মনে করিয়ে দেয়

সকালে অফিসে বসের সঙ্গে মিটিং, এরপর জরুরি কিছু ই–মেইল যোগাযোগ, বিকেলে সেমিনার, সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা। প্রতিদিন এমন ব্যস্ততায় কাটে অনেকের। এত কিছু কি মনে রাখা সম্ভব! এসবের সঙ্গে আছে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডে পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝামেলা। অনেক কিছুই মনে রাখতে হয়। প্রযুক্তি আপনাকে অনেক বিষয় মনে রাখার ঝামেলা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দেবে।

মনে করিয়ে দেবে

প্রতিদিনই আমাদের রুটিনমাফিক চলতে হয়। বিশেষ বিশেষ দিনগুলো আমাদের সতর্কতার সঙ্গে মনে রাখতে হয়। এমন যদি হয় কেউ আপনাকে এসএমএস বা ই–মেইলে বিশেষ দিন বা উপলক্ষ আগেই জানিয়ে দিল! এসব তো আর অন্য কারও ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না। প্রযুক্তি এ ক্ষেত্রে ভালো সহকারী।

গুগল ক্যালেন্ডার আপনার এসব দিনক্ষণ নির্দিষ্ট সময়ের এসএমএস, ই–মেইলে বা পপআপ হিসেবে মনে করিয়ে দেবে, তা–ও আবার বিনা পয়সায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করিয়ে দেওয়ার ভার গুগল ক্যালেন্ডারকে দিয়ে আপনি থাকুন নিশ্চিন্তে।

মোবাইল ফোন আর কম্পিউটারের রিমাইন্ডার সেবা তো বটেই, এসএমএসের মাধ্যমেও গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বা দিবসের রিমাইন্ডার সেবা পেতে পারেন। এমনকি ই–মেইল সাবস্ক্রাইবও করে রাখতে পারেন আপডেট রিমাইন্ডার জানার জন্য। গুগল ক্যালেন্ডারের পাশাপাশি গুগল নাউ সেবাতে নতুন রিমাইন্ডার অপশন যুক্ত আছে। এই অপশনটির কল্যাণে রিমাইন্ডার নিয়মিত আপডেট পাবেন ব্যবহারকারী। একবার সেট করে নিলে এসএমএস রিমাইন্ডার সেবা চলতেই থাকবে। ব্যবহারকারী ইচ্ছা করলেই তার এন্ট্রি করা সব তথ্য সবাইকে জানান দিতে পারেন অথবা পছন্দ অনুযায়ী শেয়ারও করতে পারবেন। এ জন্য গুগল ক্যালেন্ডারে একটি ডিফল্ট শেয়ারিং অপশন রয়েছে। সাধারণত মাসব্যাপী বা সপ্তাহব্যাপী যেসব পাবলিক ইভেন্ট রয়েছে, সেগুলো তৈরি করেই অনেকে শেয়ার করে থাকেন।

আপনার মোবাইল ফোনটিকে নোটবুক ও রিমাইন্ডার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিটি স্মার্টফোনে রিমাইন্ডার ফিচারটি যুক্ত থাকে। এ ছাড়া মাইক্রোসফট মেইল অ্যান্ড ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে একটি সম্মিলিত ক্যালেন্ডার ও শিডিউল তৈরি করা সম্ভব। এর মাধ্যমে কার, কোথায়, কখন কোন কাজ রয়েছে, তা প্রতিষ্ঠানের সবাই জানতে পারে। নোটবুক হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে গুগল প্লে–স্টোর থেকে বিভিন্ন অ্যাপস ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এ ধরনের অ্যাপের মধ্যে কালার নোট অনেক জনপ্রিয়।

আমাদের দৈনন্দিন কাজের সুবিধার্থে বর্তমানে স্মার্টফোনে চালু হয়েছে হাজার রকমের অ্যাপস, যা দিয়ে যেকোনো কিছু করা সম্ভব। প্রতিদিনের প্রয়োজন থেকে শুরু করে আমাদের জীবনে যা যা প্রয়োজন হয়, তার সমাধান মেলে এই স্মার্টফোনেই। স্মার্টফোনের বরাতে ছুটিতে গেছে অ্যালার্ম ঘড়িও। আজকাল ঘুম থেকে ওঠার জন্য অনেকেই আর অ্যালার্ম ঘড়ির চাবি ঘোরান না। রয়েছে রিমাইন্ডার অ্যাপস। এই অ্যাপসের মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন রিডাইন্ডার সুবিধা। এর মধ্যে রয়েছে ‘জিও অ্যালার্ট’ অ্যাপ। যেকোনো সময়ে যেকোনো কিছু মনে করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিশ্চিন্তে দিয়ে দেওয়া যাবে অ্যাপটিকে। অ্যাপ্লিকেশনটি নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছালে মনে করিয়ে দেবে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে কিংবা ফেরার পথে কোনো নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকাকালে আপনাকে মনে করিয়ে দেবে, যা মনে রাখতে চেয়েছিলেন। রিমাইন্ডার সেট করার সময়েই শুধু ইন্টারনেট কানেকশন লাগবে আর জিপিএস থাকতে হবে অন। এতে করে আপনার অবস্থান সম্পর্কে জেনে যাবে এই অ্যাপ্লিকেশন এবং মনে করিয়ে দেবে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য। যদি জিপিএস বন্ধও থাকে তবু আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য মনে করিয়ে দিতে সক্ষম এ অ্যাপ্লিকেশনের জিওফেন্স নামের একটি ফিচার।

মনে রাখে

কেউ কেউ প্রয়োজনে একাধিক ই-মেইল সেবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও একাধিক আইডি ব্যবহার করছেন। এ ধরনের প্রতিটি সেবার নিরাপত্তায় রয়েছে আলাদা পাসওয়ার্ড। অনেকে এত পাসওয়ার্ড মনে রাখতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেন। একাধিক পাসওয়ার্ড মনে রাখার এই ঝামেলা এড়াতে ব্যবহার করা যায় ‘পাসওয়ার্ড ম্যানেজার’।

তবে তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ই–মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টাকা লেনদেনের সেবাগুলোর পাসওয়ার্ড শুধু নিজের মনে রাখার পরামর্শ দেন। এমনকি কাগজে বা ডিজিটাল কোনো মাধ্যমে লিখে রাখাও ঝুঁকিপূর্ণ।

তবু ডায়েরি, কাগজের বর্ষপঞ্জি

যতই আপনি প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করুন না কেন, সনাতন পদ্ধতির বিকল্প কমই আছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই–ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে আপনাকে মনে করিয়ে দিলেও লিখে ডায়েরি বা কাগজের ক্যালেন্ডারে লিখে রাখাও উচিত। দেখা গেল আপনার মোবাইলে চার্জ নেই বা বন্ধ করে রেখেছেন। তাহলে প্রযুক্তি কিন্তু আপনাকে মনে করিয়ে দেবে না। তাই প্রযুক্তিসুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি ডায়েরি বা ক্যালেন্ডারে লিখে রাখা উচিত।