পুরো একটি জাতিই হ্যাকড!

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসেন জেনোভ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। চলতি সপ্তাহে তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করে দিয়েছে হ্যাকাররা। শুধু তিনিই নন, তাঁর মতো বুলগেরিয়ার আরও পঞ্চাশ লাখেরও বেশি মানুষ সাইবার হামলার শিকার হয়েছেন। তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে অবাধে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি দেশে একসঙ্গে এতগুলো মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি যাওয়ার অর্থ হলো, পুরো একটি জাতিই হ্যাকড হয়েছে।

বলকান রাষ্ট্র বুলগেরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। তাদের মধ্যে কর্মক্ষম প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি। দেশটির আয়কর কার্যালয়ের কম্পিউটারব্যবস্থা হ্যাক করে ওই নাগরিকদের সবারই ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা। এতে জনসাধারণ রয়েছে আতঙ্কে, সরকার পড়েছে বিপাকে।

ব্যক্তিগত তথ্য চুরি যাওয়ায় ক্ষুব্ধ আসেন জেনোভ বলেন, ‘আমাদের সবারই ক্ষুব্ধ হওয়া উচিত। আমাদের জন্মতারিখ, বাড়ির ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর থেকে শুরু করে সব তথ্যই অনলাইনে রয়েছে। সবাই এসব তথ্য অবাধে পাচ্ছে। আমার ধারণা, শুধু বুলগেরিয়ায় এমনটা ঘটছে না।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাকারদের কাছে সরকারের তথ্যভান্ডার বেশ লোভনীয়। এসব তথ্যভান্ডারে নাগরিকদের প্রচুর তথ্য থাকে, যা পরে ‘কাজে’ লাগানো যায়। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ক্লিয়ারসুইফটের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা গাই বানকার বলেন, ‘আপনি আপনার পাসওয়ার্ড আরও জটিল করে অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত করতে পারবেন। কিন্তু সরকারের কাছে যে তথ্যগুলো রয়েছে, সেগুলোয় খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। যেমন, আপনার জন্মতারিখ পরিবর্তন হবে না, আপনি আগামীকালই বাসা পরিবর্তন করবেন না। তার মানে, অনেক তথ্য আছে যেগুলোর কার্যকারিতা ভবিষ্যতেও থাকবে। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাঁদের ক্ষেত্রে এসব তথ্য ৫ বছর, ১০ বছর এমনকি ২০ বছর পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।’

তথ্য সুরক্ষায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় গত বছর কঠোর আইন করা হয়েছে। তথ্যের অপব্যবহারের সাজার বিধানও রাখা হয়েছে ওই আইনে। সেদিক থেকে নাগরিকের তথ্যের সুরক্ষা দিতে না পারার কারণে বুলগেরিয়ার সরকার নিজেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি দেশটির জাতীয় রাজস্ব বিভাগের মুখপাত্র। তবে বুলগেরিয়ার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষাবিষয়ক কমিশন বলেছে, তারা এ ঘটনায় তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বুলগেরিয়ার সরকার বেশ বেকায়দায় রয়েছে। এখনো জানা যায়নি এত বড় হ্যাকের পেছনে কারা জড়িত। ২০ বছর বয়সী এক সাইবার নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

এর আগে ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবিষয়ক দপ্তরের ডেটাবেইস হ্যাক করে সামরিক বাহিনীর ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। সেটি ছিল বড় কোনো ডেটাবেইসে প্রথম সাইবার হামলার ঘটনা।