ঐতিহাসিক অগ্রযাত্রার সেই দিন আজ

আজ ২০ জুলাই। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদে প্রথম মানুষের পদার্পণের ৫০ বছর পূর্তি। ১৯৬৯ সালের এই দিনে চাঁদের বুকে নিল আর্মস্ট্রং প্রথম পা রাখেন। তাঁর কিছুক্ষণ পরই চাঁদে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে পা রাখেন বাজ অলড্রিন। তাঁরা দুজনই মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার অ্যাপোলো-১১ চন্দ্রযানে করে চাঁদের বুকে অবতরণ করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক অভিযাত্রায় তাঁদের সঙ্গী ছিলেন মাইকেল কলিন্স। তিনি অবশ্য দুই সঙ্গীর সঙ্গে চাঁদে পা রাখতে পারেননি। কারণ তিনি চাঁদের কক্ষপথে কমান্ড মডিউলের দায়িত্বে ছিলেন। এই তিন মার্কিন নভোচারীই পরে ইতিহাসের কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন।

আর্মস্ট্রং মারা গেছেন ২০১২ সালে। তবে অলড্রিন (৮৯) ও কলিন্স (৮৮) এখনো জীবিত। যুক্তরাষ্ট্র চন্দ্রজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ৫০ বছর পর তাঁদের আবার একত্রে মিলিত করেছে। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার ঠিক সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে তাঁরা মিলিত হন ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের প্যাড ৩৯এ–তে। এখান থেকেই ৫০ বছর আগে অ্যাপোলো-১১ চন্দ্রযান উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। চাঁদে অবতরণের দিনটিও ছিল মঙ্গলবার।

পুরো পৃথিবীবাসীই চন্দ্রজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে চলতি সপ্তাহজুড়ে। ৫০ বছর আগে চন্দ্রবিজয় সরাসরি দেখানো হয়েছিল টেলিভিশনে। পৃথিবীর প্রায় ৬৫ কোটি লোক টিভিতে ওই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির সাক্ষী হয়েছিল। নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে পা ফেলে বলে উঠেছিলেন, ‘ওয়ান স্মল স্টেপ ফর আ ম্যান, ওয়ান জায়ান্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড।’ অর্থাৎ এটি একজন মানুষের জন্য ছোট একটি পদক্ষেপ, তবে মানবজাতির জন্য একটি বিশাল লাফ। টেলিভিশনে এ কথা সবাই শুনতে পান সে সময়। নাসা তাই এই সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের নামকরণ করেছে ‘জায়ান্ট লিপ উদ্‌যাপন’।

সে সময় টেলিভিশনে এই দৃশ্য দেখা বহু লোক সেই মুহূর্তটির স্মৃতিচারণা করেছেন। যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাশায়ারের মারলেন ফেন্টন বলেন, ‘আর্মস্ট্রং মডিউলের সিঁড়ি দিয়ে যখন নামছিলেন, আমরা দমবন্ধ করে সে দৃশ্য দেখেছিলাম। তিনি চাঁদের বুকে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সবাই আনন্দে প্রচুর কেঁদেছিলাম। এ এক অন্য অনুভূতি। আমরা ভেবেছিলাম, এ ঘটনা পৃথিবীর মানুষকে আরও কাছাকাছি আনবে। পৃথিবীকে আরও ভালো বানাবে।’

আর্মস্ট্রং যখন চাঁদের মাটিতে নামছিলেন, প্রায় ২ লাখ ৩৪ হাজার মাইল দূরে টেক্সাসের হিউস্টনে টিভিতে সে দৃশ্য দেখেছিলেন তাঁর দুই ছেলে মার্ক ও রিক। রিকের বয়স তখন ১২ বছর। দুই ছেলের চোখে তাঁদের বাবা তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নায়ক বটেই, পৃথিবীবাসীর কাছেও তা–ই। পাক্কা পাঁচ দশক পেরিয়ে কলিন্স জানান, তাঁর দেখা জীবনের সেরা দৃশ্য—নিল ও অলড্রিনের মডিউল যখন ফেরত আসছিল চাঁদের বুক থেকে মহাকাশে আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে। তিনি জানান, চন্দ্রজয়ের পেছনে প্রায় ৪ লাখ লোকের প্রচেষ্টা ছিল।

>

চন্দ্রজয়ের ৫০ বছর 
১৯৬৯ সালের এই দিনে চাঁদের বুকে নিল আর্মস্ট্রং প্রথম পা রাখেন
তাঁর কিছুক্ষণ পরই চাঁদে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে পা রাখেন বাজ অলড্রিন

চন্দ্রজয়ের মধ্য দিয়েই সৌরজগৎ নিয়ে পৃথিবীর মানুষের ধারণা আমূল বদলে যায়। অবসান হয় চাঁদ নিয়ে মানুষের প্রাগৈতিহাসিক কালের সব কল্পনার। প্রযুক্তিবিদ্যা ও প্রকৌশলের জন্যও এটি অনন্য এক অর্জন ছিল। অ্যাপোলো-১১–কে চাঁদে নিয়ে যেতে তৈরি হয়েছে এ পর্যন্ত নির্মিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রকেট স্যাটার্ন-৫। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই উৎক্ষেপণের পর পুরো চন্দ্রযাত্রার দৃশ্য ধারণে অ্যাপোলো-১১-এর ইগল মডিউলে বাজ অলড্রিনের জানালায় স্থাপন করা হয়েছিল একটি ১৬ মিলিমিটার টাইম-ল্যাপস ক্যামেরা। ওতে ধারণ করা সাদা-কালো ভিডিওতে দেখেছে পৃথিবীবাসী, নিল ও অলড্রিন চাঁদের সি অব ট্রাঙ্কুইলিটি অঞ্চলে ২১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট হেঁটে বেড়িয়েছিলেন।

নাসা এখন চাঁদে মানুষের স্থায়ী উপস্থিতির জন্য কাজ করছে। এই মিশনকে বলা হচ্ছে ‘আর্তেমিস’। এই নাম রাখা হয়েছে শিকার ও চাঁদের গ্রিকদেবী আর্তেমিসের নামে, যিনি আবার গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর যমজ বোন। নাসার ঘোষণা, এই মিশনেই চাঁদে প্রথম নারী পাঠানো হবে। এ পর্যন্ত চন্দ্রযাত্রায় পাঠানো সব নভোচারী ছিল পুরুষ ও শ্বেতাঙ্গ। নাসা চাঁদের কক্ষপথে একটি স্থায়ী মহাকাশ স্টেশন পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গেটওয়ে’। ভবিষ্যৎ চাঁদে মানুষের সব অবতরণ পরিচালিত হবে এখান থেকেই।

এদিকে ফ্লোরিডায় কেনেডি স্পেস সেন্টার আজ অনেকগুলো বিশেষ প্রদর্শনী করবে। এর মধ্যে থাকছে অ্যাপোলো-১১ চন্দ্রযাত্রায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ও নভোচারীদের পোশাক। টেক্সাসের হিউস্টনের ডিসকভারি গ্রিন উদ্যানে বেশ কিছু উন্মুক্ত প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এতে কোনো টিকিট থাকছে না। এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চাঁদের বুকে ২০২৪ সালের মধ্যেই আবার মানুষ পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র।