আইনি প্রক্রিয়ার পথে হাঁটল হুয়াওয়ে

হুয়াওয়ের প্রধান আইন কর্মকর্তা সং লিওপিং। ছবি: সংগৃহীত।
হুয়াওয়ের প্রধান আইন কর্মকর্তা সং লিওপিং। ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হুয়াওয়ের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্ট (২০১৯ এনডিএএ)-এর ৮৮৯ ধারা চ্যালেঞ্জ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে রায় পেতে আদালতে আবেদন (মোশন) করেছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রকে সাইবার নিরাপত্তা প্রদান করবে না। গতকাল বুধবার শেনজেনে হুয়াওয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আইন কর্মকর্তা সং লিওপিং।

সং লিওপিং বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তার অজুহাতে হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ করা হলেও সেটা তাদের নেটওয়ার্ক নিরাপদ রাখতে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারবে না। তারা নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে একটি ভুল ধারণা দিচ্ছে এবং প্রকৃত চ্যালেঞ্জের বিষয়ে হুয়াওয়ের মনোযোগ নষ্ট করছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদেরা একটি প্রাইভেট কোম্পানির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে, যা স্বাভাবিক নয়। এমনকি ইতিহাসে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি।’

সং আরও বলেন, ‘হুয়াওয়ে বিরুদ্ধে নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সরকার কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু তারা অভিযোগ বা সন্দেহ করছে।’

আবেদনে হুয়াওয়ের যুক্তি, ২০১৯ এনডিএএ-এর ৮৮৯ ধারাটি শুধু হুয়াওয়ের জন্যই করা হয়েছে। এ ধারার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সির প্রতি শুধু হুয়াওয়ের যন্ত্রাংশ ও সেবা ক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি বরং তৃতীয় কোনো পক্ষের (যারা হুয়াওয়ের যন্ত্রাংশ ও সেবা ক্রয় করে) সঙ্গে চুক্তি বা অনুদান দেওয়া বা ঋণ দেওয়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও এ ধারা কার্যকর হবে।

গত দুই সপ্তাহ আগে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের কালো তালিকাভুক্ত (এনটিটি লিস্ট) করার বিষয়েও অনুষ্ঠানে কথা বলেন সং লিওপিং। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই বিপজ্জনক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আজ তারা টেলিকম খাত ও হুয়াওয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করল। ভবিষ্যতে অন্য কোনো খাত, কোম্পানি বা অন্যান্য গ্রাহকদের সঙ্গেও তারা এটা করতে পারে।’

সং বলেন, ‘ন্যায়বিচারের জন্য বিচারপ্রক্রিয়াই সর্বশেষ প্রক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন ও সমন্বিত বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি হুয়াওয়ের পূর্ণ আস্থা আছে। এনডিএএর ভুলগুলো আদালতের মাধ্যমে সংশোধন করা যেতে পারে।’

আইনি পদক্ষেপের প্রধান পরামর্শদাতা গ্লেন ডি নেগার বলেন, ‘২০১৯ এনডিএএ-এর ৮৮৯ ধারাটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে উল্লেখিত আত্মপক্ষ সমর্থনের সাংবিধানিক অধিকার (বিল অব অ্যাটেইনডার), যথাযথ পদ্ধতি (ডিউ প্রসেস) এবং সংবিধান কর্তৃক অনুমোদিত ক্ষমতা (ভেস্টিং ক্লজ) নীতিমালার পরিপন্থী। অভিযোগ প্রমাণ করার মতো যেহেতু কোনো বিষয় নেই, তাই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আইনের ব্যাপার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাই এই বিষয়ে আদালতের তাৎক্ষণিক রায়ের যৌক্তিকতা রয়েছে।

হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই ধরনের দমনপীড়ন নীতি দেশটির নেটওয়ার্ককে আরও বেশি বিপদে ফেলতে পারে। তাই হুয়াওয়ে আশা করে, যুক্তরাষ্ট্র সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে তারা নিরপেক্ষ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

হুয়াওয়ের এই আবেদনের (মোশন) ওপর শুনানির জন্য আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।