ফেসবুকে বুড়ো চেহারা দেওয়া বিপদ না তো?

ফেসবুকে বুড়ো ছবি দেওয়ার ট্রেন্ড চলছে।
ফেসবুকে বুড়ো ছবি দেওয়ার ট্রেন্ড চলছে।

সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে অনেকেই ফেসঅ্যাপ দিয়ে নিজের ছবি সম্পাদনা করে ফেসবুকে তা পোস্ট করছেন। বুড়ো চেহারা পোস্ট করার বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু এর ব্যবহার নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, ফেসঅ্যাপ ব্যবহার করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই বিপদ ডেকে আনছেন না তো?

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সবাই এখন ফেসঅ্যাপ নিয়ে কথা বলছে। অ্যাপটি ছবি সম্পাদনা করে চেহারায় তারুণ্য বা বয়সের ভাঁজ দেখাতে পারে। নিজের ছবির ক্ষেত্রে এ অভিজ্ঞতা কেমন হয়, তা দেখতেই অনেকে ফেসঅ্যাপের বুড়ো ফিল্টার ব্যবহার করছেন। কিন্তু অনেকেই ফেসঅ্যাপের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর তথ্য কৌশলে সংগ্রহের অভিযোগ তুলছেন। ফেসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ অবশ্য এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ফেসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের সাইটে ছবি আপলোডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সব ছবি মুছে ফেলা হয়। ফেসঅ্যাপে ডিভাইসের ছবি আপলোডের অনুমতি দিলেও তারা কেবল নির্বাচিত ছবিটিই আপলোড করে। ডিভাইসের সব ফাইল তারা আপলোড করে না।

কিন্তু ফেসঅ্যাপকে কি আপনি বিশ্বাস করবেন? ফেসঅ্যাপ কিন্তু নতুন কোনো অ্যাপ্লিকেশন নয়। ২০১৭ সালেই এ অ্যাপ বিভিন্ন ফিল্টারের কারণে ভাইরাল হয়েছিল। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে চালু আছে এটি। নিউরাল ফেস ট্রান্সফরমেশনস অ্যাপ হিসেবে তৈরি করেছে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়্যারলেস ল্যাব। অ্যাপটির মাধ্যমে মানুষের মুখের বিভিন্ন রূপ বদল করার সুবিধা ওই সময় থেকেই চালু ছিল। ফিল্টারটি ভাইরাল হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন সাইটে বলা হচ্ছে, এটি অনেকটাই বাস্তবসম্মত ছবি তৈরি করতে পারছে এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এটি চ্যালেঞ্জ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। কার চেহারা বেশি মানানসই হয়েছে, তা দেখাতেই বুড়ো ছবি আপলোডের এ চ্যালেঞ্জ নেওয়া হচ্ছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ছবি সম্পাদনার কাজ করছে জনপ্রিয় অ্যাপটি। তবে এর ব্যবহার কিন্তু পরে বিপদ ডেকে আনতে পারে। এর শর্তাবলি সে কথাই বলছে। স্মার্টফোন থেকে যেকোনো ছবি নিজেদের সার্ভারে আপলোড করে এই ছবি এডিটিংয়ের কাজ করে ফেসঅ্যাপ। সেখানেই সন্দেহের সূত্রপাত।

টুইটারে এলিজাবেথ পটস উইন্সটাইন নামের এক নারী ফেসঅ্যাপ ব্যবহারের শর্তাবলি পোস্ট করে একটি টুইট করেছেন। সেখানে যা লেখা রয়েছে, তা পড়লে আপনা পিলে চমকে উঠবে। ফেসঅ্যাপ ব্যবহারের শর্তাবলিতে লেখা রয়েছে, এই অ্যাপ ব্যবহার করলে আপনি কোম্পানির সার্ভারে আপলোড করা সব ছবি, নিজের নাম, আপনি কী পছন্দ করেন, আপনার গলা—এসব তথ্য বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সম্প্রতি অ্যাপ নির্মাতা জসুয়া নোজি এক টুইটে ফেসঅ্যাপের পক্ষে অনুমতি ছাড়াই ব্যাপক তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ তুলেছেন। এ ছাড়া ফেসঅ্যাপের পক্ষে সংগৃহীত তথ্য নিয়ে ফেশিয়াল রিকগনিশন অ্যালগরিদম তৈরির সন্দেহ করছেন অনেকেই। ছবি মুছে ফেলার পরেও তা কাজে লাগিয়ে সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব।

ইউরোপের একাধিক দেশে ব্যক্তিগত তথ্য গ্রাহককে না জানিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ বেআইনি। সে ক্ষেত্রে ফেসঅ্যাপ যে দেশে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ বেআইনি নয়, সেখানে তথ্য পাঠিয়ে অন্য দেশের নিয়ম দেখিয়ে তথ্য সংগ্রহ চালিয়ে যাবে।

তবে ফেসঅ্যাপের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলছে, পেইড সাবসক্রিপশন মডেলের মাধ্যমে তারা অর্থ আয় করে। তারা কোনো নিয়মবহির্ভূত কাজ করছে না।

সম্প্রতি গুগল, ফেসবুকের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনার পর থেকে অনেকেই সচেতন হয়েছেন। এর আগেও একাধিক অ্যাপ এই ধরনের কাজ করে কয়েক কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। অনলাইন দুনিয়ায় এখন সবচেয়ে দামি জিনিস গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য। আপনার তথ্য অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাববেন নিশ্চয়ই?