উদ্যোক্তা হয়ে কীভাবে কঠিন চাপ সামলাবেন?

উদ্যোক্তাদের মানসিক চাপ সামলাতে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। ছবি: সংগৃহীত
উদ্যোক্তাদের মানসিক চাপ সামলাতে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। ছবি: সংগৃহীত

মানসিক চাপ কখনো কখনো ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত মানসিক চাপ আবার ভালো নয়। বিশ্বের সব মানুষই এই চাপকে পুঁজি করে সফল হয়েছেন, আবার অনেকেই চাপে চ্যাপ্টা হয়ে গেছেন। চাপ হলো মানুষের একধরনের শারীরিক বা মানসিক প্রতিক্রিয়া। উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে চাপের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়, জীবন বা ব্যবসা, সব ক্ষেত্রে হয়তো সেভাবে চলে না। কঠিন পরিস্থিতি আসে এবং সে ক্ষেত্রে ধৈর্য নিয়ে উদ্যোগ পরিচালনা করতে হয়। উদ্যোক্তার সাফল্য তাঁর চাপ সামলানোর সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। চাপ সামলানোর উপায়গুলো জেনে নিন:

যত চাপ তত সফল
চাপ কি জীবনকে নেতিবাচক দিকে নিয়ে যায়? উত্তরটা বেশ সহজ। আর তা হচ্ছে, না। বরং, এটি প্রায় উল্টো। যত চাপ নিতে পারবেন, আপনি ততই সফল হতে পারবেন। কোনো কিছু নিয়ে চাপে থাকা ইতিবাচক দিক। চাপ আমাদের সতর্ক করে তোলে। লক্ষ্য অর্জন করতে প্রেরণা দেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে সব সময় আসন্ন বিপদ এড়ানোর বা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করে। ধরুন, যখন আপনি ঢাকায় চলাচলের সময় যানজটের মধ্যে পড়েন, তখন আপনি এটি নিয়ে বেশি চাপ অনুভব করবেন না। কারণ, আপনি জানেন, ঢাকার যানজট আপনি কোনোভাবেই এড়াতে পারবেন না। সুতরাং, আপনি এই সমস্যা এড়াতে হয়তো নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নেন, যা আপনাকে আপনার পরিকল্পনা বা কৌশল সম্পর্কে উদ্ভাবনী করে তোলে। সুতরাং, যেখানে চাপ আছে, উন্নতির জন্য সব সময় সুযোগ আছে। তা আস্তে আস্তে সাফল্যের খুব কাছে নিয়ে যায়।

খারাপ অবস্থার ব্যাকআপ পরিকল্পনা
এমন হতে পারে, যখন আপনি কোনো চাকরি করেন, তখন আপনার মনে একটা ভয় ভয় অনুভব হয়। আপনি যদি চাকরি হারান, তাহলে কী হবে? অথবা আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হন, তবে আপনি কোনো ক্লায়েন্ট হারানোর কথা ভাবেন। এ চিন্তাই হলো চাপের একটি বড় কারণ। চাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে, সবচেয়ে খারাপ কী ঘটতে পারে, তা কল্পনা করে এবং তার ওপর ভিত্তি করে যদি আপনি সত্যিই ব্যাকআপ পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনি চাপ অনুভব করবেন না।

ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার
যখন কেউ চাপ অনুভব করেন, তাঁকে সবাই বলে, ইতিবাচক চিন্তা করুন। বার্তাটি কিন্তু অনেক শক্তিশালী। ইতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনাকে আপনার ব্যবসা, কাজ, ব্যক্তিগত জীবন, এমনকি আপনার গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো পরিবর্তন বা সমাধান করতে সহায়তা করবে। যেকোনো চ্যালেঞ্জকে ইতিবাচক দিক থেকে দেখে তাকে সাফল্যের দিকে পরিচালিত করার মনোভাব তৈরি করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সমস্যা হলে আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে বারবার কল করতে পারেন এবং আপনি এটিতে বিরক্ত হয়ে যান। যদি বিরক্ত না হয়ে তার পরিবর্তে আপনি কী করতে পারেন তা ইতিবাচকভাবে দেখে এবং পরিস্থিতির উন্নতি করতে আপনি কী করতে পারেন তা ভাবতে শুরু করেন, তাহলেই আপনার চাপ আপনার সাফল্য হয়ে যাবে। যেমন আপনি অনলাইন টিকিট সিস্টেম বাস্তবায়ন করে আপনার ক্লায়েন্টদের সমস্যাগুলো সেখানে বর্ণনা করার অনুরোধ করতে পারেন। তারপর আপনি তাঁদের কাছ থেকে নিয়মিত ফোনকলগুলো কমিয়ে আনতে পারেন।

আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে
আপনার সব কঠোর পরিশ্রম সাফল্য পাবে—এমনটা কিন্তু সব সময় হবে না। কিন্তু এর অর্থ কি আপনি ব্যর্থ হয়েছেন? নিঃসন্দেহে, না। যখন আপনি আপনার ওপর আস্থা রাখেন, তখন আপনি যে কাজটি করেছেন, তার সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। এটি আপনাকে আরও উৎসাহী করে তুলবে এবং আপনাকে আগের চেয়ে আরও বেশি কিছু করার জন্য উৎসাহিত করবে। সাফল্য পেতে আপনি সচেষ্ট হবেন।

হাসি দিয়ে সমাধান
চাপ জয় করার অন্যতম উপায় হতে পারে আপনার হাসি। হাসি শুধু আপনাকেই সাহায্য করে না, বরং এটি আপনার পরিবেশকে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করে তোলে। কিছু সময় আসে, যখন আপনি কিছু অনিবার্য পরিস্থিতির মুখে পড়বেন। তাতে আপনার কাজ ও কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হবে। কিন্তু যদি আপনি হাসিখুশি থেকে সেই সমস্যা মোকাবিলা করেন, তবে এটি ইতিবাচক কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

গুরুত্বপূর্ণ কাজকে গুরুত্ব দিন
উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন কাজের একটি তালিকা থাকতে পারে। কিন্তু আপনি অনেক কাজের মধ্যে তাল হারিয়ে ফেললে, তা আপনার জন্য চাপ হয়ে দাঁড়াবে। তখন কোন কাজকে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন এবং কোনটির গুরুত্ব কমিয়ে আনা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করুন। আরেকটি ব্যাপার, যদি আপনি দিনের প্রথম অর্ধেকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করতে পারেন, তবে তার ফলস্বরূপ আপনি দিনের দ্বিতীয় ভাগের কাজের জন্য আরও ভালো শক্তি, উৎসাহ-উদ্দীপনা পাবেন।

‘না’ বলতে শিখুন
জীবন সীমিত সময়ের জন্য। প্রত্যেকের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আপনি সবকিছু করতে পারবেন না। আপনাকে আপনার নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো জানতে হবে। কখনো কখনো আপনি কিছু করতে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হলেন, কিন্তু এর মানে এই না যে আপনাকে সে কাজ করতেই হবে।

শারীরিক ব্যায়াম চাপ কমায়
স্বাস্থ্য আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান সম্পদ। আপনি আপনার জন্য সবকিছুই করছেন, তাহলে আপনি কেন আপনার পরিকল্পনায় কিছু সময় ব্যায়ামের জন্য নির্ধারণ করবেন না? ব্যায়ামকে বিনিয়োগের মতো করে ভাবুন। ব্যায়াম আপনার শরীরের সঙ্গে আপনার মনকে তাজা ও প্রফুল্ল রাখবে। আর একটি সুস্থ শরীর ও প্রফুল্ল মন আপনার উৎপাদনশীলতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক চাপ, মানসিক পীড়ন, যে মনোবিকার বা অস্থিরতার সৃষ্টি করে, তা থেকেই উদ্ভূত হয় আমাদের বড় বড় স্বাস্থ্য-বিপর্যয়। আমাদের মানসিক প্রক্রিয়াগুলো, মন যা কিছু করে, সে সবকিছুরই সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করতে শেখা উচিত। চূড়ান্ত প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়ে আমরা যেন আশা না হারাই।