সংখ্যাটি কত?

গণিতে অনেক সময় কিছু স্বতঃসিদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। মনে হয় যেন যুক্তিতে গন্ডগোল আছে। তাই কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন দেখা দেয়। যেমন সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো সংখ্যা যদি শুধু সেই সংখ্যা ও ১ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হয় আর কোনো উৎপাদক না থাকে, তাহলে সেটা হবে মৌলিক সংখ্যা। এই যদি সংজ্ঞা হয়, তাহলে ১ কেন মৌলিক সংখ্যা নয়? ১ তো সেই সংখ্যা এবং ১ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য, তাহলে মৌলিক সংখ্যা নয় কেন? এই যুক্তিটি ঠিকই আছে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। যেমন আমরা জানি, যেকোনো অমৌলিক (কম্পোজিট) সংখ্যাকে আমরা একাধিক মৌলিক সংখ্যার গুণফল হিসেবে প্রকাশ করতে পারি। ধরা যাক ৬০ = ২×২×৩×৫। এর একাধিক রূপ নেই, হয়তো অঙ্কগুলো কোনটার পর কোনটা হবে, সেই তারতম্য থাকবে। কিন্তু ৬০–এর মৌলিক উৎপাদকগুলো হলো দুটি ২, একটি ৩ এবং একটি ৫। এর বাইরে কিছু নেই। এখন ১ যদি মৌলিক সংখ্যা হয়, তাহলে লিখতে হবে ৬০ = ১×২×২×৩×৫ = ১×১×১×১×১×২×২×৩×৫...। তার মানে, যেকোনো অমৌলিক সংখ্যাকে আমরা একাধিক রূপে কিছু মৌলিক সংখ্যার গুণফল হিসাবে লিখতে পারি। এতে গণিতের সাধারণ ধারণায় একটু গন্ডগোল দেখা দেয়। তাই গণিতবিদেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ১ মৌলিক সংখ্যা হিসেবে ধরা হবে না। এতে কোনো দোষ নেই। হিসাবে কোনো ভুল হওয়ার আশঙ্কা নেই।

আরেকটি মজার হিসাব দেখুন। দুটি ক্রমিক মৌলিক সংখ্যার যোগফল ১৮ এবং গুণফল ৭৭। বের করতে হবে সংখ্যা দুটি কত। এটা অবশ্য আমরা মুখে মুখে যোগ করেই বলতে পারি ক্রমিক মৌলিক সংখ্যা দুটি কত হতে পারে। যেমন, যেহেতু যোগফল মাত্র ১৮ তাই ক্রমিক মৌলিক সংখ্যা দুটি ১৮–এর কম। আমরা এখন সহজেই বলতে পারি মৌলিক সংখ্যা দুটি ৭ ও ১১। এ দুটি মৌলিক সংখ্যা ক্রমিক এবং তাদের যোগফল = ১৮। এদের গুণফলও (৭×১১) = ৭৭।
তবে বীজগণিতের সাহায্যেও আমরা সংখ্যা দুটি বের করতে পারি। ধরা যাক সংখ্যা দুটি ক এবং খ। এদের যোগফল (ক + খ) = ১৮। আবার এদের গুণফল (ক×খ) = ৭৭। এখানে দুটি অজানা রাশি এবং দুটি সমীকরণ। সুতরাং আমরা অনায়াসে সমীকরণ দুটি থেকে ক ও খ-এর মান বের করতে পারি। প্রথমে, আমরা দেখছি, (ক + খ) = ১৮। সুতরাং ক = (১৮ - খ)। ক-এর এই মান দ্বিতীয় সমীকরণে বসিয়ে পাই, (১৮ - খ)× খ = ৭৭। অথবা (১৮খ - খ) = ৭৭। অথবা, (খ -১৮খ + ৭৭) = ০। অথবা (খ - ১১)(খ - ৭) = ০। এই সমীকরণ থেকে আমরা পাচ্ছি, খ = ১১ অথবা ৭। সে ক্ষেত্রে ক = ৭ অথবা ১১। তাই সংখ্যা দুটি ৭ ও ১১।

এ সপ্তাহের ধাঁধা
ক্যালকুলেটর বা খাতা–কলম ব্যবহার না করে চট করে বলুন তো, কোন সংখ্যার ঘনফল (কিউব) সেই সংখ্যার বর্গের ৩ গুণ? অর্থাৎ, ক-এর মান কত হলে (ক) = [(ক) × ৩] হবে?
খুব সহজ। অনলাইনে মন্তব্য আকারে অথবা [email protected] ই-মেইলে আপনাদের উত্তর পাঠিয়ে দিন। সঠিক উত্তর দেখুন আগামী রোববার অনলাইনে।

গত সপ্তাহের ধাঁধার উত্তর
ধাঁধাটি ছিল এ রকম: দুই অঙ্কের সংখ্যাগুলোকে তাদের অঙ্ক দুটির পার্থক্য দিয়ে ভাগ করলে যদি নিঃশেষে বিভাজ্য না হয়, তাহলে যে অবশিষ্ট থাকবে তাদের মধ্যে ক্ষুদ্রতমটি কত?

উত্তর
ক্ষুদ্রতম অবশিষ্ট ১

কীভাবে উত্তর বের করলাম
দুই অঙ্কের সংখ্যাগুলো ১০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত। আমরা ট্রায়াল অ্যান্ড এরার পদ্ধতিতে প্রশ্নের উত্তর বের করব। প্রথমে দেখব ৯৯। (৯ - ৯) = ০। ৯৯–কে ০ দিয়ে ভাগ করলে ফলাফল অনির্ণেয়। ৯৮–এর ক্ষেত্রে অঙ্ক দুটির পার্থক্য ১। এ ক্ষেত্রে ৯৮–কে ১ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকবে না, নিঃশেষে বিভাজ্য। ৯৭–এর ক্ষেত্রে অঙ্ক দুটির পার্থক্য ২। এ ক্ষেত্রে ভাগফল ৪৮ এবং অবশিষ্ট ১। এরপর আর হিসাব করার দরকার নেই, কারণ ১ ক্ষুদ্রতম সংখ্যা। সুতরাং ক্ষুদ্রতম ভাগফল = ১। ৯৯ থেকে হিসাব শুরু না করে ১০ থেকে শুরু করলেও চতুর্থ ধাপে আমরা একই উত্তর পাব।