উড়ে আসা উপহার

‘জন্মদিনে কী আর দেব তোমায় উপহার! বাংলায় নাও ভালোবাসা, হিন্দিতে নাও পেয়ার।’

বছর ত্রিশ আগে সুরের আকাশে নামের একটি ভারতীয় বাংলা ছবিতে এই গান গেয়েছিলেন শক্তি ঠাকুর ও অলকা ইয়াগনিক। মেঘে মেঘে কত বেলা গেছে। এখন উপহার দেওয়া আরও সহজ। হোক বাংলায় ভালোবাসা, হিন্দিতে পেয়ার, স্প্যানিশে ‘আমোর’ কিংবা রুশ ভাষায় ‘লুবোভ’—কোনোটাই বলার প্রয়োজন নেই। এক ‘<3’ চিহ্ন দিয়ে সব প্রকাশ করে ফেলা যায়। কম্পিউটার বা স্মার্টফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুঝে নেয়, আপনি ভালোবাসার কথা বলতে চাইছেন।

কিন্তু বন্ধুর জন্মদিনে ‘মেসেজ’ বা ‘মেসেঞ্জারে’ স্রেফ ‘<3’ পাঠিয়ে কি নিস্তার পাওয়া যাবে? ভার্চ্যুয়াল জমানায় উপহার দেওয়ার আরও কত কী পথ আছে! ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম, দেখা পাইলাম না’ গেয়েও পার পাবেন না। কারণ বন্ধু বাড়িতে না থাকলেও আপনি তাঁর কাছে পৌঁছে দিতে পারেন ভার্চ্যুয়াল উপহার।

বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার কথাই ধরুন। গত বছর ধুমধাম করে তাঁর বিয়ে হলো মার্কিন গায়ক নিক জোনাসের সঙ্গে। বিয়ে উপলক্ষে আমাজনে একটি ‘ওয়েডিং রেজিস্ট্রি’ খুলেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। নতুন সংসারে তাঁর কী কী প্রয়োজন—সবকিছুর একটি তালিকা দেওয়া ছিল সেখানে। এই তালিকায় থালাবাসন, চামচ থেকে শুরু করে জায়গা পেয়েছিল পোষা কুকুরের বর্ষাতিও (রেইনকোট)! ব্যস, বর-কনে বা বিয়ের অতিথি—কাউকেই ঝক্কি পোহাতে হয়নি। অতিথিরা তালিকা থেকে বেছে নিয়েছেন, কে কোন উপহার দিতে চান। অনলাইনে দাম মিটিয়ে দেওয়ার পর ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া থেকে সেই উপহার পৌঁছে গেছে প্রিয়াঙ্কার দরজায়।

আবার এমন কিছু উপহারও আছে, যা কিনা ভার্চ্যুয়াল জগতেই থেকে যায়। বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছায় না। ঈদ, পয়লা বৈশাখ, ইংরেজি নববর্ষের মতো দিনগুলোতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ভার্চ্যুয়াল কার্ড আদান-প্রদান করেন। ইনবক্সে কার্ড পাঠানোর চল যেমন আছে। অনেকে আবার এক কার্ডের ছবি ফেসবুকে তুলে দিয়ে একগাদা বন্ধুকে সেখানে ট্যাগ করে দেন। কারও বিশেষ দিনে তাঁর উদ্দেশে কোনো গান উৎসর্গ করতে পারেন। অ্যাপলের আইটিউনসে এই ব্যবস্থা আছে।

বাংলাদেশে এখনো ভার্চ্যুয়াল উপহার সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। ভিনদেশে কিন্তু হরহামেশা চলছে। ধরুন, আপনার কোনো বন্ধু কিন্ডেল (আমাজনের ই-বুক) ব্যবহার করেন। আপনি তাঁকে অনলাইনে বই উপহার দিতে পারেন। অনলাইনে উপহার দেওয়ার উপায় রেখেছে হলমার্ক, নেটফ্লিক্স, এয়ারবিএনবি, উবারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। নেটফ্লিক্সে আপনি যেমন কয়েক মাসের ‘সাবসক্রিপশন’ উপহার দিতে পারেন, উবারে আপনি দিতে পারবেন একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ডলার। তবে এসবের বেশির ভাগই এখনো বাংলাদেশে চালু হয়নি।

ভার্চ্যুয়াল জগতে যাঁরা গেম খেলেন, তাঁদের মধ্যেও একধরনের উপহার দেওয়ার প্রচলন আছে। ক্যানডি ক্রাশ, পোকেমন গো, পাবজির মতো জনপ্রিয় মোবাইল ফোনভিত্তিক খেলাগুলোতে নানা ধরনের উপহার দেওয়া যায়। পাবজি–ভক্ত তরুণ মুসাব্বির হুসাইন উপহার দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন, ‘সহজ করে বললে, পাবজির দুনিয়ায় টাকা হলো ইউসি (আননোউন ক্যাশ)। এই ইউসি দিয়ে আপনি গেমের ভেতর অনেক কিছু কিনতে পারবেন। যেমন রয়াল পাস, পোশাক। গেমের মধ্যেই এগুলো ব্যবহার করতে হয়। ৬০০ ইউসির দাম বাংলাদেশি টাকায় ১০০০ টাকার কাছাকাছি।’

ভার্চ্যুয়াল জগতে উপহার পাওয়ার আনন্দ অবশ্য এখনো বাস্তবে উপহার পাওয়ার আনন্দকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি, সে কথা অধিকাংশ তরুণই মানেন। মেসেঞ্জারে কেউ আপনাকে হাজারটা ‘<3’ পাঠাতে পারে। তার সঙ্গে কি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, চোখে চোখ রেখে ভালোবাসি বলার তুলনা চলে!