাগানোর অনুমতি থাকছে না। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট নাইনটুফাইভ গুগলের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

এসডি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রযুক্তিবিষয়ক আরেক ওয়েবসাইট অ্যান্ড্রয়েড অথোরিটিকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা বলছে, ট্রাম্পের আদেশ মেনেই তাদের গ্রুপ থেকে হুয়াওয়েকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে চীনা প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে আরেকটি ধাক্কা খেল।

অবশ্য, বর্তমানে বাজারে থাকা হুয়াওয়ের হার্ডওয়্যারগুলোয় মাইক্রোএসডি ও এসডি কার্ড কাজ করবে। তবে নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের ভবিষ্যৎ পণ্যগুলোয় আর এসডি কার্ডের স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করতে পারবে না।

এর আগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মেনে গুগল, এআরএম, ইনটেল, কোয়ালকম ও ব্রডকম হুয়াওয়ের সঙ্গে কাজ ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। এর বাইরে ওয়াই-ফাই অ্যালায়েন্স সাময়িকভাবে হুয়াওয়ের সদস্যপদ স্থগিত করেছে। এ সংস্থাটি ওয়াই–ফাই খাতের মান নিয়ে কাজ করে। এর বাইরে র‍্যাম নিয়ে কাজ করা ‘জেইডিইসি’ নামের একটি সংস্থা থেকে নিজেই সরে এসেছে হুয়াওয়ে। এ ধাক্কার ফলে হার্ডওয়্যার তৈরিতে বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়বে প্রতিষ্ঠানটি।

অবশ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ মুহূর্তে এসডি কার্ডের সমর্থন হারানো হুয়াওয়ের জন্য বড় বিষয় নয়। অ্যান্ড্রয়েড ও উইন্ডোজের বিকল্প যেমন তৈরিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি, তেমনি মাইক্রোএসডি কার্ডের বিকল্পও তাদের হাতে রয়েছে। এর জন্যও আগে থেকে প্রস্তুত ছিল তারা। হুয়াওয়ের নিজস্ব ন্যানো মেমোরি কার্ড রয়েছে, যা প্রচলিত মাইক্রোএসডি কার্ডের চেয়ে ছোট। এটি নতুন ডিভাইসে বিকল্প হিসেবে সহজেই ব্যবহার করা যাবে।

গত সপ্তাহে হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করার পর সরকারি অনুমোদন ছাড়া হুয়াওয়ের পক্ষে মার্কিন প্রযুক্তি যন্ত্রাংশ কেনার পথ বন্ধ হয়ে যায়; যদিও তিন মাসের জন্য ওই আদেশ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, হুয়াওয়ে খুব বিপজ্জনক। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ বা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তাদের বিপদের মাত্রা বোঝা যায়।

এখন ট্রাম্প উল্টো সুরে বলছেন, হুয়াওয়েকে বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির অংশ করা সম্ভব। তাঁর ভাষ্য, ‘আমরা যদি চুক্তি করি, তবে যেকোনো রূপে এর অংশ হতে পারে হুয়াওয়ে।’

পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক ফাইভজি–সমর্থিত পণ্যের সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তার মিত্রদেশগুলো থেকেও চাপের মুখে পড়ছে হুয়াওয়ে। অনেকেই চীনা নজরদারির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তবে হুয়াওয়ে বলছে, তারা স্বতন্ত্র হিসেবে কাজ করে। চীন সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কোনো দেশের জন্য তারা হুমকি নয়।

হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ইতিমধ্যে বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে পড়তে শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পীড়নের জবাবে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো আরও শক্তিশালী হবে।