আড্ডায় আড্ডায় প্রোগ্রামিংয়ের আলোচনা

প্রোগ্রামিং নিয়ে আড্ডায় বসেছিলেন এই তরুণেরা। ছবি: মাকসুদা আজীজ
প্রোগ্রামিং নিয়ে আড্ডায় বসেছিলেন এই তরুণেরা। ছবি: মাকসুদা আজীজ

টেবিলের একপাশে নিচু গলায় কথা বলছিল একদল কিশোর, সঙ্গে চাপা হাসি। ‘কোডিং, পাইথন, সি, মডিউলার...’—এই শব্দগুলো কানে এল। আগ্রহ নিয়ে বসলাম তাদের পাশে।

অনেকটা ‘ঘরোয়া আড্ডার’ মতো করেই ২৩ আগস্ট রাজধানীর প্রথম আলোর কার্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছিল ‘প্রোগ্রামিং আড্ডা’। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও প্রথম আলো আয়োজিত আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির বিস্তারিত জানতেই এই আড্ডার আয়োজন করা হয়। আড্ডার সঞ্চালনা করেন দ্বিমিক কম্পিউটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা আইএসসিপিসি-২০১৮-এর বিচারক তাহমিদ রাফি, সঙ্গে ছিলেন প্রোগ্রামিংবিষয়ক বইয়ের লেখক তামান্না নিশাত। আর শুরুতেই যেই কিশোরদের কথা বলছিলাম, তারা হলো রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের আনান আফরিদা, নটর ডেম কলেজের শিহাব সারার আহমেদ, মাশফিকুন নবী, চৌধুরী ইসফাতুল, আরমান ফেরদৌস ও বিসিআইসি কলেজের মো. সামিনুল আমিন। তারা সবাই গতবারের বাংলাদেশ ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড ও আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিজয়ী।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের দুনিয়ায় পথচলা শুরুর গল্প দিয়ে আড্ডার শুরু। সেই দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে আনান আফরিদা জানায়, ‘শুরুতে আসলে অনলাইন ব্লগ আর টিউটোরিয়াল থেকে শুরু হয় আমার। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং কর্মশালায় শিখেছি। প্রত্যেক প্রোগ্রামারের আসলে সমস্যা সমাধানের নিজস্ব স্টাইল থাকে। সেটাও হয়তো আমি নিজে নিজেই একটু একটু করে গড়ে তুলতে পেরেছি।’ কোন প্রোগ্রামিং ভাষা দিয়ে শেখা শুরু করা উচিত, সে প্রশ্নে অবশ্য একেক জন একেক মত দেয়। দলের সবাই সি/সি++ ভাষার প্রোগ্রাম লিখতে অভ্যস্ত হলেও আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিজয়ী মাশফিকুন নবী বেশির ভাগ সময় প্রোগ্রাম লেখে পাইথন ভাষায়। তবে যে ভাষাতেই প্রোগ্রাম লেখা হোক না কেন, প্রতিটি ভাষার বিশাল ডেটা লাইব্রেরি কার্যকরভাবে ব্যবহারের পরামর্শ দেয় সবাই।

আড্ডার মোড় ঘুরতে থাকে এরপর অন্য আলোচনায়। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ভালো করার জন্য দলের বোঝাপড়া নিয়ে আলাপ করে তারা। এ বিষয়ে কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায় জানতে চাইলে এ বছরের আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী আরমান ফেরদৌস বলে, আসলে সমস্যা হাতে পাওয়ার পরপরই চিন্তা করতে হয় নানাভাবে। দলের একজনকে ভাবতে হয় কোডিং নিয়ে, একজনকে ভাবতে হয় গাণিতিক বিশ্লেষণ নিয়ে। আরেকজনকে চিন্তা করতে হয় মূল সমস্যার সাবটাস্কগুলো নিয়ে। তাই দলের মধ্যে বোঝাপড়া ঠিক করে শুরু থেকেই কে কোনটা করবে, এটা নির্ধারণ করে নিতে হয়। দলগত সমন্বয় ঠিক রাখলে অনেকটাই এগিয়ে থাকা যায় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায়। সারা দিন প্রোগ্রামিং নিয়ে বসে না থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে সময় দিলেই প্রোগ্রামিংয়ে ভালো করা সম্ভব বলে জানায় তারা।

আড্ডার শেষ অংশে তাহমিদ রাফি আলোচনা করেন প্রোগ্রামিং ধরে রাখার বিষয় নিয়ে। তিনি বলেন, ‘যদি আনন্দ লাগে, যদি উপভোগ করো, যদি সমস্যা সমাধান তোমাকে তৃপ্তি দেয়, তাহলেই আসলে প্রোগ্রামিং তোমার জন্য। সবার তো প্রোগ্রামিং করার প্রয়োজন নেই। তবে যার ভালো লাগে সে যেন অবশ্যই করে।’ এ বিষয়ে অভিভাবকদেরও শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডে-২০১৮ ও ২০১৯-এর ব্রোঞ্জ পদকজয়ী রেজওয়ান আরেফিন এবং আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী রেদওয়ান মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন।