প্রযুক্তি নিয়ে হুয়াওয়ের ১০ পূর্বাভাস

পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়বে। বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাত আগামী পাঁচ বছরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সে–সংক্রান্ত পূর্বাভাস দিয়েছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। হুয়াওয়ে সম্প্রতি তাদের গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রি ভিশন (জিআইভি) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিশিল্পের উন্নয়ন–সম্পর্কিত ধারা এবং বিষয়বস্তুর ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে।

হুয়াওয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবনযাপন ও কাজ করার প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে ১০টি মূলধারা (মেগাট্রেন্ড) শনাক্ত করা হয়েছে। এই ধারাগুলো শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়েছে হুয়াওয়ের নিজস্ব তথ্য ও উপাত্ত এবং বিশ্বের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির (ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলোজি) বাস্তব চিত্র। এ ছাড়া জিআইভি ২০২৫ সাল পর্যন্ত টেকনোলোজি ট্রেন্ডের ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫জি কভারেজ, এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রয়োগ, গৃহস্থালি রোবটের ব্যবহার এবং স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহারের হার।

জিআইভির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সাল পর্যন্ত ১০টি মূল ধারা হিসেবে থাকবে লিভিং উইথ বটস, সুপার সাইট, জিরো সার্চ, টেইলার্ড স্ট্রিটস, ওয়ার্কিং উইথ বটস, অগমেন্টেড ক্রিয়েটিভিটি, ফ্রিকশনলেস কমিউনিকেশন, সিম্বায়োটিক ইকোনমি, ৫জি দ্রুত বাস্তবায়ন এবং গ্লোবাল ডিজিটাল গভর্নেন্স।

হুয়াওয়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী, পদার্থবিজ্ঞানের অগ্রগতি, এআই এবং নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি রোবোটিকসের ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। ফলে, বাড়িতে এবং ব্যক্তিগত পরিসরে রোবটের ব্যবহার বাড়ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ বৈশ্বিকভাবে হোম রোবটের ব্যবহার হবে ১৪ শতাংশ।

৫জি, ভিআর বা এআর, মেশিন লার্নিং এবং অন্যান্য উদীয়মান প্রযুক্তির একত্রিতকরণ আমাদের নিজস্ব গণ্ডির বাইরে দেখতে সাহায্য করবে। ফলে, মানুষের জন্য তৈরি হবে নতুন সুযোগ, ব্যবসা এবং সংস্কৃতি। এ ছাড়া ভবিষ্যতের অনুসন্ধানগুলো হবে বাটনফ্রি; ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা যাবে অনায়াসেই এবং এর ফলে এই শিল্পটি জিরো সার্চ মেইনটেনেন্সের মাধ্যমে উপকৃত হবে। এরপর থাকছে টেইলর্ড স্ট্রিটস বা ইন্টেলিজেন্ট পরিবহন ব্যবস্থা। এতে যানবাহন এবং অবকাঠামোর সঙ্গে মানুষকে সংযুক্ত করবে। ফলে, থাকবে না যানজট, সম্ভব হবে জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করা এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড, যা জীবনকে সহজতর করে তুলবে।
এখনকার তুলনায় ভবিষ্যতে রোবটের সঙ্গে কাজ করার পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে। জিআইভি পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রতি ১০ হাজার কর্মীর জন্য শিল্পক্ষেত্রে ১০৩টি করে রোবট থাকবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৯৭ শতাংশ বড় বড় সংস্থা এআই মোতায়েন করবে। এআই এবং বিগ ডেটা অ্যানালাইটিকস বিভিন্ন কোম্পানি ও তাদের গ্রাহকদের মধ্যে একটি বিরামবিহীন যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি করবে।

পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানি, একীভূত অ্যাকসেস প্ল্যাটফর্মগুলোতে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং স্মার্ট অ্যাপ্লিকেশন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এর অর্থ হচ্ছে আরও বেশি সহযোগিতা, রিসোর্স-শেয়ারিং, একটি শক্তিশালী গ্লোবাল ইকোসিস্টেম এবং বর্ধিত উৎপাদনশীলতা পাওয়া যাবে। এরপর আসে ৫জি প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ। জিআইভি পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ লোক ৫জি ব্যবহার করবে। বিশ্বব্যাপী বার্ষিক তথ্য আদানের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮০ জেডবি (১ জেডবি সমান ১ ট্রিলিয়ন জিবি)। এর জন্য প্রয়োজন হবে গ্লোবাল ডিজিটাল গভর্নেন্সের।

হুয়াওয়ে আইসিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সিএমও কেভিন ঝাংয়ের মতে, ‘মানুষের আবিষ্কারের নেশা কখনোই থামবে না। তাই উচিত ভবিষ্যতের দিকে তাকানো এবং উদ্ভাবন থেকে বের হয়ে এসে আবিষ্কারের দিকে বেশি জোর দেওয়া। বর্তমানে প্রতিটি শিল্পক্ষেত্র এআই, ৫জি, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং অন্যান্য উদীয়মান প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। এর ফলে আমরা জীবন, কাজ এবং সমাজে দ্রুত পরিবর্তন দেখছি। হুয়াওয়ে এমন একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা প্রতিটি ক্ষেত্রের যোগাযোগব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে।’